এক বিঘা জমির পাট জাগ দিতে পুকুর মালিক পাচ্ছেন ১৫০০ টাকা

প্রকাশিত: ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৩০, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : রাজশাহীর বাঘায় এক বিঘা জমির পাট জাগ দিলে পুকুর মালিককে দিতে হচ্ছে দেড় হাজার টাকা। এলাকায় বৃষ্টি নেই। পুকুর মালিক শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি জমাচ্ছেন। সেই পুকুরে এলাকার চাষিরা পাট জাগ দিচ্ছেন।

এভাবে পাট চাষিদের সহযোগিতা করছেন আড়ানী পৌরসভার জোতরঘু গ্রামের মন্টু হোসেন হোসেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চার হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে পদ্মার চরে দুই হাজার হেক্টর এবং চকরাজাপুর চরে এক হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এক বিঘা জমিতে ১০-১২ মণ পাট উৎপাদন হয়। এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে ৮-১০ হাজার টাকা খরচ হয়। দাম ভালো পাওয়ার আশায় এবার চাষিরা বেশি করে পাট চাষ করেছেন।

কিন্তু খরার কারণে পাট যেমন পুড়ে নষ্ট হচ্ছে, তেমনই পাট জাগ দেওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ভাড়া করে পাট জাগ দিতে গেলে চাষিদের লাভ থাকবে না। এ জন্য এবার পাট চাষিরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

শুরুর দিকে পাট চাষে মোটামুটি অনুকূল আবহাওয়া ছিল। শেষের দিকে বৃষ্টি পানি না হওয়ায় চাষিরা পাট কাটতে পারছেন না। রোদে পুড়ে নষ্ট হচ্চে শত শত বিঘার পাট। ফলে চাষিরা পড়েছেন মহাবেকায়দায়। এর মধ্যে আগাম ধান রোপণের জন্য পুকুর ভাড়া নিয়ে বর্তমানে পাট কাটা, জাগ দেয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং শুকানোর কাজ করছেন চাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ইতিমধ্যে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে।

হামিদকুড়া গ্রামের পাট চাষি রুবেন হোসেন বলেন, আমার এক বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। বৃষ্টি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছিলাম না। পাট কাটার পর জানতে পারলাম মন্টু হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিজের শ্যালো মেশিনে পানি দিয়ে পাট জাগ দেয়ার জন্য পুকুর প্রস্তুত করছেন। এক বিঘা জমির পাট জাগ দিতে তাকে এক হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছি। আমার মতো অনেকেই এই পুকুরে পাট জাগ দিচ্ছেন।

জোতরঘু গ্রামের পুকুর মালিক মৃত সিরাজ হোসেনের ছেলে মন্টু হোসেন বলেন, এলাকায় অনেক দিন ধরে বৃষ্টি নেই। আগের একটু পানি ছিল, এতে এসে পাট জাগ দিতে চাচ্ছিলেন চাষিরা। আমি চিন্তা করে দেখলাম, আমার শ্যালো মেশিন আছে, এই মেশিন দিয়ে পুকুরে পানি দিয়ে প্রস্তুত করি। তারপর চাষিদের একটি শর্তে পাট জাগ দিতে অনুমতি দিয়েছি।

শুক্রবার উপজেলার দিঘা গ্রামের মকুল হোসেন বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে লাঙ্গল, বীজ সেচ, কাটা, পরিস্কার করা, সারসহ যাবতীয় খরচ হয় ৮-১০ হাজার টাকা। এবার উৎপাদন হয়েছে ১০ থেকে ১২ মণ। বর্তমানে বাজারে নতুন পাট প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার টাকা।

পদ্মার মধ্যে পাট চাষি কালিদাসখালী চরের আশরাফুল ইসলাম তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। অনাবৃষ্টি আর প্রচন্ড খরতাপের কারণে পাট গাছ খর্বাকৃতির হয়ে আছে। জমির বেশির ভাগ পাট গাছ পুড়ে মরে যাচ্ছে। জমি বর্গা নিয়ে পাট চাষ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। তার মতো শত শত চাষি এবার পাট চাষ করেছেন। কিন্তু খরায় সর্বনাশ হয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, পাট চাষিরা পুকুর ভাড়া নিয়ে আবার কেউ কেউ বিঘা প্রতি পুকুরে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে চাষিদের খরচ কিছুটা বেশি হচ্ছে। কোন উপায় নেই। আবাদ করলে একটু খরচ, কষ্ট করতে হয়। বৃষ্টি না থাকায় মাঠে রোপণ করা পাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন পাটের জন্য বৃষ্টি দরকার। যাদের জমিতে পাট ভালো আছে, তারাও জাগ দেওয়ার পানি নিয়ে সংকটে পড়েছেন। সেচের পানিতে পাট জাগ দিতে চাষিদের অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ইতিমধ্যে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন হাট-বাজারে মানভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।