অনলাইন ডেস্ক : মরুর বুকে ফরাসি বিপ্লব, তাতে শেষ ইংল্যান্ডের রাজত্ব। কাতারের আল বায়াত স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।

সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ আফ্রিকার একমাত্র প্রতিনিধি মরক্কো।

ফরাসি লেখক হোসে আলাইন ফ্রাঁলো ইংরেজদের বলেছিলেন, ‘‘আমার প্রিয়তম শত্রু।” ঐতিহাসিকভাবেই ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সের সম্পর্কটা ঘনিষ্ঠ শত্রুর মতই। নেপোলিয়ানের যুদ্ধ, শতবর্ষের যুদ্ধ… কত যুদ্ধই না লড়েছে ইংলিশ চ্যানেলের দুই পাশের এই দুই দেশ। দুই দেশই বিশ্বের নানান জায়গায় গড়েছে উপনিবেশ, দ্বন্দ্ব বেঁধেছে সেখানেও। ব্রিটিশ ভারতে স্থানীয় স্বাধীনতাকামীদের পাশে দাঁড়িয়েছিল ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা সংগ্রামেও ইংরেজদের বিপক্ষে ফরাসিদের অবস্থান।

বিশ্বকাপ ফুটবলে দুই দল যখন মুখোমুখি, তখন অনেকেরই শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থা। ফরাসি অধিনায়ক হুগো লরি আর ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেইন, দুজনেই একসঙ্গে খেলেন টটেনহামে। অথচ এখন একজনের গোলে নেয়া শট অন্যজনকে বাঁচাতে হচ্ছে। রাফায়েল ভারান খেলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে, ইংল্যান্ডের হ্যারি ম্যাগুয়ারকে পাশে নিয়েই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে খেলেন এই ফরাসি। অথচ আজ দুজনের দুটি পথ দুটি দিকে গেছে বেঁকে! অলিভিয়ের জিরদের জীবনের গত ১২ বছরের ১০ বছরই কেটেছে লন্ডনে।

বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে, ঘনিষ্ঠ শত্রুদের এই দ্বৈরথে প্রথম গোলটা অরেলিয়ান চুয়ামেনির। মাসখানেক আগে, জুন মাসেই মোনাকো থেকে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে এই মিডফিল্ডারকে দলে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। বিশ্বকাপে চুয়ামেনি এত ভাল খেলছেন যে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সবশেষ মৌসুমে রিয়ালের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গার একাদশে জায়গা হচ্ছে না। ফ্রান্সকে ম্যাচের ১৭ মিনিটে গোলের দেখা পাইয়ে দিলেন সেই চুয়ামেনিই। বুকাইও সাকার কাছ থেকে চ্যালেঞ্জে বল কেড়ে নিয়ে দিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পেকে, এমবাপ্পে আবার দিলেন উসমান দেম্বেলেকে, তার কাছ থেকে আন্তোয়ান গ্রিয়েজমান হয়ে ফের চুয়ামেনির পায়ে বল। ২৫ গজ দূর থেকে চুয়ামেনির শটটা জর্ডান পিকফোর্ড সমস্ত শরীর ডানদিকে ভাসিয়েও ঠেকাতে পারেননি।

এরপর প্রথমার্ধে ভাল সুযোগ পেয়েছিলেন হ্যারি কেইন, এমবাপ্পেরও শট জমা পড়ে পিকফোর্ডের হাতে। দুই দলই আক্রমণ পালটা আক্রমণ জারি রাখে, কিন্তু গোল আর হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরুর সাত মিনিটের মাথায় বক্সের ঠিক মাথায় সাকাকে ফাউল করলেন সেই চুয়ামেনি, বুটের ডগা দিয়ে ল্যাং মেরেই ফেলেছেন। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির সংকেত রেফারির। ১২ গজ দূরে মুখোমুখি দুই বন্ধু, কেইন আর লরি। টটেনহামে দুজনের গলায় গলায় ভাব। কাল বন্ধুর বিপক্ষে শটটা নিতে গিয়ে একবার থামলেন কেইন, বলটা আবার বসিয়ে মোজাটা টেনে ঠিক করে আবার দৌড়ে এসে শট নিলেন। বুলেট গতির সেই শটে থামানোর সাধ্য পৃথিবীর কোন গোলরক্ষকেরই নেই।

