‘দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যদের শিক্ষা দিতে পারে’ দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম প্রকাশিত: ৮:১৮ অপরাহ্ণ, জুন ৪, ২০২০ অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দু’টি আঘাত সুপার ঘূর্ণিঝড় “আম্ফান” ও “কোভিড -১৯” সফলভাবে মোকাবেলার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ অন্যদের শিক্ষা দিতে পারে। মর্যাদাপূর্ণ ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে এই বিষয়ে তাঁর নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। “ঘূর্ণিঝড় ও করোনা ভাইরাস মোকাবেলা: আমরা কীভাবে মহামারী চলাকালীন লক্ষ লক্ষ লোককে সরিয়ে নিয়েছি” শীর্ষক নিবন্ধটি বুধবার গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নিবন্ধে বলেছেন, বাংলাদেশ সুপার-সাইক্লোন ‘আম্ফান’ এবং কোভিড -১৯ এর মতো দু’টি বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আমরা অন্যদেরকে অনুরূপ বিপদ মোকাবেলায় পাঠ দিতে পারি। অভিযোজন সংক্রান্ত গ্লোবাল সেন্টারের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার প্যাট্রিক ভেরকুইজেনের সঙ্গে যৌথ নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন যে, কোভিড-১৯ মহামারীতে ব্যাপক জনসাধারণের সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে সুপার সাইক্লোন আম্ফান আঘাত হানার আগেই কত দ্রুত ও সাফল্যের সাথে বাংলাদেশ দু’ লক্ষাধিক লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছিল। নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ভারত মহাসাগরের উপর তৈরি হতে শুরু করার ফলে নষ্ট করার মতো কোনও সময় ছিল না। বাংলাদেশে সামাজিক দূরত্বের কথা বিবেচনা করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো নির্মিত হয়নি। তাই দেশ একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে: কীভাবে ২.৪ মিলিয়ন মানুষকে কোভিড -১৯ এর মতো আরও বড় বিপদে না ফেলে ঝড়ের ধ্বংসাত্মক পথ থেকে সরিয়ে নেয়া যায়।’ ‘সর্বোত্তম সময়ে বিপুল সংখ্যক লোককে সরিয়ে নেয়া সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের বিষয়। লোকজন নিরাপত্তা ছাড়া তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে নারাজ। এবার চ্যালেঞ্জ ছিল আরও বেশি জটিল। কারণ লোকজন করোনা ভাইরাসে আকান্ত হওয়ার ভয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছিল। প্রথম সাড়াদানকারীদেরকে নিশ্চিত করতে হচ্ছিল যে, আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়ার ফলে সংক্রমণ ঘটবে না।’ বাংলাদেশ অল্প সময়েই, সামাজিক দূরত্বের কিছুটা ব্যবস্থার সাথে বিদ্যমান ৪ হাজার ১৭১টি আশ্রয়কেন্দ্রের অতিরিক্ত প্রায় ১০ হাজার ৫শ’ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে। নিবন্ধে তাঁরা লিখেছেন যে, ‘উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে ৭০ হাজারের বেশি “ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি” স্বেচ্ছাসেবীরা সক্রিয় ছিল।’ নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, ‘এ সময় মাস্ক, পানি, সাবান এবং স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়েছে। রফতানি আদেশ বাতিল হওয়ার ঝুঁকি সত্ত্বেও পোশাক শিল্প ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে সম্পৃক্ত হয়েছে।’ নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক এন্ড এটমোসফেরিক থেকে দেয়া পূর্বাভসের প্রেক্ষিতে “মহামারীর তীব্রতার মুহূর্তে এসে আম্ফানের মতো একটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সময় প্রশাসন মানবজাতির সামনে উপস্থিত জলবায়ুর ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে মনোনিবেশ করে।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক এন্ড এটমোসফেরিক প্রশাসন পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, ‘আটলান্টিক ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে পানির অস্বাভাবিক গরম তাপমাত্রার কারণে এই বছরের হারিকেন মওসুম রেকর্ড অতিক্রম করবে। এছাড়া কোভিড -১৯-এর কারণে বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে মানুষকে সুরক্ষিত রাখার কাজটি অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠবে।’ শেখ হাসিনা যৌথ নিবন্ধে আরও লিখেছেন, ‘৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর নেটওয়ার্ক সহ বাংলাদেশের দুর্যোগ প্রস্তুতির ফলে আম্ফানের আঘাতে ভারত ও বাংলাদেশে ১শ’রও কম মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যে কোনও মৃত্যু দু:খজনক। তবুও, দেশের আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা এবং সুপরিকল্পিতভাবে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার অনুশীলন বিগত বছরগুলোতে হাজার হাজার মানুষ জীবন রক্ষা করেছে।’ প্রিন্স অফ ওয়েলস প্রিন্স চার্লস এর আগে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় পদক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন। গত ৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘আপনি এই মারাত্মক রোগের প্রাদুর্ভাবের প্রথম পর্যায়ে কীভাবে এই রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছেন এবং মৃতের সংখ্যা এতো কম রাখতে পেরেছেন তা শুনে আমি অভিভূত হয়েছি।’ ক্লাইমেট ভালনেরাবল ফোরামের সভাপতি শেখ হাসিনা নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের তাৎক্ষণিক প্রভাব মোকাবেলা করা যথেষ্ট নয়; জনগোষ্ঠীকে পরবর্তী ঝড়ের জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুত রাখা দরকার।’ নিবন্ধে আরও বলা হয়, ‘অবকাঠামো পুননির্মাণ ও জীবিকা নির্বাহ করা অবশ্য অন্য বিষয়। বাংলাদেশ এর আগে অনেকবার ঘূর্ণিঝড়ের পর পুনর্গঠন করেছে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশের ভূমির দুই-তৃতীয়াংশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ মিটারেরও কম উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে পুননির্মাণ একটি বড় কঠিন কাজ।’ ‘জলবায়ু সংকট এ কাজকে আরও কঠিন করে তুলেছে। ঘূর্ণিঝড়গুলো দিন দিন আরও তীব্র ও ঘন ঘন তৈরী হচ্ছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে কূপ ও কৃষি জমি বিষাক্ত হয়ে ওঠছে। মহামারী ও গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটের অর্থ হচ্ছে সরকারকে এখন একই সঙ্গে স্বাস্থ্য, জলবায়ু এবং অর্থনৈতিক জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।’ ভারত ও বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ক্ষয়ক্ষতির উল্লেখ করে নিবন্ধে বলা হয়, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফান যে ক্ষতি করেছে তার পরিমাণ আনুমানিক ১৩ বিলিয়ন ডলার (১০.৪ মিলিয়ন পাউন্ড)।’ ‘বাংলাদেশে এই ঝড়ে ৪১৫ কিলোমিটার রাস্তা, ২০০ টি সেতু, কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, বিস্তীর্ণ কৃষিজমি এবং মৎস্য সম্পদ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। জলোচ্ছাস রোধের জন্য তৈরী করা ১৫০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।’ যেকোনও দুর্যোগের জন্য পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, ‘এই ঝড় বিপর্যয়কর হয়েছে। তবে পরিকল্পনা থাকলে দেশগুলো বিপর্যয় মোকাবেলায় আরও ভালভাবে প্রস্তুত থাকে। ”প্রাকৃতিক দুর্যোগের তাৎক্ষণিক প্রভাব মোকাবেলা করার পক্ষে এই প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়; পরবর্তী ঝড়ের জন্য লোকজনকে আরও ভালভাবে প্রস্তুত রাখ দরকার।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিবন্ধে আরও বলেছেন যে, ‘বাংলাদেশ ২০১৪ সালে ক্লাইমেট ফিসক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন করেছে। জলবায়ু সহিষ্ণুতা তহবিল গঠনের উদ্যোগ গ্রহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ।’ তারা নিবন্ধে লিখেছেন যে, ‘এই কাঠামোতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী ব্যয়ের জন্য প্রাক্কলন করা হয়েছে এবং কৃষি, গ্রহায়ন ও জ্বালানি সহ ২০ টি মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু সম্পর্কিত ব্যয় পর্যালোচনা করা হয়েছে।’ এতে আরও বলা হয়েছে, ‘৩০ মিলিয়ন লোকের বাসস্থান এই বদ্বীপ অঞ্চলের জন্য ২০১৮ সালে আট দশকের জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ অনুযায়ী জলোচ্ছাস মোকাবেলায় আরো উচ্চ বাঁধ তৈরির মতো অবকাঠামো শক্তিশালীকরণের উপর জোর দেয়া হয়েছে।’ নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘আম্ফানের পরে স্কুল, হাসপাতাল ও ঘরগুলো আরও মজবুত করে পুনরায় তৈরি করতে হবে, যাতে এগুলো উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস প্রতিরোধ করতে পারে এবং আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে দ্বিগুণ লোক ধারণ করতে পারে।’ ‘বিশ্বজুড়ে, কোভিড-১৯ সরকারী অর্থায়নে একটি বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে আমরা বিশ্বাস করি, দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক কাঠামো এবং জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা এসব দেশকে দুর্যোগ মোকাবেলায় আরও ভাল সহায়তা দেবে। স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত।’ ‘এই কারণেই ডেল্টা পরিকল্পনায় জমি ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পসমূহ এবং জনগণকে স্বাস্থ্যবান ও আরও স্বচ্ছল করার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিটি ধ্বংসাত্মক ঝড়ের পরে রোগ প্রতিরোধ করতে দূষিত পানি ফিল্টার করার জন্য সৌরচালিত হোম কিট ব্যবহার করা যেতে পারে।’ নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, ‘এই বছর কেবল বাংলাদেশই স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক ও জলবায়ু জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে না। তাই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সারা বিশ্বের সাফল্য থেকে শিখতে এবং একে অপরকে সহায়তা করতে পারি। একসঙ্গে আমরা আরও শক্তিশালী ও আরও সহিষ্ণু হয়ে ওঠতে পারবো।’ সূত্র, বাসস। Share this:FacebookX Related posts: আইজিপি হচ্ছেন বেনজীর আহমেদ সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করোনায় মৃত্যুর মিছিলে আরও ৪১ জন করোনায় ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর মিছিলে ৩৮ জন কে কি লিখল তা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না: জনপ্রশাসনকে প্রধানমন্ত্রী কাপ্তাইয়ের পর রাঙ্গামাটি মৎস্য ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদা দাবি, বিপাকে মৎস্যজীবীরা করোনায় মৃত্যু কমলেও বেড়েছে আক্রান্ত বই উৎসবের উদ্বোধন সকালে করোনায় আক্রান্ত ১০১৪ জন দেশে কোনো পরিবার আর গৃহহীন থাকবে না : পলক ২০২৫ সালের মধ্যেই সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাবে একুশের প্রথম প্রহর থেকে বাংলায় এসএমএস ২৫ পয়সা SHARES Matched Content জাতীয় বিষয়: দুর্যোগবাংলাদেশ অন্যদেরমোকাবেলার ক্ষেত্রেশিক্ষা দিতে পারে'