পুলিশ ক্যাডার থেকে ওসি নিয়োগের সুপারিশ দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম প্রকাশিত: ৪:৩৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২১ নিজস্ব প্রতিবেদক : থানায় ওসি পদে পুলিশ ক্যাডার থেকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত রোববার দুদকের ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেয় সংস্থাটি। সোমবার দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের ভার্চুয়ালি ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দুদক কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম ও ড. মোজাম্মেল হক খান। ব্রিফিংয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি খাতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। মাঠ পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্র দুর্নীতি। এই দুর্নীতি থামাতে জনগণের সোচ্চার আন্দোলন দরকার।’ থানায় ওসি পদে পুলিশ ক্যাডার থেকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সব থানায় যে ক্যাডার থেকে নিয়োগ দিতে হবে, তা বলছি না। ইতোমধ্যে ৩৩ শতাংশ থানায় প্রমোশন পাওয়া থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ক্যাডার অফিসার দিলে আমরা মনে করি মাঠ পর্যায়ের দুর্নীতি অনেকাংশে কমবে।’ দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘গ্রামে ৮০ শতাংশ মানুষ বাস করে। তাদের নিরাপদ অবস্থান বজায় রাখতে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। যে জন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকারি ক্যাডার থেকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নিয়োগ দিলে ও মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নতুন ক্যাডারদের নিযুক্ত করলে স্বস্তি ফিরে আসতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের পাঁচ বছর মেয়াদের এক বছর চলে গেছে কোভিড মহামারিতে। কমিশনের শেষ বছরে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে অনেক পরিকল্পনা ছিল। সেসব তাই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।’ দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুর্নীতি সর্বব্যাপী, সর্বগ্রাসী। তার প্রমাণ পি কে হালদার। স্বচ্ছ মনিটরিং ব্যবস্থা ও জবাবদিহি না থাকায় পি কে হালদার খুব সহজেই নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সংবিধানে উল্লেখ থাকলেও গত ৫০ বছরেও ন্যায়পাল নিযুক্ত করা হয়নি। দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে ন্যায়পালের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। গুণগতমান সম্পন্ন আমলাতন্ত্রও দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে। জনগণকে হয়রানিমুক্ত দ্রুত সেবা দিতে সরকারি কাজে পদ্ধতিগত পরিবর্তন জরুরি।’ ব্রিফিংকালে বলা হয়, কোন ব্যক্তি ভুলক্রমে তার কোন বৈধ অর্থ-সম্পদ ট্যাক্স রিটার্নে উল্লেখ না করলে সেটি কালো টাকা হয়ে যায়। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হারে জরিমানা দিয়ে সেই টাকা সাদা করা যেতে পারে। কিন্তু ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকা সাদা করা হলে দুদক সেই ক্ষেত্রে প্রশ্ন করবে এবং আইনি ব্যবস্থা নেবে। সুশীল সমাজ, এনজিওগুলোর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কৌশলগত পরিকল্পনা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকের টাকা কোথায় গেছে, কার কাছে গেছে সেটি এখনও নির্দিষ্ট করা যায়নি। তাই বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের ৫৬ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ আল জাজিরায় বাংলাদেশ সম্পর্কিত খবর নিয়ে তিনি বলেন, ‘মুখের কথায় কিছু করা যাবে না। এক্ষেত্রে আমলযোগ্য দুর্নীতির প্রমাণ পেতে হবে। কেউ এ সম্পর্কিত প্রমাণ জমা দিলে সেটি পর্যালোচনা করে দেখা হবে।’ দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি এবং কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম আগামী ১৩ মার্চ কমিশন থেকে বিদায় নেবেন। গত পাঁচ বছরে দুদকের কার্যক্রম নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করা সাংবাদিকদের সঙ্গে তার সৌহার্দপূর্ণ একটি ভাব গড়ে উঠেছে।’ বিদায়ের পরও যেন এই সর্ম্পক বজায় থাকে- এই প্রত্যাশা করেন তিনি। দুদকের ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে মামলা এবং চার্জশিটের সংখ্যা কিছুটা হলেও বেড়েছে। মামলা এবং চার্জশিটের গুণগত মান নিশ্চিত করার কারণেই কমিশনের মামলায় সাজার হার ৬৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমরা চাই কমিশনের মামলায় সাজার হার হবে শতভাগ। তবে ২০২০ সালে কমিশনের মামলায় সাজার হার ৭৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ব্রিফিংকালে দুদকের সচিব ড. মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার এবং প্রতিরোধ ও গবেষণা উইংয়ের মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল উপস্থিত ছিলেন। বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৪ বছরে কমিশনের অনুমোদন করা চার্জশিটের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ২০১৮ সালের চেয়ে চার্জশিট অনুমোদনের সংখ্যা সামান্য বেড়েছে। কমিশন মানসম্মত মামলা তদন্তের বিষয়ে আরও সতর্কতা অবলম্বন করায় অভিযোগপত্রের সংখ্যা খুব বেশি বাড়েনি। ২০১৯ সালে ১৬টি ফাঁদ মামলা পরিচালনা করা হয়েছে। ফাঁদ মামলা এর আগের বছরের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। দুদকের গত পাঁচ বছরের মামলায় বিচারিক আদালতের রায়গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৫ সালে সাজার হার ছিল ৩৭ শতাংশ, ২০১৬ সালে ছিল ৫৪ শতাংশ, ২০১৭ সালে ছিল ৬৮ শতাংশ, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ছিল ৬৩ শতাংশ। এ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৭ সাল থেকে কমিশনের করা মামলায় সাজার হার প্রায় স্থিতিশীল রয়েছে। আর গত দুই বছরে সাজার হার একই রয়েছে। এটা কমিশনের ইতিবাচক অর্জন। কারণ ২০১৫ সালে যেখানে মামলায় সাজার হার ছিল মাত্র ৩৭ শতাংশ, সেখানে ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ধারাবাহিক মামলার সাজার হার ৬০ শতাংশের ওপরে। যদিও কমিশন চেষ্টা করছে তাদের মামলায় শতভাগ সাজা নিশ্চিত করার। কমিশনের দায়ের করা মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত মামলায় শতভাগ সাজা হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে সরকারি ও ব্যাংক কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি। এবারের প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট ভাবে ১৪টি খাত বা বিষয় ছাড়াও বিবিধ সুপারিশে আরও ন্যূনতম ৯টি ইস্যু বা খাতভিত্তিক সুপারিশ পেশ করেছে কমিশন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খাতগুলো হচ্ছে- স্থায়ী সিভিল সার্ভিস সংস্কার কমিশন গঠন, আয়কর, কাস্টমস, ভ্যাট সংক্রান্ত, স্বাস্থ্য খাত, সড়কে যানবাহন ব্যবস্থাপনা, ওষুধ শিল্প, নদী দখল, নিষিদ্ধ পলিথিনের আগ্রাসন, দুর্নীতিমুক্ত ভূমি রেজিস্ট্রেশন, ইটভাটা স্থাপন সংক্রান্ত, দীর্ঘমেয়াদি নৈতিকতার বিকাশে বিএনসিসি, স্কাউটিং ও গার্লগাইডের কার্যক্রম, সরকারি পরিষেবা মধস্বত্বভোগী, ওয়াসা, ন্যায়পাল নিয়োগ, পরীক্ষার মাধ্যমে নবম গ্রেড থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ইত্যাদি। Share this:FacebookX Related posts: আইজিপি হচ্ছেন বেনজীর আহমেদ ছুটি বাড়ল ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা সেতু ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা ৩৮তম বিসিএসের ফল প্রকাশ: নিয়োগ পাচ্ছেন ২২০৪ জন ক্যাডার বাংলাদেশে আবিষ্কার করোনার টিকা ৬ মাসের মধ্যে বাজারে আনার আশা করোনায় ঢাকা বিভাগে বেশি প্রাণহানী আজ চন্দ্রগ্রহণ, জেনে নিন কখন যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আল্লামা শফী করোনায় মৃত্যুর মিছিলে আরও ৩২ জন ‘উচ্ছেদ অভিযান দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তির নয়’ নতুন বছরে ভেদাভেদ ভুলে জোরদার হোক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আয়েশা খানমের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক SHARES Matched Content জাতীয় বিষয়: ওসি নিয়োগের সুপারিশপুলিশ ক্যাডার থেকে