সুবর্ণজয়ন্তীর মহোৎসব

প্রকাশিত: ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৬, ২০২১

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী- দুটো মিলিয়ে ২০২১ এর এই বিজয় দিবসটি যে আগের সব সময়ের চেয়ে একেবারেই অন্যরকম। স্মরণকালের সেরা এবারের বিজয় দিবসটি যে পুরো বিশ্বের সামনে অবিস্মরণীয়ভাবেই উদযাপন করছে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার থেকে শুরু করে আপামর জনতা।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের উল্লাসে সাত কোটি মানুষ নেমে এসেছিলো এই বাংলার রাস্তায়, ২০২১ এ এসে এদেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্নও তো তেমনি। ’৭১-এর কোনো এক শীতের বিকেলে যেমন পুরো বিশ্ব দেখেছিলো একটি নতুন দেশকে, স্বাধীনতার এই ৫০ বছরে এসে আবার এই পৃথিবী দেখুক নতুন এক বাংলাদেশকে। স্বাধীনতার ’৫০এ এসে লাল সবুজের গর্জন উঠুক আরও একবার।

এবার তাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুজিববর্ষের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির দিন তথা ১৬ ডিসেম্বর উদযাপিত হবে বাংলার ইতিহাসে স্মরণকালের সেরা বিজয়োৎসব। এবারের বিজয় দিবসে তাই থাকছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

বিজয় দিবসের মূল অনুষ্ঠান সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণিল কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠি হবে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে। এবার শুধু আমাদের দেশই না, বিজয় দিবস প্যারেডে অংশ নেবে ভারত, নেপাল, রাশিয়া, মেক্সিকো আর ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সার্বিক সহায়তা করা ভারত ও রাশিয়ার ওয়ার ভেটেরানদের সস্ত্রীক বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবার।

তেজগাঁও পুরান বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সকাল সাড়ে ১০টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিএনসিসি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যা ব, আনসার ও ভিডিপি এবং কারারক্ষীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ হবে। একই সঙ্গে থাকছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাই পাস্ট ও অ্যারোবেটিক এয়ার শো। চলন্ত যান্ত্রিক সামরিক কন্টিনজেন্টের সালাম গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।

বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ইতিমধ্যেই ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ পৌছে গেছেন ঢাকায়। আসার কথা রয়েছে ভুটানের সাবেক রাজা (চতুর্থ) জিগমে সিঙ্গে ওয়াংচুকের। এছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ভারত। তাই দিনটিকে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী দিবস হিসেবে উদযাপন করবে দুই দেশ। পৃথিবীর ১৮টি দেশের রাজধানীতে যৌথভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করবে বাংলাদেশ ও ভারত। ১৮টি রাজধানীর ভেতর রয়েছে- জাকার্তা, সিঙ্গাপুর সিটি, ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর, ক্যানবেরা, টোকিও, রিয়াদ, আবুধাবি, কাতার, মস্কো, লন্ডন, ব্রাসেলস, প্যারিস, জেনেভা, প্রিটোরিয়া, কায়রো, ওয়াশিংটন ও অটোয়া।

একাত্তরের রণাঙ্গণে এদেশের লাখো মানুষ ঝাপিয়ে পড়েছিলো দেশটাকে স্বাধীন করতে। নিজেদের রক্তের বিনিময়েই ছিনিয়ে এনেছিলো এক টুকরো মানচিত্র, একটা লাল সবুজের পতাকা। ৫০ পেরিয়ে এবারের বিজয় দিবসে আরেকটিবার সেদিনের সেই অনুপ্রেরণা ছুয়ে যাক বাংলার মাটির সন্তানদের।