বিদেশি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ২:৩৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদেশি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ উদ্বোধনকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনা করলে, যারা বিনিয়োগ করতে আসবেন, তারা শুধু বাংলাদেশ পাবেন না, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাজার ধরার এবং রফতানি করারও সুযোগ থাকবে তাদের। প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের যোগাযোগের একটা সেতু হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে ভবিষ্যতে। যেটা আমাদের দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে আরও সহায়তা করবে।’

তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দর এবং সমুদ্রবন্দরগুলোকে উন্নত করা হচ্ছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক এয়ারপোর্ট হিসেবে গড়ে তুলছি। যাতে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোও ব্যবহার করতে পারে। আমাদের পোর্ট- চট্টগ্রাম পোর্টকে উন্নত করছি, মংলা পোর্ট এবং আমরা নতুন একটা পোর্ট তৈরি করছি- পায়রা পোর্ট, এটাও গভীর বন্দর হিসেবেই ভবিষ্যতে গড়ে উঠবে। তাছাড়া মহেশখালীতেও ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে, সেটাও বলতে গেলে সমুদ্রবন্দর হিসেবে তৈরি হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন ভাবে সুযোগ সৃষ্টি করছি।’

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌপথ, রেলপথ, সড়ক পথ এবং আকাশ পথ সবগুলো যাতে উন্নত হয়, আমরা সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশের উন্নতির জন্য সরকার অবকাঠামোসহ অন্যান্য নীতিগত সহায়তা দিতে অঙ্গিকারাবদ্ধ। বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাদেশে আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি, যেখানে এক কোটির বেশি কর্মসংস্থান হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে নয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদন এবং ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে, যেগুলোতে এরই মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং আরও আট লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে এ পর্যন্ত মোট ২১০ জন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে ২৭.০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছি, যার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১.৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মীরসরাই, সোনাগাজী ও সীতাকুণ্ড উপজেলায় প্রায় ৩৪ হাজার একর জমিতে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ কতটা উন্নত, তা বোঝাতে বিশ্ব ব্যাংকের Ease of Doing Business Index ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ২০১৯ সালে ওই ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান আগের বছরের ১৭৬ থেকে ১৬৮ তে উন্নীত হয়েছে এবং ব্যবসার বিভিন্ন সূচক উন্নয়নে বিশ্বের সর্বোচ্চ ২০টি সংস্কারকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ওই ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান দুই অংকে অর্থাৎ ১০০ এর নিচে নামিয়ে আনার জন্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিশেষায়িত দল গঠন করে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করেছি।’

তিনি বলেন, ‘নতুন নতুন পণ্য আর কি আমরা উৎপাদন করতে পারি এবং আমরা রপ্তানি করতে পারি সেটাও গবেষণা করে বের করতে হবে। আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে এবং কোন কোন দেশে কি কি পণ্যের চাহিদা রয়েছে, সেটা অনুধাবন করে সেসব পণ্য আমরা বাংলাদেশে উৎপাদন করতে পারি কি না দেখতে হবে। কারণ আমাদের রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।’

‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ এর মাধ্যমে দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের নব নব দ্বার উন্মোচিত হবে, রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে, বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সাত দিনব্যাপী এ সম্মেলনে দেশের সম্ভাবনাময় নয়টি খাত যেমন অবকাঠামো, তথ্য প্রযুক্তি, ফিনটেক, চামড়া, ওষুধ, স্বয়ংক্রিয় ও ক্ষুদ্র প্রকৌশল, কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট-বস্ত্র শিল্পসহ অতিচাহিদা সম্পন্ন ভোগ্য পণ্য উৎপাদন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসাকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় সংশ্লিষ্টদের প্রশংসা করেন সরকারপ্রধান।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারেন্স গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মো‌মেন, বা‌ণিজ‌্যমন্ত্রী টিপু মুন‌শি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকা‌রি শিল্প ও বি‌নি‌য়োগ বিষয়ক উপ‌দেষ্টা সালমান এফ রহমান, বা‌ণিজ‌্য স‌চিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।