নেক ব্লাস্ট’ রোগের আক্রমণে দিশেহারা শ্রীপুরের কৃষক

প্রকাশিত: ৮:০৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : ধারদেনা করে এবারও সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন শ্রীপুর পৌরসভার লোহাগাছ গ্রামের কৃষক আশিকুল ইসলাম। জমিতে সবুজ ধান গাছের চারা দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন।

কিন্তু কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ছত্রাকজনিত ‘নেক ব্লাাস্ট’ রোগের আক্রমণ। যার প্রভাবে ধানের ছড়া বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাতাগুলো বাদামি আবার কখনও সাদা বর্ণের হওয়া শুরু করে। কিছুদিন পর থেকে ছড়ার গোড়ার অংশে কালো হয়ে ধানের ছড়াটাও বাদামি ও সাদা বর্ণের হয়ে যায়। শুধু আশিকুল ইসলামই নয়, এমন চিত্র গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বহু কৃষকের ফসলের মাঠে। যাদের বোরো আবাদ নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বোরো ধান চাষ করে খরচ উঠাতে না পারায় এখন তারা লোকসান গুনার শঙ্কায় আছেন। অনেকে ঋণ নিয়ে ধানের আবাদ করে কাঙ্ক্ষিত ধান না হলে সেই ঋণ পরিশোধের দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। যোগাযোগ করেও কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা মিলছেনা বলে অভিযোগ কৃষকদের।

সোমবার ও মঙ্গলবার সরেজমিনে উপজেলার গোসিংগা, বরমী,রাজাবাড়ি, কাওরাইদ ও শ্রীপুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফসল ঘরে তোলার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে এই রোগ দেখা দেয়ায় কৃষকেরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের মুখে হাসির পরিবর্তে ঝড়ছে চোখের জল। মাঠের পর মাঠ ধানের শীষ সাদা হয়ে যাচ্ছে। কৃষক ফসলি জমিতে গিয়ে হতাশা আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে। ফসলের রোগ সমাধানের জন্য পাগলের মতো ছোটাছুটি করছেন কৃষি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ওষুধের দোকান গুলেতে। এরপরও হচ্ছে না প্রতিকার।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, এ মৌসুমে উপজেলায় ১১ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অফিসের লোকজন সবসময়ই কৃষকের পাশে রয়েছে বলে দাবী করেন সেখানে নিয়োজিত কর্মকর্তারা। তবে, কৃষকের অভিযোগ ফসলের মাঠে অফিসের লোকজনকে দেখা যায় না। রাস্তার মোড়ে কিংবা চায়ের দোকানে বসে কয়েকজনের সঙ্গে আলাপচারিতায় দায়িত্বের ইতি টানেন ফিল্ডে কর্তব্যরত অফিসারগন। অফিসে এসে যোগাযোগ করেও তাদের দেখা মিলেনা বলেও অভিযোগ করেন একাধিক কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে দায়সারা ভাব দেখিয়ে ধানের প্রজাতির ওপর দোষ চাপাচ্ছেন বলে দাবি কৃষকদের।

শ্রীপুর পৌর এলাকার লোহাগাছ গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন,রুবেল মিয়া,আমজাদ হোসেন,জিয়াউল হক দুলাল মিয়া, ইমান আলীসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক কৃষক বলেন,“আমাদের জমির অধিকাংশ ধান পাক ধরার মুখে আছে, কিন্তু ধানের শীষ সাদা হয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের খবর কেউ লয় না”। উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের মাটিয়াগাড়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদ বলেন,”এ ইউনিয়নের ৮০ শতাংশ কৃষকের ফসল এ রোগের আক্রমণের শিকার। আমার বয়সে কৃষি ব্লক সুপারভাইজার সরজমিন আসছে এমনটা দেখিনি”।

বরমী ইউনিয়নের সিটপাড়া আক্তার হোসেন বলেন,এ মৌসুমে বোরো ধানে দেওয়া ঔষধের টাকাও উঠবে না।পোকার আক্রমণ ঠেকানোর পরামর্শের আশায় যোগাযোগ করেও কৃষকের মাঠে না পাওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে পৌরসভার দায়িত্বে থাকা উপসহকারি কৃষি অফিসার আইরিন সুলতানার মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শ্রীপুর উপজেলা কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা। তবে, তাপমাত্রার তারতম্য ও ব্রি-২৮ জাতের ধানকে দোষারোপ করে মুঠোফোনে জানান, ব্রি-২৮ অনেক পুরনো একটি জাত। এটি রোপনে কৃষকদেরকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। এর বদলে ব্রি-৮৮ বা ব্রি-৮৯ চাষের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকেই কিছু ধান রোগাক্রান্ত হয়েছে। তখন আমরা দুই রাউন্ড ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে বলি। যারা করেননি, বা সঠিকভাবে করেননি। তাদের ফসল নষ্ট হয়েছে”।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গাজীপুরের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে যোগাযোগ না করার বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর তাপমাত্রা ৩৩-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বৃষ্টির তারতম্যের কারণে এ রোগ দেখা দেয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সবসময়ই কৃষকের পাশে রয়েছে।