ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্যই ডিজিটাল আইন অপরিহার্য : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৬:২৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১

সময় সংবাদ ডেস্কঃপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যখন করেছি তখন ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আইনের অপপ্রয়োগ দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। আইন নিজ গতিতেই চলবে। কিন্তু আইন নিয়ে অপপ্রচার কাম্য নয়। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ রুখতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অপরিহার্য। কেউ অসুস্থ হয়ে মারা গেলে সরকারের কিছু করার থাকে না। মৃত্যু কারও কাম্য নয়। কিন্তু সেটাকে ঘিরে বিশৃঙ্খলা করা ঠিক না ‘

শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) গণভবন থেকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুখবর জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রী ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার উপস্থাপনা শুরুতেই সবার দৃষ্টি কাড়ে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর হাতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র তুলে দেন তিনি। এরপর প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য শুরু করেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এক যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। ২০০৮-০৯ বছরে জিডিপির আকার ছিল মাত্র ১০৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯-২০ সালে তা ৩৩০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এই ১২ বছরে সরকারি ব্যয় ৪.৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, ৮৭ হাজার ৯৬০ কোটি থেকে ২০১৯-২০ বছরে চার লাখ ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা হয়েছে।’

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের গৌরব নতুন প্রজন্মকে উৎসর্গ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি এই অর্জন উৎসর্গ করছি- দেশের নতুন প্রজন্মকে। যারা আজকের বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রায় এক বছর পর আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি । তবুও সরাসরি না, ভার্চুয়ালি। আজ অবশ্য আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি, একটি মহৎ এবং গৌরবোজ্জ্বল প্রত্যয়নের সুসংবাদ দেয়ার জন্য। বাংলাদেশ গতকাল (শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি) স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের সুপারিশ লাভ করেছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেছি।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি জাতির পিতার হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগই দেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করল।

‘আজকের এ অর্জন আমাদের বিগত ১২ বছরের নিরলস পরিকল্পনা পরিশ্রম এবং প্রচেষ্টার ফসল। দেশের মানুষই এসব করেছেন। আমরা সরকারে থেকে শুধু নীতি সহায়তা দিয়ে সুযোগ তৈরি করেছি।’

জাতির এ অর্জন তরুণ প্রজন্মকে উৎসর্গ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তরুণরা আজকের বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ কৃতিত্ব দেশের আপামর জনসাধারণের। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, ‘মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা এ তিন সূচকের ভিত্তিতে জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে।

তিনি বলেন, ‘সমগ্র জাতির জন্য এটা অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের। আমাদের এই উত্তরণ এমন এক সময়ে ঘটলো, যখন আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। আমরা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে। এসময় বাংলাদেশের জন্য এই উত্তরণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে টেনে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে তারই হাতে গড়া আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করেছে। এই কৃতিত্ব এ দেশের আপামরা জনসাধারণের। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি। এই শুভ মুহূর্তে আমি দেশ ও দেশের বাইয়ে অবস্থানরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতার কন্যা হিসেবে, একজন নগণ্য সেবক হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আমি এই অর্জনকে উৎসর্গ করছি- আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মকে। যারা আজকের বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।’

‘২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পন্নোত দেশ থেকে উত্তরণের তিনটি মানদণ্ডই খুব ভালোভাবে পূরণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর অনুষ্ঠিত ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ পুনরায় সকল মানদণ্ড অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে পূরণের মাধ্যমে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করল।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা ও দেশের বিশিষ্টজন এবং সাংবাদিকরা উপস্থিতি ছিলেন।