শরীরে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মাকে নিয়ে হাসপাতালে

প্রকাশিত: ৬:৫৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৮, ২০২১
শরীরে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মাকে নিয়ে হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক : অক্সিজেন সাপ্লাই ঠিক রাখতে শরীরের সঙ্গে গামছা দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেলযোগে নিজের মাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন এক ব্যাংক কর্মকর্তা।

মায়ের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি এ কথা বলেন।

জিয়াউল হাসান কৃষি ব্যাংকের ঝালকাঠি সদর শাখার সিনিয়র কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, কোন পথ না থাকায় মাকে এভাবে অক্সিজেন দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সূর্যপাশা এলাকার বাড়ি থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে আসতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার মা রেহেনা পারভীন ঝালকাঠির নলছিটি বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা। প্রায় ১০ দিন ধরে মায়ের শরীরে জ্বর দেখা দেয়। তাই গত শনিবার (১০ এপ্রিল) চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মা’র কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা দেই। কিন্ত আজ অবধি সে রিপোর্ট পাইনি। এদিকে মায়ের শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার শেবাচিম হাসপাতালে এসে নমুনা দেই। যে পরীক্ষার রিপোর্ট আজ রাতে পেয়েছি। আর নমুনা দিয়ে যাওয়ার সময় একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাই বাড়িতে।

তিনি বলেন, আজ সকাল থেকে অক্সিজেন লেভেল কমে গেলে মায়ের শ্বাসকষ্ট শুরু হলে অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দেয়া শুরু করি। এদিকে নলছিটিতে চিকিৎসকদের তেমনভাবে কোন সহায়তা না পেয়ে বরিশালে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেই। পরে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা থ্রি হুইলারও ম্যানেজ করতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে আমার মোটরসাইকেলে মাকে নিয়ে রওয়ানা দেই। সেসময় কোন ধরনের রিস্ক না নেয়ায় মোটরসাইকেলে উঠে পিঠের সাথে সিলিন্ডারটি বেধে মায়ের মুখে মাস্কটি লাগিয়ে কৃত্রিম অক্সিজেন সিস্টেমও চালু রাখি।

এই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, বড় ভাই মেহেদী হাসান খুলনাতে পুলিশের চাকুরি করেন, বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছোট ভাই রাকিবুল হাসান ছিলেন। যে অন্য একটি মোটরসাইকেলে আমার পাশে পাশে সারা পথটা এসেছেন। তখন আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিলো যে মাকে যেভাবেই হোক হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে, চিকিৎসা করাতে হবে, অন্য কোন কথা মাথায় আনিনি।

তিনি বলেন, আসার পথে পুলিশের চেকপোষ্টে বেশ কয়েক জায়গাতে দাঁড়াতে হয়েছে, তাও আবার ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেলে হেলমেট না থাকার কারণে। কিন্তু তাদের খুলে বলার পর ছেড়ে দিয়েছে। আর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামেন মেট্রো পুলিশের সদস্যরা দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই তারা অক্সিজেন সিলিন্ডারটি দেখতে পেয়েই আমাকে ছেড়ে দেয়।

তিনি আরও বলেন, আর হাসপাতালে আগে থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে সাহায্যের জন্য বলে রেখেছিলাম। তাই আসার সঙ্গে সঙ্গে হয়তো মায়ের জন্য একটি বিছানা পেয়ে গেছি। এছাড়া মায়ের চিকিৎসাও তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে যায়।

জিয়াউল হাসান বলেন, বাবা নলছিটি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মো. হাকিম মোল্লা গত রমজানে ইন্তেকাল করেন। আর আমার একমাত্র অবলম্বন মা, যাকে ঘিরে আমার সকল স্বপ্ন তাকে চোঁখের সামনে অসুস্থ হয়ে পরে থাকতে দেখাটা আমার জন্য খুবই কষ্টের। তাই আমার হাসপাতালে আনা এবং তার চিকিৎসার জন্য আর কোন উপায় ছিল না।সবাই আমার মায়ের জন্য দোআ করবেন যেন তিনি সুস্থ হয়ে আবার স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকেন।

এদিকে, মাকে আনার পথে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের চেকপোষ্টে তোলা সেই ছবিটি যারা দেখেছেন, তারা বলছেন মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসার এমন ‍দৃশ্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো।