প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে যাবার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ৪:৪৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : দালালের খপ্পরে পড়ে সোনার হরিণ ধরতে ভিটে-মাটি বিক্রি করে কেউ যেন আর প্রবাসের পথে পাড়ি না জমান সে জন্য যুব সমাজকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রয়োজনে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে যাবার আহ্বান জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার সকালে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেন্টেনিয়াল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ সহ দেশের বিভিন্ন উপজেলায় নির্মিত ২৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি আহ্বান জানান।

গণভবন থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে বিনা জামানতেও ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা রয়েছে। ভিটে-মাটি বিক্রি করে প্রবাসে গেলে তারা বিপদে পড়ে এবং সরকারের পক্ষ থেকেই তাদের উদ্ধার করতে হয় অথবা ভুমধ্যসাগরে তাদের সলিল সমাধি হয় (অবৈধ ভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে অভিবাসন খুঁজতে গিয়ে)। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’

তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল নয়, রপ্তানী নির্ভর বিদেশি মুদ্রা অর্জনের দিকে আমাদের আরও বেশি মনযোগ দিতে হবে। আমাদের পণ্য যাতে বিদেশে রপ্তানী হয় সে জন্য পণ্যের বহুমুখীকরণ করা এবং পণ্যের জন্য নতুন নতুন বাজার আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। যেখানে যে পণ্যের চাহিদা সেই ধরনের পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদনের মাধ্যমে রপ্তানী করেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পদক্ষেপ আমরা নেব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের একটা কথা সবসময় মাথায় রাখতে হবে, পরনির্ভরশীলতা আমাদের কমাতে হবে এবং নিজেদের পায়ে নিজেরা যেন দাঁড়াতে পারি সে ব্যবস্থাটাই করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এটা একটু কম-বেশি হবেই। কিন্তু আমাদের নানা লোকজন রয়েছে যারা এটা নিয়ে নানা রকম মন্তব্য এবং গুজব করে বেড়ায়। আমি মনে করি আমাদের ৩ মাসের খাদ্য কেনার যে রিজার্ভ সেটা থাকলেই যথেষ্ট। তবে ভোগ্যপণ্য এবং খাদ্যপণ্যে পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে, নিজের দেশে উৎপাদন বাড়াতে হবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের যে উর্বর জমি ও জনসংখ্যা রয়েছে তাতে উদ্যোগ নিলে আমরা সেটা করতে পারি। শুধু উৎপাদন নয় খাদ্যপণ্য সংরক্ষণ আধুনিকীকরণ করতে হবে এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পও ব্যাপক ভাবে গড়ে তুলতে হবে। এতে করে দেশের মানুষের জন্য যেমন একটা বাজার তৈরি হবে আবার বিদেশেও আমরা রপ্তানী করতে পারবো।’

বিদেশে দক্ষ কর্মী প্রেরণে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে আরো স্কিল সংযোজনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যানবাহন চালক হিসেবে যে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে তার সঙ্গে ভারি যানবাহন চালনার বিষয়টিও যুক্ত করতে হবে। এতে করে আরও ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে বলেও আমি মনে করি।’

গৃহকর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে বিদেশ গমনেচ্ছুরা যেন সঠিক ভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তা নিশ্চিত করার জন্যও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘পাসপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম বাজার খুঁজবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় সার্টিফিকেট দেবে আর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় মানুষ প্রেরণ করবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়কে যৌথ ও মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে। এসব কাজের জন্য প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে একটি কমিটি করে স্ব উদ্যোগে কাজ করারও পরামর্শ দেন তিনি। তাহলে সব কাজগুলো এক জায়গায় বসে সহজেই করা সম্ভব হবে। তিনি এর সঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়কেও সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে ৪০টি টিটিসি ও একটি আইএমটি স্থাপিত হলে মোট ১০৪টি টিটিসি এবং সাতটি আইএমটিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে এবং মোট প্রশিক্ষণ প্রদানের সক্ষমতা বছরে নয় লাখে উন্নীত হবে। তাছাড়া সরকারের প্রায় ২৩টি মন্ত্রণালয় থেকেই কোন না কোন ভাবে জনশক্তি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া সশস্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে তারাও রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। এটাকেও মূল রেমিট্যন্সের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।

প্রবাসী কল্যাণ সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন এবং বিএমইটির মহাপরিচালক মো.শহিদুল আলম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে নবনির্মিত টিটিসিগুলোর ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে চলমান দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দোরগোঁড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রথম পর্যায়ে গৃহীত ‘৪০টি উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও চট্টগ্রামে ১টি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর একনেকে অনুমোদন হয়। বর্তমানে প্রকল্পটি এক হাজার ৬৬৭ কোটি সাত লাখ ৯২ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ৪০টির মধ্যে ইতোমধ্যে নির্মিত ২৪টি উপজেলায় ২৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আজ প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। অবশিষ্ট ১৬টির নির্মাণ কাজও শিগগিরই সম্পন্ন হবে।

২৪টি টিটিসি যেসব উপজেলায় হচ্ছে সেগুলো হলো- গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেন্টেনিয়াল টিটিসি, রংপুরে পীরগঞ্জ ও গঙ্গাচড়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পাবনার সুজানগর, নরসিংদীর মনোহরদী, সিরাজগঞ্জ সদর ও কামারখন্দ, মুন্সিগঞ্জ সদর, দিনাজপুরের খানসামা, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ও নগরকান্দায়, খুলনার দিঘলিয়ায়, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে, যশোরের কেশবপুরে, চট্টগ্রামের রাউজান ও সন্দ্বীপে, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ও চৌদ্দগ্রামে, গাজীপুরের কাপাসিয়ায়, শেরপুর সদরে, টাঙ্গাইলের কালিহাতী ও নাগরপুরে, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা এবং কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলায়। বাসস।