আত্রাই গৌড় নদী থেকে বালু উত্তোলন: ভাঙ্গনের মুখে অর্ধশতাধিক গ্রাম ও ফসলি জমি দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম প্রকাশিত: ১২:২৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০২২ আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর আত্রাই উপজেলার গৌড় নদী থেকে নিয়ম না মেনে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙ্গনের মুখে পড়তে যাচ্ছে অর্ধশতাধিক গ্রাম ও শত শত হেক্টর কৃষি জমি। এই বিষয়ে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার লিখিত ভাবে অভিযোগ দিয়েও কোন ফল পাননি ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা। প্রতিবাদ করতে গেলেই হুমকি আর ধামকীর শিকার হতে হচ্ছে অসহায় মানুষদের। অতি দ্রুত এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে গ্রাম ও কৃষি জমিগুলো বাঁচাতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নদীর তীরবর্তি পারমোহনঘোষ গ্রামের মৃত-মছির উদ্দিনের ছেলে আব্দুস সোবহান বলেন, উপজেলার বিশা ইউনিয়নের মথুরাবাটি, পারমোহনঘোষ, খালপাড়া, খাসখামার, মোহনঘোষ, ইসলামপুরসহ প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম রয়েছে গৌড় নদীর তীরে। শুধু গ্রামই নয় জেগে ওঠা তীরে রয়েছে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের লিজ নেওয়া শত শত হেক্টর কৃষি জমিও। গ্রাম আর কৃষি জমি সংলগ্ন নদী থেকে সরকারের নিয়ম না মেনে অপরিকল্পিত ভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিন-রাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। একই জমি সংলগ্ন নদী থেকে অনেক গভীর করে বালু উত্তোলন করার কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে সেই সব জমি। এক সময় জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার সঙ্গে গ্রামগুলোও বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে ইজাদারের লোকেরা তাদের ইচ্ছে মাফিক বালু উত্তোলন করছেন। আর এই বিষয়ে কোন কিছু বলতেই গেলেই সেই মহলের পেটোয়া বাহিনী এসে আমাদেরকে নানা রকম হুমকি-ধামকী দিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। জমি আর ঘর-বাড়ি হারানোর ভয়ে আমাদের চোখে ঘুম নেই। আরেক বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, গৌড় নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে গত বছরের মার্চ মাসে আমরা গ্রামবাসীরা উপজেলা প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করি কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই বালু উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। ইতিমধ্যেই মথুরাবাটি মৌজার অনেক কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কৃষি জমিতে বালু পড়ে ফসল চাষের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। আবাদি কৃষি জমি নদী গর্ভে হারিয়ে অনেক কৃষক নি:স্ব হয়ে গেছে। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখলে বর্ষা মৌসুমে হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়ি-ঘর ও জমিজমা সবকিছু নদী গর্ভে হারিয়ে ফেলবেন। বালু খেকোদের কিছু বলতে গেলেই প্রাণনাশের হুমকি দেয়। একাধিকবার স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলেও কোন লাভ হয়নি। দ্রুত আমরা এই বালু উত্তোলন বন্ধ চাই। আরেক বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, আমরা কৃষি জমি ও বাড়ি-ঘর নদীতে হারিয়ে উদ্বাস্তÍু হয়ে সরকারের সাহায্য পেতে চাই না। আমরা চাই সরকার দ্রুত এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে আমাদেরকে রক্ষা করুন। স্থানীয় ইউপি আ’লীগের নেতা ও চেয়ারম্যানের শক্তিতে বালু খেকোরা যা নয় তার চেয়ে অনেক বেশি নদী গর্ত করে একই জায়গা থেকে ইচ্ছে মতো বালু তুলছে। অথচ গত বছরই সরকারি ভাবে এই নদী খনন করা হয়েছে। নদীর তীরের যে সব স্থানে কোন জনবসতি কিংবা কৃষি জমি নেই যেখানে নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে সাধারন মানুষদের জানমালের কোন ক্ষতি হবে না সেই রকম স্থান থেকে বালু উত্তোলন করুক। বিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তোফা বলেন, যারা বালু উত্তোলনের ইজারা নিয়েছেন তাদেরকে আমি সরকারের নির্ধারিত স্থানে নিয়ম অনুসারে বালু উত্তোলন করার জন্য বলেছি। যদি তারা সেই নিয়ম না মেনে বালু উত্তোলন করেন তাহলে আমার কাছে অভিযোগ দিলে আমি বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। তবে ওই গ্রামের মানুষরা আমাকে বিষয়টি মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন। আমি জমি কিংবা গ্রামের ক্ষতি হয় এমন স্থান থেকে বালু উত্তোলন করতে সংশ্লিষ্টদের নিষেধ করেছি। বালু মহলের ইজাদার আলহাজ্ব মো. রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, আমি সরকারের নিয়মানুসারে গুড়নই নদীর বালু মহল ইজারা নিয়েছি। আমার লোকজন নিয়ম মেনেই বালু উত্তোলন করছে। আমি দলীয় কোন ব্যক্তির নাম ভেঙ্গে কিংবা প্রভাবশালী কোন মহলের ইন্ধনেও বালু উত্তোলন করছি না। যদি নিয়মের বাহিরে কোন কিছু হয়ে থাকে তাহলে প্রশাসন যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আমি তা মেনে নিবো। আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, জনগনের ক্ষতি করে প্রশাসন কোন কাজই কখনো করবে না। বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতি হচ্ছে এমন বিষয় ওই এলাকা থেকে জানানোর পর আমি বালু উত্তোলনের স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে পাঠিয়েছিলাম। যারা বালু মহাল ইজারা নিয়েছেন তারা নিয়ম মেনে সঠিক জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করছে কিনা সেই বিষয়টি সব সময় মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে একই জায়গা থেকে বছরের পর বছর বালু উত্তোলন করার কারণে কৃষি জমি এবং বসতবাড়ির ক্ষতি হতে পারে এমন স্থান থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। এছাড়া অন্যায় ভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, দ্রুত এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসনকে আমি অনেকবার বলেছি। কিন্তু প্রশাসন দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দলের নাম ভেঙ্গে ইজারার নামে নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে শতাধিক গ্রাম ও শত শত হেক্টর কৃষি জমিকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। প্রতিনিয়তই ওই সব এলাকা থেকে ভুক্তভোগীরা আমাকে ফোন করে জানাচ্ছে। ওই সব গ্রাম ও প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস কৃষি জমিগুলো রক্ষার্থে দ্রুত এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। Share this:FacebookX Related posts: আত্রাইয়ে কনকনে তীব্র শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন আত্রাইয়ে শীতার্তদের পাশে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক আত্রাইয়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি কাজে ফিরতে পারছে না সাধারণ মানুষ মাদকের আখড়া আত্রাইয়ের রেলওয়ে কলোনীর পরিত্যক্ত ভবন আত্রাইয়ে আহসানগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা আত্রাইয়ে চেয়ারম্যানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৯ ইউপি সদস্যের সংবাদ সম্মেলন আত্রাইয়ে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীনির পরীক্ষা অনিশ্চিত আত্রাইয়ে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস পালন আত্রাইয়ের শুঁটকি বাজারজাত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায় আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি: শঙ্কিত এলাকাবাসী আত্রাই নদীর পানির স্রোতে ভেসে যাওয়া শিশু ২৪ ঘন্টা পর উদ্ধার আত্রাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নামাজ ও খাবার ঘর উদ্বোধন SHARES Matched Content দেশের খবর বিষয়: অর্ধশতাধিক গ্রামআত্রাইগৌড় নদীফসলি জমিবালু উত্তোলনভাঙ্গনের মুখে