ক্ষমতার দাপটে প্রতারক ইসমাইল ভেঙ্গে দিয়েছে হতদরিদ্র খালেকের বাড়ি

প্রকাশিত: ২:৫৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২০

ফয়সাল আজম অপু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে : চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের টাকাহারা গ্রামে ক্ষমতার দাপটে মৃত লায়েসের ছেলে হতদরিদ্র আব্দুল খালেকের নির্মাণাধীন বাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছে প্রতারক, সুদ ব্যবসায়ী ও জমি জালিয়াতি চক্রের হোতা ইসমাইল হোসেন (৪৫)। ইসমাইল হোসেন (৪৫) একই এলাকার আব্দুল হকের ছেলে।

সরজমিনে ২৪-০৮-২০২০ তারিখ গিয়ে দেখা যায়, ঢালাই পিলার, টিন সহ বাড়ি তৈরির নির্মাণ সরঞ্জামাদী ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে থাকতে। ভুক্তভোগী আব্দুল খালেক ও তার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলেন আমার ভিটেমাটি না থাকায়, ৩০ বছর আগে ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও নাচোল উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মৃত এসরাইল হক এই খাস জমিতে আমাকে বাড়ি করার অনুমতি দেয়। তখন থেকেই আমরা এই বাড়িতেই বসবাস করে আসছিলাম।

আমরা স্বামী-স্ত্রী বাইরে ছোট খাটো চাকুরী করে খেয়ে না খেয়ে অতি কষ্টে টাকা জমিয়ে, মাটির তৈরী বাড়ি বর্ষার কারনে ভেঙ্গে পড়লে, টিন দিয়ে বাড়ি পূর্ন নির্মাণ করতে চাইলে ইসমাইল হোসেন বিভিন্ন ভাবে হয়রানি ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এরই ধারাবাহিকতায়, ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে গত ২৩-০৮-২০২০ তারিখ রাত্রি ১১ টার দিকে তার ছেলে সানাউল্লাহ (২২) দুই ভাই জিবরাইল (৩২) ও মেকাইল (৩০) এবং রহমান (২৫) সহ ১৫/২০ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র লাঠি লাদনা, লোহার রড নিয়ে নির্মাণাধীন বাড়ি ভাংচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকেও কিল ঘুসি ও লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে। আমার চিৎকারে এলাকাবাসী এলে সন্ত্রাসী কায়দায় উল্লাস করতে করতে পালিয়ে যায় ইসমাইল হোসেন।

বাধ্য হয়ে আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নাচোল থানায় স্বরনাপন্ন হয়ে অভিযোগ দায়ের করি। বর্তমান ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মজিবুর রহমান ও নাচোল থানা কর্মকর্তার অনুমতিক্রমে আবার বাড়ির কাজ শুরু করলে আবারো হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলেও জানান আব্দুল খালেক। ইসমাইল হোসেনের বাড়ি থেকে আমার বাড়ি প্রায় ১০০ গজ দুরে। আমার বাড়ির সাথে তার বাড়ির কোন সম্পৃক্ততা নেই, তার বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা ফাঁকা রয়েছে। এটি আমার সাথে হিংস্রাত্মক মনোভাব নিয়ে শুধু শত্রুতা করছে মাত্র।

তিনি আরও বলেন, একজন সাংবাদিককে প্রভাবিত করে তাকে ভুলভাল বুঝিয়ে সাথে নিয়ে, ইসমাইল হোসেন বিভিন্ন দফতরে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে আমাকে উচ্ছেদের জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে। শুধু তাইনা মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন পুলিশের মান ক্ষুন্ন করে নিউজ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান অসহায় আব্দুল খালেক। অনুসন্ধানে জানা যায় ইসমাইল হোসেন নিজেই একজন ভূমিদস্যু, তিনিই টাকাহারা বাজারে সরকারি খাস জমি দখল করে বিশাল বাড়ি করে রেখেছে। স্থানীয় ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মজিবুর রহমান সহ এলাকার অনেকেই এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন ইসমাইল হোসেন নিজেই একজন ভূমিদস্যু। শুধু তাই নয়, এলাকার একজন টাউট প্রতারক সে।

