ঈদ যাত্রার ২০১ সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪২ নিহত দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম প্রকাশিত: ৭:৫২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৯, ২০২০ অনলাইন ডেস্ক : বিদায়ী পবিত্র ঈদুল আজহায় সীমিত আকারে যাতায়াত হলেও সড়ক দুর্ঘটনা কমেনি। এবারের ঈদে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ২০১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪২ জন নিহত ৩৩১ জন আহত হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ২৩৮টি দুর্ঘটনায় ৩১৭ জন নিহত ও ৩৭০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। রোববার (৯ আগস্ট) দুপুরে নগরীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২০ প্রকাশকালে এই তথ্য তুলে ধরেন। সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের মতো এবারো এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে। এতে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে। বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে এবছর গণপরিহন সীমিত আকারে চালু থাকায় ঈদযাত্রা ব্যক্তিগত পরিবহন ও ছোট যানবাহনে যাতায়াত বেড়েছে। এ কারণেই ব্যক্তিগত পরিবহনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েছে। বিগত ২৬ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১৩ দিনে ২০১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪২ জন নিহত ৩৩১ জন আহত হয়েছে। উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ৪টি ঘটনায় ১ জন নিহত হয়েছে। একই সময়ে নৌ-পথে ৩৩টি ছোট-বড় বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনায় ৭৪ জন নিহত ও ৩৯ জন আহত এবং ১৭ জন নিখোঁজের খবর পাওয়া গেছে। এবারের ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ৪ আগস্ট, এইদিনে ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ৮ আগস্ট, এইদিনে ৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এই সময় একদিনে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৪ আগস্ট, এইদিনে ৩২ জন নিহত হয় এবং একদিনে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় গত ৩১ জুলাই, এইদিনে ৫৫ জন আহত হয়। এই সময়ে ৮৮ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১০৬ জন নিহত ৬৫ আহত হয়। এবছর মোট সংঘটিত ২০১টি সড়ক দুর্ঘটনার ৮৮টি ঘটেছে মোটরসাইকেলের সাথে অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটনা, যা মোট দুর্ঘটনার ৪৩.৭৮ শতাংশ। যেখানে মোট নিহতের ৪৩.০৮ শতাংশ এবং মোট আহতের ১৯.৬৩ শতাংশ। অন্যদিকে গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা ৫২.২৩ শতাংশ ঘটেছে। আগামী ঈদে এ দুটি ঘটনা এড়ানো সম্ভব হলে সড়ক দুর্ঘটনার প্রায় ৯৬.০১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ১০২ জন চালক, ৬৩ জন পথচারী, ৩৮ জন নারী, ৩০ জন শিশু, ১৩ জন পরিবহন শ্রমিক, ১১ জন শিক্ষার্থী, ০৫ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ০৭ জন শিক্ষক, ০৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ০২ জন সাংবাদিক, এবং ০১ জন প্রকৌশলীর পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছে ০২ জন পুলিশ সদস্য, ০১ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ০১ জন বিমানবাহিনীর সদস্য, ০১ জন সিআইডির সদস্য, ৮৫ জন চালক, ৫০ জন পথচারী, ৩২ জন নারী, ২৪ জন শিশু, ০৮ জন শিক্ষার্থী, ০৬ জন শিক্ষক, ০৯ জন পরিবহন শ্রমিক, ০১ জন প্রকৌশলী, ০৪ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ছিল। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিক এ প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে। সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩২.৫৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৯.৩৫ শতাংশ বাস, ১৯.৩৫ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১০ শতাংশ ব্যাটারীরিক্সা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ৮.০৬ শতাংশ অটোরিক্সা, ৭.৭৪ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ ও ২.৯০ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। সংগঠিত দুর্ঘটনার ২৪.৩৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৫২.২৩ শতাংশ পথচারীকে গাড়ী চাপা দেয়ার ঘটনা, ১৫.৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায় ও ৭.৪৬ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩২.৩৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৯.২৫ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১৩.৪৩ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩.৯৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.৯৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে সংঘটিত হয়েছে। উল্লেখিত সময়ে সড়কপথে সিলেটের ওসমানীনগরে বাস-কার সংঘর্ষে একই পরিবারের ০৫ সদস্যসহ ০৬ জন নিহত হয়েছে। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে বাস মোটরসাইকেলকে চাপা দিলে একই পরিবারের ০৩ সদস্য নিহত ও ০১ জন আহত হয়েছে। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাস একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দিলে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এএসআই নিহত ও এক কনস্টেবল আহত হয়। মেহেরপুরের গাংনীতে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে এটিএন নিউজের মার্কেটিং বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান ম্যানেজারসহ আরো একজন নিহত এবং ১ জন আহত হয়েছে। ঠাকুরগাঁও এর ২৯ মাইল এলাকায় বাস অটোরিকশাকে চাপা দিলে ১০২ বছরের একজন বৃদ্ধা নিহত ও ০৪ জন আহত হয়। ঈদযাত্রার শেষের দিনে রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় মাইক্রোবাসের চাপায় ০১ জন পর্বত আরোহী নারী নিহত হয়। এছাড়া নৌ-পথে টাঙ্গাইলের বাসাইলে নেীকা ডুবে ০৫ জন নিহত হয়েছে। নেত্রকোনায় মদনে ট্রলার ডুবিতে একই পরিবারের ০৮ জনসহ ১৮ জন মাদ্রাসার ছাত্র নিহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ যাত্রীর যাতায়াত হলেও সেই তুলনায় এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের মতো ছোট দেশের সীমিত রাস্তায় ছোট যানবাহনের আমদানী জরুরী ভিত্তিতে বন্ধ করে বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা জরুরী হয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগত যানবাহনের চালকদের প্রশিক্ষণ, নিয়ন্ত্রয়ক সংস্থা বিআরটিএসহ ট্রাফিক বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, ছোট যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহনকে বিকশিত করা জরুরী। একই সাথে সড়ক দুর্ঘটনাকেও মহামারীর মতো গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি। এসময় উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের সহকারি অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, এডিটরস ফোরামের সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী, ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান নুর নবী শিমু, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, জিয়া প্রমুখ। Share this:FacebookX Related posts: আইজিপি হচ্ছেন বেনজীর আহমেদ ছুটি বাড়ল ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা সেতু ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা ৩৮তম বিসিএসের ফল প্রকাশ: নিয়োগ পাচ্ছেন ২২০৪ জন ক্যাডার বাংলাদেশে আবিষ্কার করোনার টিকা ৬ মাসের মধ্যে বাজারে আনার আশা কে কি লিখল তা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না: জনপ্রশাসনকে প্রধানমন্ত্রী কাপ্তাইয়ের পর রাঙ্গামাটি মৎস্য ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদা দাবি, বিপাকে মৎস্যজীবীরা করোনায় মৃত্যু কমলেও বেড়েছে আক্রান্ত বই উৎসবের উদ্বোধন সকালে করোনায় আক্রান্ত ১০১৪ জন দেশে কোনো পরিবার আর গৃহহীন থাকবে না : পলক খ্রিষ্টীয় নববর্ষে সবার জীবন অনাবিল আনন্দ ও সাফল্যে ভরে উঠুক SHARES Matched Content জাতীয় বিষয়: ২০১ সড়ক দুর্ঘটনায়২৪২ নিহতঈদ যাত্রার