এক ফোনেই কেজিতে ৩০ টাকা বাড়ে পেঁয়াজ

প্রকাশিত: ৫:২৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০

নিউজ ডেস্ক : ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আসে বাংলাদেশে। তার সিংহভাগ আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। আমদানিকারকরা একটি নিদিষ্ট দাম নির্ধারণ করে দিয়ে সে পেঁয়াজ চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পাঠান। কিন্তু বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ১৫ জনের একটি চক্র প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন ৩০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া যারা পেঁয়াজ মজুত করেন তারা দাম বাড়িয়ে দেন আরো এক বা দুই গুণ। এভাবেই ২০ টাকার পেঁয়াজ বেড়ে হয় ৫০ টাকা।

গত এক সপ্তাহ আগেও চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ মান ভেদে ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ী বলেন, বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে আমরা পেঁযাজের দাম বাড়াই। কোনো কোনো সময় প্রতি কেজি পেঁয়জের দাম ৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পেঁয়াজগুলো বন্দর থেকে এখানে আসার আগেই আমাদের ফোন করে একটি নির্দিষ্ট দাম নির্ধারণ করে দেন। আর আমরা চাইলে সেখানে আরো কিছু অতিরিক্ত দাম যোগ করে দেই।

জানা গেছে, খাতুনগঞ্জে প্রধানত হিলি স্থলবন্দর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আসে। গত বছরের শেষের দিকে আমদানি করা প্রতি কেজি ৪২ টাকা দরে কেনা পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জের আড়তে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রির প্রমাণ পায় জেলা প্রশাসন। এতে খাতুনগঞ্জ ও কক্সবাজারের ১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। এবারও দাম বাড়ার পেছনে তাদের কারো সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে জেলা প্রশাসন।

শুধু ফোনে দাম নির্ধারণ করে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের বাজার অস্থির করার পেছনে আমদানিকারকদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসন। হিলি স্থলবন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে আমদানিকারকদের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ আমদানিতে জড়িত আছেন ১৫ জন। তারা হলেন- মেসার্স রায়হান ট্রেডার্সের মো. শহিদুল ইসলাম, মেসার্স এমআর ট্রেডার্সের মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, মেসার্স সততা বাণিজ্যালয়ের মো. বাবলুর রহমান, মেসার্স সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজের মো. সাইফুল ইসলাম, মেসার্স জগদীশ চন্দ্র রায়ের শ্রীপদ, মেসার্স মারিয়া করপোরেশনের মো. মোবারক হোসেন, মেসার্স টুম্পা ইন্টারন্যাশনালের মো. মামুনুর রশিদ লেবু, মেসার্স গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজের মো. লাবু মল্লিক, মেসার্স সালেহা ট্রেডার্সের মো. সেলিম রেজা, মেসার্স ধ্রুব ফারিহা ট্রেডার্সের মো. নাজমুল আলম চৌধুরী, মেসার্স সাদ ট্রেডার্সের মো. গোলাম মোর্শেদ শাহিন, মেসার্স বাবু এন্টারপ্রাইজের মো. মাহফুজার রহমান বাবু, মেসার্স লাবীব ট্রেডার্সের মো. নুর আলম বাবু, মেসার্স মনির ট্রেডার্সের মো. তোজাম্মেল হোসেন এবং মেসার্স তুবা এন্টারপ্রাইজের মো. শাহজামাল হোসেন। এসব আমদানিকারকের মধ্যে কারা ফোনে ফোনে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বাড়ান এবং কারসাজিতে কারা জড়িত তা চিহ্নিত করতে মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, সব তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করা হবে।

তিনি আরো বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও বাড়তি লাভের আশায় হঠাৎ আমদানিকারকের এক ফোনেই কেজিতে ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ পেয়েছি আমরা। লেনদেনের কাগজপত্র নিজেদের কাছে না রেখে আমদানিকারকের ফোন কলে দাম নির্ধারণ করে অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছেন খাতুনগঞ্জের কিছু ব্যবসায়ী ও আড়তদার। হিলি স্থলবন্দরের ১৫ আমদানিকারকের মধ্যে কারা খাতুনগঞ্জে কারসাজি করছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উমর ফারুক বলেন, কাঁচাপণ্যের ব্যবসায় জড়িত খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ী বলেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজিতে জড়িত আমদানিকারকদের চিহ্নিত করা গেলে ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের নামও বেরিয়ে আসবে।