আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি আতিকুলের

প্রকাশিত: ৩:১২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। রোববার সকালে রাজধানীর লেকশর হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা, সুস্থ, সচল আধুনিক ঢাকা গড়ার’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।

আতিকুল বলেন, ‘উন্নয়ন-অগ্রগতির মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে এসডিজি (জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) পূরণে এক রোল মডেল। উন্নয়নের এ আগ্রযাত্রায় অংশ নিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে ও ঢাকা উত্তরের নাগরিকবৃন্দের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আমি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০২০-এ অংশ নিচ্ছি। আজ সবাই মিলে সবার ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। আমি বিশ্বাস করি, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সততা-নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়তে পারব।’

তিনি বলেন, ‘৪০০ বছরের পুরানো শহর ঢাকা; যার বাঁকে বাঁকে ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংগ্রাম আর বিনির্মাণের গল্প। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ বিকশিত হয়েছে। বিশ্বের জনবহুল শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম। ঘনবসতিপূর্ণ এ শহরের মানুষের যাপিত জীবনে নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও এ শহর আমাদের কাছে বড় আবেগের, বড় ভালোবাসার।’

আতিকুল বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার রাজধানী ঢাকার উন্নয়নে বহু কাজ করেছে। আরও বহু কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। একটি শহরের প্রাণ হচ্ছে শহরের পাড়া ও মহল্লাগুলো। সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়তে গেলে প্রতিটি এলাকা, পাড়া ও মহল্লাকে আলাদাভাবে নজর দিতে হবে। প্রতিটি এলাকাভিত্তিক সমস্যা শনাক্ত করে সেগুলোর স্থায়ী সমাধানের মধ্য দিয়ে এলাকার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করাটা অত্যন্ত জরুরি। এই এলাকাভিত্তিক পরিবর্তনই নগরীর সামগ্রিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। যার ফলে এই নগরীতে বসবাস করা মানুষগুলো সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমার প্রধান লক্ষ্য এই নগরীকে কেবল বসবাস উপযোগী নয় বরং নগরবাসীর জীবনমানেরও উন্নতি সাধন করা। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন উপনির্বাচন ২০১৯-এ প্রদত্ত নির্বাচনী ইশতেহারের অধিকাংশ কাজই শুরু হয়েছে। আমার গত ৯ মাসের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধিকে কাজে লাগিয়ে আগামীর আকাঙ্ক্ষিত ঢাকা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমার ত্রিমুখী ইশতেহার।’

সুস্থ ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে

– উন্নত বিশ্বের মতো IVM (Integrated Vector Management) পদ্ধতিতে ডিএনসিসি, ডিএসসিসি, ওয়াসা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পার্শ্ববর্তী সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সঙ্গে বছরব্যাপী মশা নিধন কার্যক্রম বাস্তবায়ন।

– টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমিনবাজারে আরআরএফ (রিসোর্স রিকভারি ফ্যাসিলিটিস) স্থাপনের মাধ্যমে পরিকল্পিত ভাবে বর্জ্য অপসারণ ও জ্বালানি শক্তিতে রূপান্তর।

– তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রতি বাড়াতে শহরের সকল ওয়ার্ডে নিয়মিত পাড়া উৎসব উদযাপন।

– বস্তিবাসীদের জন্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ।

– প্রতিটি এলাকার জলাশয় দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করে নাগরিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।

– ডিএনসিসি’র বর্ধিত এলাকায় নারীবান্ধব সিআরএইচসিসি (কমপ্রিহেনসিভ রিপ্রোডাক্টটিভ হেলথ কেয়ার সেন্টার) এবং পিএইচসিসি (প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টার) নির্মাণ।

– মিরপুরে ডিএনসিসির নিজস্ব জায়গায় বৃক্ষ ক্লিনিক ও পোষ্য প্রাণী ক্লিনিক নির্মাণ।

– এলাকাভিত্তিক উন্মুক্ত পার্ক ও আধুনিক খেলার মাঠ নির্মাণ।

– নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আধুনিক পশু জবাই কেন্দ্র স্থাপন।

– ডিএনসিসির প্রতিটি স্থাপনায় মার্তৃদুগ্ধ কক্ষ নির্মাণ।

– নারী, পুরুষ, শিশু সকলের জন্য পাবলিক টয়লেট নির্মাণ।

– ঢাকা উত্তরের উন্নয়ন প্রকল্পসহ মিস্ট ব্লোয়ার (Mist blower) এবং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমানো।

সচল ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে

– ফুটপাত দখলমুক্ত করে এলাকাভিত্তিক পথচারীবান্ধব ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের জন্য ফুটপাত নেটওয়ার্ক তৈরি করা।

– যানজট নিরসনে ডিএমপি, ডিটিসিএ, বিআরটিএ, ডিএসসিসি পরিবহন মালিক সমিতিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।

– নিরাপদ পথচারী পারাপারের জন্য ঢাকা উত্তরে বিভিন্ন জেব্রা ক্রসিং-এ Digital Push Button Signal স্থাপন করা।

– আধুনিক নগর পরিবহন ব্যবস্থার জন্য e-ticketing সেবা প্রদান, অ্যাপ-নির্ভর সময়সূচি প্রবর্তন এবং সুনিয়ন্ত্রিত ও নারীবান্ধব গণপরিবহন নিশ্চিত করা।

– স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তন।

– বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের জন্য গণ-স্থাপনা এবং গণপরিবহন নিশ্চিত করা।

– নগরীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে বহুতল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণ।

– হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

– প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের অসমাপ্ত পরিকল্পনা ঢাকা বাহ রুট র‍্যাশনালাইজেশনের কাজ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সবাইকে নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করা।

– নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে প্রয়োজন অনুযায়ী অধিকাংশ স্থানে এস্কেলেটরসহ নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ।

– সাইকেলের জন্য আলাদা লেন (যেখানে সম্ভব) এবং সাইকেল পার্কিং তৈরি করা।

– নাগরিকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য পরিকল্পিত স্মার্ট বাস স্টপ ও বাস, ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ।

– প্রতিটি মহল্লার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন এবং সেন্সরের মাধ্যমে জলাবদ্ধতার স্থান ট্র্যাক করে সমাধান করা।

আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে

– সবার ঢাকা অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ ও সার্বক্ষণিক তদারকিসহ সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। যেখানে মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।

– ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য নাগরিক সেবা দেওয়া হবে।

– ব্যবসায়ীদের অসুবিধা না করে ডিএনসিসির মালিকানাধীন কাঁচা বাজার ও মার্কেটগুলোর আধুনিকায়নের জন্য চলবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন।

– সার্বক্ষণিক ডিজিটাল কমান্ড সেন্টার থাকবে। যার মাধ্যমে শহরের নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্মার্ট নেইবরহুড পরিচালনা করা হবে।

– নগরের সার্বিক উন্নয়নে নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতিসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ।

– সব লেক ও খাল সংস্কার, উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন, মশা নিয়ন্ত্রণ, পাবলিক স্পেস বৃদ্ধি, টেকসই পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।

– বায়ু দূষণ রোধে ইলেক্ট্রিক বাস সার্ভিস চালু।

– ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি কমাতে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে থাকবে হেল্পডেস্ক।

– স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে ডিএনসিসির পাড়া মহল্লায় গড়া হবে স্মার্ট নেইবরহুড।

– তরুণদের জন্য জন্য থাকবে সাংস্কৃতিক ও সেবা কেন্দ্র। তাতে থাকবে হেল্প ডেস্ক, ট্রেনিং সেন্টার, স্টার্ট আপ কো ওয়ার্কিং স্পেস, লাইব্রেরি, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন সুবিধা।

– প্রতিটি এলাকার কমিউনিটি সেন্টারগুলোর আধুনিকায়ন ও বহুমুখী ব্যবহার (আর্ট ক্লাস, গানের ক্লাস, ইয়োগা, আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ) নিশ্চিত করা হবে।

– জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘জনতার মুখোমুখি মেয়র’ শীর্ষক নিয়মিত মতবিনিময়ের মাধ্যমে ওয়ার্ড ভিত্তিক সমস্যার সমাধান।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।