ইসমাইল হোসেন দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলো। বিদেশে থাকাকালীন সময়েই বিদেশ থেকে স্ত্রীর নামে টাকা পাঠাত আর সেই টাকা তার বউ সুদের উপর মানুষকে দিত। একসময় ইসমাইল হোসেন দেশে ফিরে আসে, দেশে আসার পর থেকেই সুদের ব্যবসার রমরমা কারবার শুরু করে। সুদের কারবার করেই তার আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। সুদের টাকাতেই খালেকের বাড়ির পাশে আলিশান বাড়ি ও জায়গা জমি কিনেছে। কৌশলে হতদরিদ্র মানুষের দূর্বলতার সুযোগে সুদে টাকা ধার দিয়ে জমি লিখে নেয়ার নজির সৃষ্টিও করেছেন এই প্রতারক, সুদখোর ইসমাইল হোসেন। তার এহেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড যা এলাকায় প্রতিটি লোকমূখে শোনা যায়। তার কাছে সুদের উপর টাকা নিয়েই অনেকেই ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বসান্ত হয়েছে। ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে একখানা নির্ভেজাল জমি দেখিয়ে বিক্রয়ের কথা বলে আব্দুল খালেকের সরলতার সুযোগে ১ লক্ষ টাকা সুকৌশলে হাতিয়ে নেই সু-চতুর ইসমাইল হোসেন।

এরপর জমির রেজিষ্ট্রি ও দখল বুঝিয়ে চাইলে নানা টালবাহানা শুরু করে। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও প্রতারক ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে বিচার পাইনি আব্দুল খালেক। কেউ জমি কিংবা টাকা বুঝিয়ে দিতে বললে ইসমাইল হোসেন বলেন এই ফাঁকা জমি দেওয়া যাবে না অপজিটে ইউনিয়ন পরিষদের প্রাচীরের পাশের জমির অংশ নিতে হবে।

উত্তরে আব্দুল খালেক বলে, এই জমি দেখিয়ে তো আমার কাছ থেকে টাকা নেন নি তাহলে এই জমি কেনো নিব? এরপর খালেক ভেজাল যুক্ত জমি না নিয়ে স্বচ্ছ জমির বুঝ চাইলে ইসমাইল কায়দা করে এড়িয়ে যাই এবং গরিব মানুষটিকে নানান ভাবে ভয়-ভীতি মুলক আচরণসহ ব্যাপক হয়রানির সাথে মানসিক চাপে ফেলে রাখে। সম্প্রতি বাড়ি ভেংগে-গুড়িয়ে দেয়া এটিও তার একটি পরিকল্পনা মাফিক নির্যাতন।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে ইসমাইলের নিকট জানতে চাইলে দম্ভের সাথে তিনি বলেন, আপনার মতো অনেক সাংবাদিক আমার হাতে। আমার বিরুদ্ধে লিখে কিছু করতে পারবেননা। বরং আমার সাংবাদিক দিয়ে আমিও লেখাতে জানি। খালেকের নির্মাণাধীন বাড়ি ভেঙ্গেছেন কেনো? এবং টাকাহারা বাজারে খাস জমিতে আপনারওতো একটি বাড়ি আছে! এমন প্রশ্নের জবাবে কোন সদূত্তর না দিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং অকপটে বাড়ি ভাঙ্গার কথা স্বীকার করে অশালীন ভাষায় কথা বলেন। দেখা করতে চাইলে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

এ বিষয়ে নাচোল থানায় খালেকের অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গোলাম রসুল সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ওসি মহোদয় বিষয়টি অবগত। তিনি আমলে নিয়ে আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। আব্দুল খালেক সত্যি একজন খুব হতদরিদ্র, সহজ সরল, গৃহহীন ব্যক্তি, তাই তার দিকে দেখে চেয়ারম্যান সাহেব জায়গা দিয়েছিলেন। মাটির বাড়ি ভেংগে পড়ায় পূর্ননির্মাণ করতে গেলে ইসমাইল হোসেন তার ছেলে ও ভাইদের নিয়ে তান্ডব চালিয়ে বাড়ি তৈরির সরঞ্জামাদী ভেংগে ফেলে এবং আব্দুল খালেককে মারধোর করে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমি তদন্তে আছি। তিনি আরও বলেন ইসমাইল একজন ধুরন্দর ব্যক্তি। সে একজন অসহায় গরিবের বাড়ি ভেংগে দিয়েছে আর সেটি তদন্তে গেছি বলে সাংবাদিক দিয়ে আমার বিরুদ্ধে উল্টো-পাল্টা নিউজ করিয়েছে। যা সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট ভিত্তিহীন এবং আমার জন্য মানহানিকর। সময় হলেই এর সঠিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।