ডাক্তার-নার্সের অ্যাপ্রোন পরে দুর্ধর্ষ চুরি করতেন মিম-তন্ময়রা দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম প্রকাশিত: ৮:৩৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৬, ২০২৩ স্টাফ রিপোর্টার : জাহেদুল ইসলাম পেশায় ব্যবসায়ী। থাকেন রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-১ এর তিন নম্বর সড়কের কেএফসি গলিতে। গত ২৫ জানুয়ারি সকালে ভবনের সাততলা থেকে স্কুলগামী মেয়েকে নামিয়ে দিতে বের হন। মেয়েকে স্কুলের গাড়িতে তুলে দিয়ে বাসায় ফিরতে তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিট সময় লেগে যায়। এই অল্প সময়ের মধ্যেই তার বাসা থেকে চুরি যায় একটি ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল ফোন। বাসায় ফিরে তন্নতন্ন করে খুঁজেও ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন না পেয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তল্লাশি করেন। সেখানে দেখা যায় ডাক্তার ও নার্সের অ্যাপ্রোন, মুখে মাস্ক এবং গলায় ভুয়া আইডি কার্ড পরা এক তরুণী তখন বাসায় প্রবেশ করেছিলেন। তরুণীর পরিচয় সম্পর্কে বাসার দারোয়ান জানান, ওই তরুণী নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়েছিলেন। বলেছিলেন তিনি ফিজিও থেরাপিস্ট। ভবনের সাতলায় জাহেদুল ইসলামের মা অসুস্থ। তাকে থেরাপি দেওয়ার জন্য এসেছেন। এ পরিচয় দেওয়ার পর দারোয়ান তাকে বাসায় প্রবেশের অনুমতি দেন। চুরির এ ঘটনায় কালক্ষেপণ না করে গুলশান মডেল থানায় অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী জাহেদুল। পরে মামলাও দায়ের করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে গুলশান থানা পুলিশ জানতে পারে অভিজাত পাড়ায় এই চুরির ঘটনার লোমহর্ষক বিবরণ। এরপর গুলশান থানাধীন ২ নম্বর পুলিশ চেকপোস্টের সামনে থেকে কথিত চিকিৎসক নামে চোরচক্রের হোতা আফসানা আক্তার এশা ওরফে মিমকে (২২) গ্রেফতার করে পুলিশ। ডিএমপির গুলশান বিভাগ পুলিশ জানায়, ডাক্তার ও নার্সের অ্যাপ্রোন, মুখে মাস্ক এবং গলায় ভুয়া আইডি কার্ড পরে অভিজাত পাড়ায় এভাবেই অভিনব কায়দায় বিভিন্ন সময় চুরি করে আসছিলেন মিম। মূলত ভুয়া চিকিৎসকের বেশ ধরে বাসায় ঢুকে চুরি করতেন তিনি। তার নামে গুলশান থানাসহ বিভিন্ন থানায় ১৪টি মামলা এবং দুটিতে সাজা পরোয়ানা রয়েছে। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়ার পর কথিত চিকিৎসক আফসানা আক্তার এশা ওরফে মিমসহ সংঘবদ্ধ চোরচক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে গুলশান থানা পুলিশ। বুধবার (৫ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে চোরাই ছয়টি ল্যাপটপ, ১০টি মোবাইল ফোন ও দুটি ব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার অন্যরা হলেন তন্ময় বিশ্বাস (৩০), স্বপন শেখ (৪৫), নুরুল ইসলাম (২৭), কলিম উদ্দিন কালু ওরফে কলিউল্লাহ (৪০) ও মোখলেছুর রহমান (৫১)। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আ. আহাদ। তিনি বলেন, আমরা একটি চুরির তদন্ত করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনার তথ্য পাই। চোরচক্রের হোতা মিম খুবই ধূর্ত। তার এসব অপকর্মের প্রধান সহযোগী গ্রেফতার বয়ফ্রেন্ড তন্ময়। ডিসি আ. আহাদ আরও বলেন, কোনো বাসায় চুরির আগে রেকি করে চোরচক্রের সদস্যরা। বিশেষ করে খোঁজ রাখে কোন বাসায় অসুস্থ ও বৃদ্ধ বাসিন্দা আছেন, কোন বাসায় কখন মানুষ কম থাকে, কখন কারা বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যান। সকাল সময়টা চুরির জন্য টার্গেট করে তারা। রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি ও উত্তরার মতো অভিজাত এলাকাগুলো তাদের প্রধান টার্গেট। এসব এলাকায় এমনও দিন গেছে একাধিক চুরি সংঘটিত করেছে চক্রটি। