চিরনিদ্রায় শায়িত বাবুনগরী দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম প্রকাশিত: ৪:২২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০২১ নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। জানাজা শেষে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাকে মাদ্রাসার পাশে সমাহিত করা হয়। জানা গেছে, বাবুনগরীর মৃত্যুর সংবাদের পর তার নিজ বাড়ি ফটিকছড়ির নাজিরহাট পৌরসভার বাবুনগর এলাকায় একটি কবর খোঁড়া হয়। আবার হাটহাজারী মাদ্রাসায়ও একটি কবর খোঁড়া হয়। এলাকাবাসীর দাবি, জীবদ্দশায় জুনায়েদ বাবুনগরী তার নানা হারুন বাবুনগরীর পাশে তাকে কবর দেয়ার কথা বলেছেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী কবর খোঁড়া হয়েছে। আবার হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক-বর্তমান ছাত্রদের ইচ্ছা বাবুনগরীকে মাদ্রাসার পাশে দাফন করার। বিষয়টি নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়। শুরুতে হাটহাজারী মাদ্রাসায় দাফনের সিদ্ধান্ত হলেও মাঝখানে আবার বাবুনগরীর গ্রামের বাড়িতে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়। হাটহাজারী মাদ্রাসায় জানাজা শেষে বাবুনগরীর মরদেহ ফটিকছড়ির উদ্দেশে নেয়ার কথা ছিল। তবে জল্পনা-কল্পনা শেষে মাদ্রাসার পাশেই বাবুনগরীকে দাফন করা হয়। এর কিছুক্ষণ আগে সদ্যঘোষিত হেফাজতের আমির ও মামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর ইমামতিতে জুনায়েদ বাবুনগরীর জানাজা সম্পন্ন হয়। এতে আশপাশের ও দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ অংশ নেন। জানা গেছে, বুধবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যার পর থেকে বাবুনগরীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। পর দিন (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টার দিকে তার শারীরিক অবস্থার হঠাৎ আরও অবনতি হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে বাবুনগরীকে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জুনায়েদ বাবুনগরী ডায়াবেটিকসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এর আগেও তিনি কয়েকবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গত ০৮ অগাস্ট দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় গাড়িতে বসে করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেন জুনায়েদ বাবুনগরী। হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী ১৯৫৩ সালের ০৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার বাবুনগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবুল হাসান এবং মায়ের নাম ফাতেমা খাতুন। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বাবুনগরের আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত হারুন বাবুনগরী ছিলেন তার নানা। মায়ের দিক দিয়ে তার বংশধারা ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। জুনায়েদ বাবুনগরী মাত্র পাঁচ বছর বয়সে নিজ গ্রাম বাবুনগরের আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এ মাদ্রাসা থেকে তিনি মক্তব, কোরআনুল কারিম হেফজ ও প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। কোরআন হেফজ সম্পন্ন করার পর তিনি আজহারুল ইসলাম ধর্মপুরীর কাছে পুরো কোরআন মুখস্ত শুনিয়েছিলেন। এরপর মাদ্রাসা জগতের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে ভর্তি হন। ১৯৭৬ সালে সুনামের সঙ্গে ‘দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায় মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম, মুফতি আহমদুল হক, মাওলানা আবুল হাসান, মাওলানা আব্দুল আজিজ এবং আল্লামা শাহ আহমদ শফীসহ প্রমুখ খ্যাতিমান আলেমের কাছে ইলমে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করেন। হাটহাজারী মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিসে প্রথম স্থান অর্জন করে তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে ১৯৭৬ সালে পাকিস্তান গমন করেন। পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় ‘তাখাচ্ছুছাত ফিল উলুমুল হাদিস তথা উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগে ভর্তি হন। দীর্ঘ দুই বছর এ প্রতিষ্ঠানে ইলমে হাদিস নিয়ে গবেষণা সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি আরবি ভাষায় ‘সীরাতুল ইমামিদ দারিমী ওয়াত তারিখ বি শায়খিহী’ (ইমাম দারিমী ও তার শিক্ষকগণের জীবন বৃত্তান্ত) শীর্ষক অভিসন্দর্ভ (গবেষণা গ্রন্থ) জমা দেন। এই অভিসন্দর্ভ জমা দেওয়ার পর তিনি জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়া থেকে হাদিসের সর্বোচ্চ সনদ লাভ করেন। জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় তিনি তৎকালীন যুগশ্রেষ্ঠ আলেমদের মধ্যে মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরী, ইদ্রিস মিরাঠী, আব্দুল্লাহ ইউসুফ নোমানীসহ অনেকের কাছে ইলমে হাদিসের জ্ঞান আরোহন করেন। পাশাপাশি তিনি ওয়ালী হাসান টুঙ্কির কাছে সুনান আত-তিরমিজি এবং মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরীর কাছে সহিহ বুখারি দ্বিতীয় বারের মতো অধ্যয়ন করেন। শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করার পর আধ্যাত্মিক দীক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৭৮ সালে আব্দুল কাদের রায়পুরীর উত্তরসূরী আব্দুল আজিজ রায়পুরীর কাছে বায়আত গ্রহণ করেন। রমজান মাসে তিনি রায়পুরীর খানকায় অবস্থান করে আব্দুল আজিজ রায়পুরীর কাছে কিছুদিন অবস্থান করে তার সান্নিধ্য লাভ করেন। এছাড়াও, তিনি আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির দুই শিষ্য- আব্দুস সাত্তার, ফতেয়াবাদ, শাহ আহমদ শফী, রাঙ্গুনিয়া। আবুল হাসান আলী নদভীর শিষ্য সুলতান যওক নদভীর কাছ থেকেও খেলাফত ও ইলমে তাসাউফেরে শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৭৮ সালের শেষের দিকে জুনায়েদ বাবুনগরী পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দেশে এসে নিজ গ্রাম বাবুনগর মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। তিনি বাংলাদেশের মাদ্রাসাসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম বাবুনগর মাদ্রাসায় উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগ চালু করেন। ২০০৩ সালে তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। দীর্ঘদিন ইলমে হাদিসের খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। পরবর্তীতে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক নিযুক্ত হন। ২০২০ সালের ১৭ জুন মাদ্রাসা কমিটি তাকে সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। তার স্থলে মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক শেখ আহমদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে আবার তাকে হাটহাজারী মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস এবং শিক্ষা সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শত ব্যস্ততার মাঝেও শায়খুল হাদিস ও শিক্ষা সচিবের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করে আসছিলেন। তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম নূরানী তালীমুল কুরআন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মাসিক মুঈনুল ইসলামের প্রধান সম্পাদক, মাসিক দাওয়াতুল হকের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। পারিবারিক জীবনে তিনি পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের জনক। তার ছেলের নাম মুহাম্মদ সালমান। Share this:FacebookX Related posts: বনানীতে চিরনিদ্রায় শায়িত নুরুল ইসলাম বাবুল সরকারের সঙ্গে আমার শত্রুতা নেই, নাস্তিকরাই ভুল বোঝায়: বাবুনগরী রোহিঙ্গাদের সফল প্রত্যাবাসনে ইইউ’র সমর্থন কামনা প্রধানমন্ত্রীর ১ কোটি কিলোওয়াট-আওয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহের মাইলফলক পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত ডা. সাবরিনা বাড়বে না ঈদের ছুটি, কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ নোয়াখালীর ঘটনা চরম বর্বরতা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেডিক্যাল কোরে প্রথম নারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমা বেগম সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের অ্যাকাউন্ট জব্দ তেজগাঁওয়ে সড়ক অবরোধ করে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ যারা পাচ্ছেন জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পুরস্কার SHARES Matched Content জাতীয় বিষয়: চিরনিদ্রায়বাবুনগরীশায়িত