মাকে স্মরণীয় রাখতে ক্ষেতে সবুজ ধানে মা বর্ণ

প্রকাশিত: ৮:১৮ অপরাহ্ণ, মে ৮, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্নেহ, মমতা, আদর, ভালবাসার ভান্ডার হলো মা। যা কখনোই শেষ হওয়ার মতো না।মা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন । মা এর চেয়ে আপনজন এই পৃথিবীতে আর কেউ হতে পারে না ।

বিভিন্ন সময় ধরে বিভিন্ন মানুষ নানা ভাবে মায়ের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।

এবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার টেংরা গ্রামের কৃষক এনামুল হক বিস্তীর্ণ সবুজের মাঠে সবুজ ও বেগুনীর মিশেলে ধানখেতে ফুঁটিয়ে তুলেছেন মায়ের প্রতি ভালবাসার এক অনন্য নিদর্শন।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তার পল্লিবিদ্যুত মোড়ে থেকে গফরগাঁও আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে কিছু পথ এগুলেই সড়কের ধারে হঠাৎ চোখ আটকে যায় চলাচলকারী যাত্রীদের। বিস্তীর্ণ সবুজের মাঠে বেগুনী রংয়ের ধানের চারার মাঝে সবুজ ধানে এঁকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পৃথিবীর সবচাইতে মধুরতম শব্দ “মা”। যা দেখে অনেকে থমকে যায়, আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন মায়ের প্রতি সন্তানের ভালবাসার এক অনন্য ভালবাসার সৌন্দর্য। ছবি উঠিয়ে নিয়ে যান, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ।

কৃষক এনামুল হক শ্রীপুর বাজারের পান সুপারির বিক্রেতা। তার বাবা আব্দুল আউয়াল মারা গেছেন বহু বছর পূর্বে। মা জহুরা খাতুন অনেক কষ্ট সংগ্রাম করে তাকে ও তার এক বোনকে মানুষ করেছেন। তিনি ক্ষুদ্র এ ব্যবসার পাশাপাশি অন্যের জমি লিজ নিয়ে কৃষিকাজ করেন। এবার মাওনা-বরমী আঞ্চলিক সড়কের পাশে প্রায় তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। এই ধানখেতেই বেগুনী ও সবুজ ধানের চারায় ফুটিয়ে তুলেছেন “মা”।

তিনি বলেন, বেগুনী রঙের ধানগাছ দিয়ে অনেকেই অনেক কিছু তুলে ধরেছেন। তিনি তুলে ধরেছেন মায়ের নাম লিখে। “মা” তার কাছে সবচেয়ে বড় সম্পদ। তিনি দেখেছেন, কেউ মায়ের দোয়া দোকানের নাম দেন, কেউ আবার পরিবহনে লিখেন। তিনি যেহেতু কৃষক তাই ধানের জমিতেই ফুঁটিয়ে তুলেছেন মাকে। নিজের মন থেকে অনুপ্রেরণা ও মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় তিনি তার ধানের খেতে মা লিখেছেন।

মায়ের প্রতি কৃষক এনামুলের এমন ভালবাসা দেখতে দুরদুরান্ত থেকে প্রতিদিনই আসছেন সাধারণ মানুষ। এদের একজন কৃষক আয়নল হক। তিনি বলেন, মা যে কত বড় সম্পদ যার মা নেই সেই একমাত্র বুঝে। ছোট্ট বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর মা আমাকে বহুকস্ট করে বড় করেছেন। আমার মা মারা গেছেন দশ বছর আগে। এরপর থেকেই মাকে ছাড়া কাটিয়েছি বহুবছর। মা ছাড়া যে বুকের ভেতর যে শূণ্যতা তা কাউকে বুঝাবার মত না। আমি দিনের কৃষি কাজ শেষে টেংরা বাজারে বসে আড্ডা দেই। এনামুলের এমন কাজে আমার হৃদয় ছুয়ে যায়। তাই বাজারে আসলেই একবার হলেও দেখতে আসি মায়ের প্রতি এমন ভালবাসা।

সাজ্জাদ হোসেন শান্ত নামের অপর যুবক জানান, ফেসবুকে মায়ের প্রতি কৃষক এনামুলের এমন ভালবাসা দেখতে পরিবার নিয়ে এসেছেন। মা শব্দের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি নিয়েছেন। একটা ভিন্ন আবেগের তৈরি হয় এনামুলের এ ধান খেতে এলে।

সন্তানের এমন ভালবাসায় মুগ্ধ মা জহুরা খাতুন। তিনি বলেন, ছেলের এমন কান্ডে তিনি নিজেও অভিভূত। তার ছেলে তাকে খুব ভালবাসে। সবসময় খবর নেয়। দেশে অনেকেই এখন ব্যতিক্রম। বৃদ্ধ বয়েসে মা ও বাবা বোঝা হয়ে যায়। তাদের খবর পর্যন্ত নেয় না। তার ছেলের মতো প্রত্যেকটা সন্তানের এমন মায়ের প্রতি আনুগত্য থাকার প্রয়োজন।