জমি নিয়ে বিরোধ, বসতঘর কেড়ে নিল প্রতিপক্ষরা

প্রকাশিত: ৭:৩৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : ৮০ বছরের বৃদ্ধ কৃষক মমিন উল্যা তার দুই মেয়ে, এক ছেলে ও বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন পূর্ব পুরুষের ভিটায়। কিন্তু সেখানে থাকা বসতঘরটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে একই বাড়ির হোসেন আহম্মদের ছেলেরা।

এর ফলে খোলা আকাশের নীচে রাত্রিযাপন করতে হচ্ছে বৃদ্ধ মমিন উল্যার স্ত্রী, সন্তানদের।

ঘটনাটি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের বক্স আলী হওলাদারের নতুন বাড়িতে। সোমবার দুপুরে প্রতিপক্ষের লোকেরা তাদের ঘরটি ভেঙে দেয়। মঙ্গলবার ভোরে ঘরের আসবাবপত্রসহ টিন, বেড়া সরিয়ে নেয় প্রতিপক্ষরা।

এ ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় জীবনের নিরাত্তাহীনতায় ভুগছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।

জানা গেছে, কৃষক মমিন উল্যা তার পূর্ব পুরুষের ভিটায় বসবাস করছেন। একই বাড়িতে কয়েক বছর পূর্বে জমি ক্রয় করে বসবাস শুরু করেছেন হোসেন আহম্মদ নামে আরেক ব্যক্তি। মমিন উল্যার পূর্ব পুরুষের ভিটাটি নিজেদের দাবি করে বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করেন হোসেন আহম্মদ ও তার ছেলেরা।

এ ঘটনায় একাধিক বার স্থানীয় ভাবে শালিসি বৈঠক বসে। কিন্তু হোসেন আহম্মদ কোন কিছুর তোয়াক্কা করে না। এরই মধ্যে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন শুরু করে মমিন উল্যার পরিবারের সদস্যদের উপর। সোমবার মমিন উল্যা তার বসত ভিটায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য ইট নিয়ে আসেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে হোসেন আহম্মদের ছেলে কামরুল ইসলাম (৩৫)। ক্ষিপ্ত কামরুল প্রথমে ইটবাহী ট্রাকে হামলা করে।

পরে কামরুল ও তার স্ত্রী শিপন, ভাই আজাদ (৪০) ও তার স্ত্রী স্বর্ণা বেগমসহ পরিবারের ৬/৭ জন সদস্য মমিন উল্যার বসত ঘরটি ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে তারা ঘরটি পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেয়। এ সময় বাধা দিতে গেলে হামলা ও লাঞ্চনার শিকার হন মমিন উল্যার মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়ে ফরিদা ইয়াসমিন হ্যাপী।

এ ঘটনায় সোমবার বিকেলে সদর থানা পুলিশের সদস্যরা দুই দফা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন প্রদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভূক্তভোগী মমিন উল্যার স্ত্রী কহিনুর বেগম অভিযোগ করে বলেন, তার বৃদ্ধ স্বামী দীর্ঘদিন শারীরিক ভাবে অসুস্থ। কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। অনেক কষ্টে দুই মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে স্বামীর পূর্ব পুরুষের ভিটায় বসবাস করতেছেন। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। হোসেন আহম্মদ তাদেরকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করেছেন। সোমবার দুপুরে তাদের বসতঘরটি একেবারে ভেঙে দেয় তারা। রাতে তিনি মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে খোলা আকাশের নীচে কাটিয়েছেন। মঙ্গলবার ভোরে প্রতিপক্ষরা বসতঘরের টিন, কাঠ, আসবাবপত্র নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটে নেয়।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে মঙ্গলবার সকালে তিনি বলেন, হামলাকারীরা প্রতিনিয়ত তাদের হুমকি দিচ্ছে ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে। আমরা চলে গেলেই আমার স্বামীর ভিটা বেদখল হয়ে যাবে। তাই জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও খোলা ভিটায় সন্তানদের নিয়ে বসে আছি। রাতে বসত ভিটাতেই বসে ছিলাম। স্থানীয় ৩ চৌকিদার আমাদের পাহারা দিতে এলে তাদেরকেও মারধর করে হোসেন আহম্মদের ছেলেরা। ভোর রাতে তারা আমাদের ঘরের সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। বসতভিটায় বসত ঘরের কোন অস্তিত্ব নেই। হোসেন আহম্মদরে পরিবারের নারী সদস্যরা আমাদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতেছে। এসব ঝামেলার কারণে আমরা সবাই অনাহারে আছি। আমার বৃদ্ধ স্বামী এবং সন্তানদের নিয়ে আমি থাকবো কোথায়?

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হোসেন আহম্মদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা গা ঢাকা দেয়ায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোরশেদ বলেন, হামলা ও ভাঙচুরের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। ভুক্তভোগী পরিবারকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।