‘এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যেই মেজর সিনহাকে গুলি’

প্রকাশিত: ৮:১৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার প্রধান তিন আসামিকে সেই ঘটনাস্থলে নিয়ে রেকি করা হয়েছে। শুক্রবার (২১ আগস্ট) দুপুর ১টার পরে র‌্যাব-১৫’র কার্যালয় থেকে কড়া নিরাপত্তায় কক্সবাজার-টেকনাফ পুরাতন মহাসড়ক দিয়ে আসামিদের টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর এপিবিএন পুলিশ চেকপোস্টে নিয়ে যাওয়া হয়।

কিভাবে মেজর সিনহাকে খুন করা হয়েছিল সেই চিত্র ফুটে তুলতে সেখানে রেকি অর্থাৎ(লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ, আক্রমন পূর্ব পর্যবেক্ষন, আক্রমনের কৌশল) শুরু করেন। এজন্য একটি সাদা কার ব্যবহার করা হয়। আসামীদের বর্ণনা মত রেকি পরিচালনা করা হয়। বিকাল ৩টায় রেকি সম্পন্ন করা হয়।

রেকিতে ওই ঘটনার সাথে মিল রেখে প্রথমে এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতকে গাড়ি থেকে তার ভুমিকা চিত্র ধারন, এরপর লিয়াকত আলী ও সর্বশেষ প্রদীপ কুমার দাশের রেকি সম্পন্ন করা হয়। রেকি পরিচালনা করেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশের সিনিয়র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম। রেকি শেষে সেখান থেকে চলে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের অংশ হিসেবে এই বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা।

র‌্যাব জানিয়েছে, তদন্তকাজের অংশ হিসেবে মামলার প্রধান আসামি সাবেক প্রদীপ কুমার দাশ, সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও উপপরিদর্শক নন্দ দুলাল রক্ষিতকে ঘটনাস্থলে নেওয়া হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন ভিড় করেন।

এর আগে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি গভীরভাবে অ্যানালাইসিস করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার। তিনি বলেন, ‘মেজর সিনহাকে গুলি বর্ষণের পুরো ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যেই। এই দুই মিনিটের প্রতিটি সেকেন্ডের ঘটনাপ্রবাহ আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করছি। প্রতিটি সেকেন্ডই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই ঘটনার অনেক তথ্য-উপাত্ত আমরা সংগ্রহ করেছি।’

শুক্রবার (২১ আগস্ট) দুপুর ১টার মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের স্থল ঘুরে টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব কথা বলেন র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

কী তথ্য পেয়েছেন জানতে চাইলে মোস্তফা সরোয়ার বলেন, ‘এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলা। তদন্তকারী কর্মকর্তা তার তদন্তকাজের অংশ হিসেবে আসামিদের নিয়ে ঘটনাস্থলে আসছেন। এটি তদন্ত কাজেরই অংশ। এই মুহুর্তে এটা বলা সমীচীন হবে না। এতে তদন্তকাজ ব্যাহত হতে পারে। তদন্তকাজটি এমনভাবে সম্পন্ন করা হবে, যাতে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোনও দোষী ব্যক্তি রক্ষা না পায় এবং নিরীহ লোক কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হন। ঘটনাটি যে দুই মিনিটের মধ্যে ঘটেছে, এর প্রত্যেকটি সেকেন্ড আমরা গভীরভাবে অ্যানালাইসিস করছি।’

এসময় র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ, র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম ও র‌্যাব-১৫’র অধিনায়ক আজিম আহমেদ এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাবের সিনিয়র এএসপি খায়রুল ইসলামসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় পুলিশের জব্দ করা মোবাইল, ল্যাপটপ, বিভিন্ন ডিভাইসসহ শিপ্রা দেবনাথের ২৯ ধরনের মালামাল মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কাছে হস্তান্তর করেছে রামু থানা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে এসব আলামত (ডিভাইসগুলো) বুঝে নেন র‌্যাবের কর্মকর্তারা।
এর আগে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালত রামু থানায় জিডি মূলে সংরক্ষিত এসব মালামাল র‌্যাবকে হস্তান্তরের এ আদেশ দেন।

রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, শিপ্রা ও সিফাতের কম্পিউটার ডিভাইস ও মেমোরিসহ ২৯টি সামগ্রী কক্সবাজারের রামু থানা পুলিশের হেফাজতে ছিল। মামলার তদন্ত কার্যক্রমে এসব কম্পিউটার ডিভাইসহ আলামত কাজে লাগবে।

তাই এইসব জিনিসপত্র র‌্যাবের কাছে হস্তান্তরের জন্য আদালতে আবেদন করেন র‌্যাব। প্রসঙ্গত শিপ্রা দেবনাথ জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তার বেশকিছু আপত্তিকর ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এতে সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত হন শিপ্রা। শিপ্রার অভিযোগ ছিল, রামু থানায় সংরক্ষিত মোবাইল, ল্যাপটপ বা অন্যান্য ডিভাইস থেকেই এসব ছবি ভিডিও বাইরে ছড়ানো হয়েছে। একারণে দুইজন পুলিশ সুপারসহ অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামী করে কক্সবাজার সদর থানায় ডিজিটালএ্যাক্টে মামলা করতে গিয়েছিলেন শিপ্রা দেবনাথ। কিন্তু সদর থানার সাবেক ওসি খাইরুজ্জামান মামলা গ্রহন না করে রামু থানা অথবা আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন।

গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন (অব.) সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ আগস্ট টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরির্দশক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে র‌্যাবকে।