গোল হজমের পরই যেন ফের তেতে উঠল ফ্রান্স। বাম প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে যে দৌড়টা দিলেন, সেটা আল খোর স্টেডিয়াম না হয়ে টোকিও অলিম্পিকে দিলে নির্ঘাৎ ১০০ মিটারে পদক পেতেন। যে ক্রসটা করলেন, দেম্বেলে তাতে পা ছোঁয়াতে পারলে গোল হয়, কিন্তু দেম্বেলে যে গতিতে এমবাপ্পের সমকক্ষ নন। দৌড়ে বক্সে এসে ঢোকার আগেই বল চলে গেছে বাইরে। পরের মিনিটে আদ্রিয়ান রাবিওর জোরাল ভলিও আটকে দিয়েছেন পিকফোর্ড। সুযোগ পেয়েছে ইংল্যান্ডও। ফ্রি-কিকে হ্যারি ম্যাগুয়ারের হেডটা লরির আওতার বাইরেই ছিল, গোলপোস্টে চুমু খেয়ে চলে গেছে গোললাইনের বাইরে।

৭৬ মিনিটে ম্যাচের সবচেয়ে সেরা সেভটা করেছেন পিকফোর্ড। এমবাপ্পের ক্রস, দেম্বেলে হেডে সেটা মাটিতে নামালেন, একদম পিকফোর্ডের মুখের সামনে থেকে জিরুদের জোরাল ভলি ইংল্যান্ড গোলরক্ষক কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করলেন। সেই কর্নারই অবশ্য কাল হল। কর্নারের ক্লিয়ারেন্সে বল বক্সের বাইরে চুয়ামেনির পায়ে, দিলেন বামে থাকা গ্রিয়েজমানকে। গ্রিয়েজমানের মাপা ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন জিরদ। নির্ধারিত সময় শেষের ১২ মিনিট আগে ফের এগিয়ে যায় ‘লে ব্লু’রা।

সেই অগ্রগামিতাও থাকত না, যদি না কেইন ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মত পেনাল্টি নিতে যেতেন এবং মিস করতেন। ৭৯ মিনিটে মাঠে নামা মেসন মাউন্ট বক্সের ভেতর লংবলের আশায় ছুটছিলেন, এমন সময় পেছন থেকে অনেকটা দৌড়ে এসে তাকে ধাক্কা মারেন থিও হার্নান্দেজ। শুরুতে রেফারি এড়িয়ে গেলেও ভিএআরে দেখে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত জানান। আবারও কেইন-লরি মুখোমুখি। তবে এবারে কেইন পোস্টের উপর দিয়ে উড়িয়ে বল নিয়ে ফেললেন গ্যালারিতে। তাতে চুপসে যাওয়া ফুসফুসে হাওয়া ফিরে এল ফরাসিদের।

বাকি সময়টায় আর কোন বিপদ নয় ফরাসিদের। একদম শেষ মুহূর্তে, বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি-কিক পেয়েছিল ইংল্যান্ড। মার্কাস রাশফোর্ডের নেয়া শটটা অল্পের জন্য ক্রসবারের উপর দিয়ে গিয়ে লাগে জালে। এরপর বল মাঠে ফিরতেই রেফারির লম্বা বাঁশি। সূত্র: ডয়েচে ভেলে।

Related posts:

ইংল্যান্ডের তিন ফরম্যাটের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ৫ ক্রিকেটার আগামী বছর বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারছে না বাংলাদেশ অপরাজিত থেকেই গ্রুপপর্ব শেষ করলো ম্যানসিটি ডিসেম্বরে শুরু হচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী বিশ্বকাপ শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশকে ইংল্যান্ডের মতো সুবিধা দেবে যুব ক্রিকেট দলকে গণসংবর্ধনা দেবে সরকার ফরাসি ওপেনে ম্যাচ ফিক্সিং, টেনিস দুনিয়ায় তোলপাড় এখনও যেভাবে প্লে-অফে যেতে পারে ধোনির চেন্নাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে করোনা শনাক্ত ​ওয়ানডে দলে চমক : খেলা শুরু ২০ জানুয়ারি পূরণ হতে যাচ্ছে বার্সেলোনার চাওয়া অপরাজিতই থেকে গেলেন মুশফিক, ৩৬৫ রানে অলআউট বাংলাদেশ