ভ্যাকসিন নিয়ে হতাশা কেটে যাবে: শারফুদ্দিন আহমেদ

প্রকাশিত: ৮:৪৪ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে হতাশা কেটে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যকরী পদক্ষেপের কারণে অচিরেই এই সমস্যার সমাধান হবে। ইতোমধ্যে চীন থেকে ভ্যাকসিন এসেছে। শীঘ্রই মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি ও বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিন আসবে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেখানে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার কোভিড-১৯ টিকা রয়েছে তা আনতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টারে যারা কোভিড-১৯ প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন তাদের অধিকাংশেরই দ্বিতীয় ডোজের টিকা প্রদান করা সম্ভব হবে। এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বাকীদের যাতে দ্বিতীয় ডোজের টিকা প্রদান করা যায় সেক্ষেত্রেও নানামুখী তৎপরতা চলছে। আশাকরি, তাদেরও দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া সম্ভব হবে।

বুধবার একটি বেসরকারী টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন তিনি। একই দিন বিশ্ব আইবিডি দিবস ২০২১ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জুম মিটিং এ অংশ নেন তিনি।

এই অনুষ্ঠানে নবনিযুক্ত জাতীয় অধ্যাপক ডা. একে আজাদ খান, জাতীয় অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসানসহ বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিশেষজ্ঞগণ অংশগ্রহণ করেন। সভাপতিত্ব করেন অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোঃ আনওয়ারুল কবীর।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ও বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের শিক্ষক ও এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ।

এসময় তিনি বলেন, পেটের প্রদাহজনিত রোগকে অবহেলা নয়, এই রোগ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনা জরুরি। এই রোগে ওজন কমে যায়, খাবারে অনিহা দেখা দেয়, পেটে ব্যাথা হয়, কখনো পায়খানার সাথে রক্ত যায়, কখনো চর্ম রোগ দেখা দেয় ও চোখের সমস্যা হয়। পেটের প্রদাহজনিত রোগ বা আইবিডি সম্পর্কে দুটো বিষয় আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রোনস ডিজিস সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে হবে। দেশের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ এই রোগে ভুগছেন। পরিপাকতন্ত্রের এই রোগের মাধ্যমে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। আইবিডি বা পেটের প্রদাহজনিত এই রোগ নিরাময়যোগ্য না হলেও চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং আগেভাগে রোগটি চিহ্নিত হলে ক্যান্সার থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বলিষ্ঠ পদক্ষেপের কারণে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছিল বলেই মহামারীর এই সময়ে অনেক অসম্ভব কাজ সহজেই সম্পন্ন করা যাচ্ছে। ঘরে বসে বা অফিসে অবস্থান করেই গুরুত্বপূর্ণ সভা, সেমিনারে অংশগ্রহণ করা যাচ্ছে। টেলিমেডিসিনের মতো চিকিৎসাসেবা মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। মাননীয় উপাচার্য আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল রোগের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। করোনার এই মহামারীর সময়ে প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা অত্যন্ত দক্ষ এবং তাদের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

অধ্যাপক ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ উপস্থাপিত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ ‘রিসেন্ট আপডেটস ইন ক্রোন্স ডিজিজ ম্যানেজমেন্ট ’ এ বলা হয়, ক্রোন্স ডিজিজ এক ধরণের প্রদাহজনিত পেটের রোগ। মুখ থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত যে কোনো স্থানে এই রোগ হতে পারে। পেটে ব্যাথা, পাতলা পায়খানা, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ। প্যাশ্চাতে এই রোগ বেশী হলেও বাংলাদেশে এই রোগ এখন আগের থেকে বেশী নির্ণীত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগে প্রতি বৃস্পতিবার আইবিডি ক্লিনিকে এই রোগের রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসা করলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টারে বুধবার চলমান কঠোর লকডাউনের মাঝেও মোট ৩৬৭ জন কোভিড ১৯ এর দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন। গত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ৫৪ হাজার ৫ শত ৬৪ জন এবং আজ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৪১ হাজার ৮ শত জন। বেতার ভবনের পিসিআর ল্যাবে আজ ১৯ মে পর্যন্ত ১ লক্ষ ৪২ হাজার ১ শত ৪১ জনের কোভিড-১৯ টেস্ট করা হয়েছে। বেতার ভবনের ফিভার ক্লিনিকে ১৯ মে পর্যন্ত ৯৫ হাজার ৮ শত ৯ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন।

অন্যদিকে করোনা ইউনিটে ১৯ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত ৮ হাজার ৭ শত ৫ জন রোগী সেবা নিয়েছেন। ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৮ শত ৯৩ জন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৪ হাজার ১ শত ৬৯ জন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ৬০ জন রোগী এবং আইসিইউতে ভর্তি আছেন ৪ জন রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৪ জন।