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা সবাই সংঘবদ্ধ চোরচক্রের সক্রিয় সদস্য। মূলহোতা মিম চক্রের যোগসাজশে কখনো ডাক্তার কখনো নার্স পরিচয় দিয়ে বাসায় প্রবেশ করেন। মাত্র ২-৩ মিনিটের মধ্যে ফাঁকা বাসা বা অসুস্থ বাসিন্দার উপস্থিতিতে মোবাইল ল্যাপটপ নিয়ে সটকে পড়েন। আ. আহাদ বলেন, বাসায় প্রবেশের আগে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে চোরচক্র। সেসব তথ্যের সঙ্গে মিল রেখে নিজেদের পরিচয় দেয়। নারী চিকিৎসক বা নার্স পরিচয় দেওয়া, ডাক্তার বা নার্সের অ্যাপ্রোন, মুখে মাস্ক এবং গলায় আইডি কার্ড পরা দেখে অনেক বাসার দারোয়ান তাদের কমই সন্দেহ করেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দিনের পর দিন বিভিন্ন বাসায় চুরি করে আসছিল চক্রটি। গুলশান বিভাগের ডিসি আরও বলেন, মিমসহ গ্রেফতাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানাসহ বিভিন্ন থানায় মোট ১৪টি নিয়মিত মামলা ও দুটি সাজা পরোয়ানা রয়েছে। গুলশান, নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও থানায় একবার করে মোট চারবার গ্রেফতারও হয়েছিল মিম। এছাড়া মোখলেছুর রহমান তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একবার গ্রেফতার হয়েছিল। পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, কোনো বাসায় ডাক্তার বা নার্স পরিচয়ে কেউ ঢুকতে চাইলেই প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। যে কেউ আসুক না কেন, পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তবেই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া উচিত। বাসা বা ভবন মালিকদের সেটা নিশ্চিত করতে হবে, দারোয়ানদের তা জানাতে হবে। ভুক্তভোগী জাহেদুল ইসলাম বলেন, তাজ্জব হয়ে গেছি, এভাবেও চুরি হতে পারে। আমার বাসা অনেক নিরাপত্তাবেষ্টিত। বাসার দারোয়ান, সিসিটিভি সবই ছিল। আমার মা অসুস্থ। তাকে মাঝে মধ্যে থেরাপি দিতে হয়। সেই তথ্য বলে ফিজিও থেরাপিস্ট পরিচয়ে বাসায় প্রবেশ করে মিম। মাত্র তিন মিনিট বাসায় ছিলাম না। এরমধ্যে মোবাইল-ল্যাপটপ নিয়ে লাপাত্তা চোর। Share this:FacebookX Related posts: দেশে ডিভোর্সের হার অনেক বেড়েছে, এটা খুবই লজ্জাজনক: রাষ্ট্রপতি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর গুজবে কান দেবেন না, ত্রাণ বিতরণে কোন দুর্নীতি সহ্য করা হবে না : প্রধানমন্ত্রী মাদকাসক্ত ও পয়সা নেয়া পুলিশের জন্য শ্রীঘর নির্ধারিত: আইজিপি চাকরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে হচ্ছে ডোপ টেস্ট নীতিমালা দেশে জানুয়ারির শেষে কিংবা ফেব্রুয়ারিতে ভ্যাকসিন আসবে চতুর্থ ধাপে ৫৫ পৌরসভায় ভোট রোববার পটিয়ায় কাউন্সিলর প্রার্থীর ভাই গুলিতে নিহত ভোট ভালো হয়েছে: ইসি সচিব আগামী এপ্রিলে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করার চিন্তা বাংলাদেশ-ভারত শক্তিশালী অংশীদারত্ব গড়ে তুলেছে ‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান কখনো ভুলবে না’ SHARES Matched Content জাতীয় বিষয়: অ্যাপ্রোন পরেডাক্তার-নার্সেরদুর্ধর্ষ চুরি করতেনমিম-তন্ময়রা