‘১৫ অগাস্টের ঘাতকদের প্রশ্রয় দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান’

প্রকাশিত: ২:৪০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩০, ২০২০
সবার সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন গরীবের পাশে দাঁড়ান: প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যাকারী ঘাতকরা এতো সাহস পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমানের প্রশ্রয়ে।’
রোববার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারবালার হত্যাকাণ্ডেও নারী শিশুদের হত্যা করা হয়নি। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট নারী-শিশুরাও রক্ষা পায়নি।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে একটি সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র তার সম্ভাবনা হারিয়েছিল। দেশ যখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেছিল, তখনই ১৫ অগাস্টের ঘটনা ঘটানো হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিবিসিতে প্রদত্ত কর্নেল রশিদ এবং ফারুকের ইন্টারভিউ এবং বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকায় খবর বেরিয়েছিল যে, এই খুনিরা স্বীকার করেছিলেন তাদের সঙ্গে জিয়াউর রহমান আছেন। জিয়াউর রহমানের কাছ থেকেই তারা সব ধরনের সহযোগিতায় পেয়েছিলেন। আর সেই সঙ্গে বেইমানি মুনাফিকি করেছিলেন খন্দকার মোস্তাক।’

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে খন্দকার মোশতাক যে সম্পূর্ণ জড়িত…১৫ অগাস্টের পর মোশতাক নিজেই নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন এবং তার সবচাইতে বিশ্বস্ত ছিলেন জিয়াউর রহমান। সে সময় সেনাপ্রধানকে সরিয়ে দিয়ে মোশতাক জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান বানান এবং বঙ্গভবনে যত দিন ছিলেন জিয়া রহমান সেখানে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতেন। এই খুনিদের সঙ্গে উঠাবসা, বৈঠক, আলাপ-আলোচনা হতো। বিভিন্ন বক্তব্য এবং পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলার পর এটা আজ সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই হত্যার মধ্য দিয়ে কী পেয়েছে? আজকে যদি আমরা ১৫ অগাস্টের দিকে তাকাই…আজকে আপনারা জানেন, আজ আশুরার দিন। সে দিন হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাতি ইমাম হোসেনকে কারবালার ময়দানে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। কারণ তারা ন্যায়ের পথে ছিল। কিন্তু কারবালায় নারী-শিশুদের হত্যা করা হয় নাই। কিন্তু ১৫ অগাস্ট ধানমন্ডি বা মিন্টু রোডের বাড়িতে নারী-শিশুরা রক্ষা পায়নি। ১৫ অগাস্টের ঘটনার সঙ্গে যেন এই হত্যাকাণ্ডের এক অদ্ভূত মিল রয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন, মানুষকে উন্নত জীবন দিতে চেয়েছিলেন- এটাই কি তার অপরাধ ছিল?’ ‘পাকিস্তান নামের যে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছিল, সে রাষ্ট্রটি নির্মাণের প্রতিও তার অবদান ছিল। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছিলেন। সে সময় তাদের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই দেখা গেছে, বাঙালি শোষিত-নির্যাতিত-বঞ্চিত। বাংলাদেশের উপার্জিত অর্থ দিয়েই পশ্চিম পাকিস্তানের মরুভূমিতে ফুল ফোটানো হচ্ছে। আর আমাদের দেশের মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্র-বঞ্চিত-শোষিত থেকে যাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেয়ার জন্যই বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছিলেন। যে সংগ্রাম ১৯৪৮ সালে শুরু হয়। সে সময় আমাদের মাতৃভাষায় কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। সে সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র হিসেবে তখনকার তরুণ ছাত্র শেখ মুজিব মাতৃভাষার জন্য সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন। সেই সংগ্রাম শুরু করতে গিয়ে ১১ মার্চ ধর্মঘটের ডাক দিলেন। সেখানেও তাকে কারাবরণ করতে হয়। এইভাবে আন্দোলন যখন শুরু…সেই ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে নিয়ে ধাপে ধাপে একটি জাতিকে তিনি প্রস্তুত করলেন স্বাধীনতার চেতনায়।’

তিনি বলেন, ‘বার বার আঘাত এসেছে। সে সময় যারা পাকিস্তানি শাসকদের তোষামোদি করতে পেরেছেন, চাটুকারিতা করতে পেরেছেন তাদেরকে তারা এ পূর্ববঙ্গে রেখেছেন। যখনই গণমানুষের নেতা নির্বাচিত হয়েছে, সেই নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় শাসন এখানে চালনা করা হয়েছে। ১৯৫৪ সালে একই ঘটনা ঘটেছে। ’৫৪ সালে তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল কিন্তু মার্শাল ল দিয়ে সকল ক্ষমতা কেড়ে হয়েছিল। সে দিনও সেনাপ্রধান আইয়ুব খান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় গদি দখল করেছিল এবং এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় প্রতিবাদ করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবার আমরা এক সংকটময় সময়ে আশুরা পালন করছি। করোনা ভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। আমাদের সরকার এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা জনগণকে সব সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। আল্লাহ বিপদে মানুষের ধৈর্য পরীক্ষা করেন। এ সময় সবাইকে ধৈর্য নিয়ে সহনশীল ও সহানুভূতিশীল মনে একে অপরকে সাহায্য করে যেতে হবে। ‘