সিনেমা স্টাইলে বিলাসবহুল হোটেল মিলিনা দখল করেন সাহেদ

তার অভিযোগ, রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের অভিযানের পর মিলিনা থেকে অন্তত ৪২ লাখ টাকার জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলেছেন সাহেদ। এ ঘটনায় প্রতারণা ও চুরির অভিযোগ এনে গত ১৩ জুলাই উত্তরা পূর্ব থানায় সাহেদসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন আনোয়ার। মামলায় সাহেদ ছাড়াও হোটেলের ২১ জন কর্মচারী এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০/১২ জনকে আসামি করেছেন আনোয়ার।
মামলার এজাহারে আনোয়ার লিখেছেন, সাহেদের নির্দেশে হোটেল থেকে ২২টি বিছানা, ১০টি সেইফটি লকার, ২২টি ফ্রিজ, ২৯টি টিভি, ১৩টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, ১৩টি কম্পিউটার, ৯টি গ্যাস সিলিন্ডার, ৭ সেট সোফাসহ চেয়ার, টেবিল, বালিশ, টাওয়েল, মাইক্রোওভেন, সিলিং ফ্যান ও টেবিল ফ্যান সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এসব জিনিসপত্রের মূল্য ৪২ লাখ টাকার মতো। এছাড়া জিমের যন্ত্রপাতি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, টিভিসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে।
ভুক্তোভোগী আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য তিনি যখন ‘পার্টনার’ খুঁজছিলেন, সে সময় ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে তার সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ দেখা করেন। ওই মাসের ২১ নভেম্বর হোটেল মিলিনার মালিকানা নিয়ে সাহেদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের চুক্তি হয়।
এমন চুক্তির পেছনে কারণ হিসাবে আনোয়ার জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনেকের ঘনিষ্ঠতা আছে এবং তার বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজে বহু বিদেশি এই হোটেলে অবস্থান করবেন বলে লোভ দেখিয়েছিলেন সাহেদ।
আনোয়ার হোসেন জানান, এমন প্রলোভনে চুক্তি করিয়ে সাহেদ তার দলবল নিয়ে হোটেলে ঢুকে পড়ে। চুক্তি অনুযায়ী হোটেলের ভাড়া থেকে প্রতি মাসে সাড়ে ৭ লাখ টাকা পাওনার এক টাকাও দেননি সাহেদ।
উল্টো চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে আনোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা করে সাহেদ। প্রভাব খাটিয়ে চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া যেন দিতে না হয়- সে রকম একটি আদেশও বের করে ফেলেন তিনি। এভাবে আনোয়ার হোসেনের হোটেল মিলিনা দখল করে ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিদের নিয়ে পার্টি দিতেন সাহেদ। এতেই ক্ষান্ত হননি সাহেদ। মিলিনা হোটেলের নথিপত্র জালিয়াতি করে সাহেদ প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ঋণ নেয়ারও চেষ্টায় ছিলেন।
এ বিষয়ে হোটেল মালিক আনোয়ার হোসেন আরেকটি মামলা করার প্রস্ততি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন উত্তরা পূর্ব থানার ওসি নূরে আলম।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, মিলিনা হোটেল মালিক আনোয়ার হোসেনের করা মামলায় সাহেদকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছি আমরা। তবে এ বিষয়ে আদালত এখনও সিদ্ধান্ত দেয়নি। এদিকে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন সাহেদ। তার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্লক করা হয়েছে ।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ভুয়া পরীক্ষাসহ এ সংক্রান্ত অনিয়ম নিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরে বেরিয়ে এসেছে সাহেদের বহুমুখী প্রতারণার তথ্য।
বিভিন্ন ভুয়া পরিচয়ের পাশাপাশি অন্তত ১১টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও সম্পাদক পরিচয় দিতেন সাহেদ। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অসংখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা।