লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম দূর করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রকাশিত: ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠায় ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে ঘুষ, দুর্নীতি এবং চালকের মাদকাসক্তি প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

একইসঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটলেই আইন হাতে তুলে নেওয়ার মানসকিতা পরিহার এবং সকলের ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বানও পুণর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের সময় ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যেন, ভালমতো সে ড্রাইভিংটা জানে কি না বা টাকা দিয়ে যেন কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দেয়া নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের আরেকটা বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে, যারা গাড়ি চালাচ্ছে তারা মাদক সেবন করছে কি না। ডোপ টেস্ট বা মাদক সেবনের বিষয়ে পরীক্ষা করা দরকার। প্রতিটি ড্রাইভারের এই পরীক্ষাটা একান্ত ভাবে অপরিহার্য্য।’

তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলেই চালককে সব দোষ দিয়ে তাকে প্রহার করা বা প্রহার করতে করতে মেরে ফেলার মতো আইন হাতে তুলে দেওয়ার যে সংস্কৃতি দেশে রয়েছে তা সবাইকে ত্যাগ করতে হবে।’

শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বলেন, ‘দেশে ট্রাফিক আইন মেনে চলার বিষয়ে নাগরিক সচেতনতাটা আমাদের খুব বেশি প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পথচারীদের মধ্যে নাগরিক সচেতনতার খুব অভাব রয়েছে। আমরা মুখে খুব বলে টলে যাই কিন্তু কাজের বেলায় দেখি পাশেই ফুটওভার ব্রীজ অথচ রাস্তার মধ্যখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। একটা গাড়ি আসছে অথচ হাত দেখিয়েই অমনি হাঁটা দিল কিংবা বাবা দেখা যাচ্ছে, শিশু কোলে নিয়ে ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার না করে রাস্তার বেড়া দেওয়া ডিভাইডার অবৈধ ভাবে অতিক্রম করছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গাড়িটা একটা যন্ত্র কাজেই ব্রেক কসলেও থামতে একটু সময় লেগে যায়। হাত দেখালেই থেমে যেতে পারে না।’

এই বিষয়েও মানুষ, চালকসহ সকলকে সচেতন করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ প্রদান করেন তিনি।

তিনি উদাহরণ দেন- ব্যক্তির নিজের ভুলে সে দুর্ঘটনা শিকার হলেও অনেক সময় অহেতুক চালককে, সরকারকে বা সড়ককে দোষ দেওয়া হয়। তা নিয়ে আন্দোলন হয় এবং সরকারের পদত্যাগও দাবি করা হয়, যদিও প্রকৃত দোষটা কার সেটা বিবেচনা করা হয় না।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যত্র তত্র যেখানে সেখানে রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে হবে এবং ট্রাফিক রুলস সবাইকে মেনে চলতে হবে। ট্রাফিক আইন মেনে চলা এটা সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ছোট শিশুদের থেকে শুরু করে স্কুল পর্যায়ের প্রত্যেক জায়গাতেই এই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া দরকার।’

তিনি স্কুল পর্যায়ে ও অফিস আদালতে সকলের জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পোষ্টারিং করে জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যপারে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি।’

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মো. একাব্বর হোসেন এবং বেনজীর আহমেদ, এমপি, সংযুক্ত ছিলেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর বনানীস্থ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ভবন মিলনায়তনে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এছাড়া, রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বড় পর্দার মাধ্যমে গাড়ি মালিক এবং চালকবৃন্দ এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটি প্রত্যক্ষ করেন।

টানা চতুর্থবারের মত এ বছর দেশে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপিত হচ্ছে।

এবারের জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের প্রতি পাদ্য হচ্ছে- ‘মুজিববর্ষের শপথ, সড়ক করবো নিরাপদ।’ বাসস।