গৃহনির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম! তদন্ত কমিটি গঠন

প্রকাশিত: ১২:১৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২১

অনলাইন ডেস্ক : ব্রাহ্মমণবাড়িয়ার নবীনগরে মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে গৃহহীনদের জন্য নির্মাণাধীন ২০টি ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের ১০ দিন পর শেষ পর্যন্ত নবীনগরের ইউএনও একরামুল ছিদ্দিকের নির্দেশে সোমবার (১৯ এপ্রিল) চার সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো।

উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হাসানকে গঠিত তদন্ত কমিটির ‘আহবায়ক’ করা হয়েছে।

কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন- উপজেলা প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মিজানুর রহমান ও উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী খুরশিদ আলম।

কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন নবীনগরের ইউএনও একরামুল ছিদ্দিকের কাছে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীনদের জন্য নবীনগর উপজেলার সাতটি এলাকায় ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যায়ে ৪৮৫টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘরের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এসব কাজের তদারকি করছে উপজেলা প্রশাসন (বাস্তবায়ন কমিটি)।

এসব প্রকল্পের মধ্যে উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের শাহবাজপুর গ্রামের হিন্দু পাড়ায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০টি ঘর নির্মাণের দায়িত্ব প্রশাসনের দেখভালের বদলে সাবেক যুবলীগ নেতা, নবীনগর প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি, সমকালের উপজেলা প্রতিনিধি ও শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম লিটনকে দেওয়া হয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঘরগুলো নির্মাণে তদারকির দায়িত্ব পাওয়া মাহাবুব আলম লিটন ‘সাংবাদিক’ হওয়ায় ওইসব ঘর নির্মাণে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।

এ অবস্থায় গত ৮ এপ্রিল একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে ‘মুজিববর্ষে শেখ হাসিনার উপহার, গৃহনির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ! দেয়ালে হাত দিলেই খসে পড়ে বালু সিমেন্টের পলেস্তরা’ এমন শিরোনামে একটি সরেজমিন সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট ওপর মহলে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।

তবে সাংবাদিক মাহাবুব আলম লিটন সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে নানা মহলে দৌড়ঝাঁপ করেও ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে লিটন প্রকাশিত রিপোর্টটিকে ইঙ্গিত করে ‘এরা শয়তানের প্রেতাত্মা’ শিরোনাম দিয়ে তার নিজের ফেসবুকে একটি নাতিদীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন।

সেখানে তিনি রিপোর্টটি নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন। কিন্তু এসব করেও শেষ রক্ষা তার হয়নি। অবশেষে রিপোর্ট প্রকাশের ১০ দিন পর ঘটনার তদন্তে ১৯ এপ্রিল চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি সোমবার গঠন করে স্থানীয় প্রশাসন।

এদিকে একটি নির্ভরশীল সূত্র জানায়, সংবাদ প্রকাশের পর গত ১০ দিনে নির্মাণাধীন ২০টি গৃহের যেসব কাজে অনিয়ম হয়েছে (পলেস্তরা খসে পড়া) সেইসব পিলার ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হয় এবং সাংবাদিক মাহাবুব আলম লিটনকে ইউএনওর কার্যালয়ে ডেকে এনে গৃহনির্মাণ কাজে নানা অনিয়মের বিষয়ে তার কাছে ইউএনও কৈফিয়ত চান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এই বিষয়ে সাংবাদিক লিটনের মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

তবে এলাকার বাসিন্দা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুব্রত বর্ধন সোমবার রাতে অবজারভারকে বলেন, ‘আমার নানা বাড়ির এলাকায় মুজিববর্ষের গৃহনির্মাণের এমন জঘণ্য অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে সোমবার আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিসি ও নবীনগরের ইউএনও মহোদয়কে মুঠোফোনে মৌখিকভাবে সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছি। আশা করছি, তাঁরা এ বিষয়ে কঠোর হবেন। অন্যথায় বিষয়টির প্রতিকারে একজন আইনজীবী হিসেবে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবো।’

এ বিষয়ে নবীনগরের ইউএনও একরামুল ছিদ্দিক বলেন, ‘সাংবাদিক লিটনকে ডেকে ইতিমধ্যে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। অনিয়মের বিষয়ে এক চুলও ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ‘ঘটনাটি স্থানীয় সংসদ সদস্যও পুরোপুরি অবগত আছেন। পত্রিকায় রিপোর্ট হওয়ার পর তিনিই আমাকে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন