সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে : নৌ প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৫:০৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি এবং চলমান বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল আয়োজিত বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা শীর্ষক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শুক্রবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় চারটি গ্রুপে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় আশিজন শিক্ষার্থী অংশ নেন।

নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশ যখন পদ্মাসেতু করছে, অনেকে মানতে পারছে না; পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, সমুদ্র জয় করছে, গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে, যখন মহাসড়ক হচ্ছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে, করোনার মধ্যে যখন আমাদের ৪৩ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ তখন অনেকে সেটা মেনে নিতে পারছেনা। সেটার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী; যে সেনাবাহিনী সারা পৃথিবীতে শান্তি রক্ষায় নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অর্থ হচ্ছে আমাদের সার্বভৌমত্বকে নষ্ট করা; কারণ সেনাবাহিনী আমাদের সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করে। বিভিন্নভাবে সাংবাদিকদের বিদ্রুপ করা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ নেয়ার কারণে এ অবস্থা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সবার, বঙ্গবন্ধুকে খাঁটো করার কোন সুযোগ নাই। পঁচাত্তরের পর বঙ্গবন্ধুকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরকে মঞ্চে বসানো হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা যায়নি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী শুধু বাংলাদেশে নয়; তাবত দুনিয়া পালন করছে। এই করোনার মধ্যেও আমাদের দেশে একের পর এক সরকারপ্রধান, রাষ্ট্রপ্রধানরা বাংলাদেশে আসছেন। সেটা নিয়েও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিনি যেন আসতে না পারেন, সেজন্য সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সুনামগঞ্জে আপনারা দেখেছেন, কী ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এবং আরো ঘটনা ঘটানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে সজাগ থাকতে হবে। আপনারা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে, বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলবেন। এখানে লজ্জার কিছু নেই। এটা গর্বের ও অহংকারের।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার চিন্তা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালেই বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকার-স্বাধীনতার-কথা চিন্তা করেছিলেন। সেই জায়গা থেকে চিন্তা ভাবনা করতে করতে তদানীন্তন পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কমরেড মনি সিংহকে ১৯৫৩ সালে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি বাংলার স্বাধীনতার কথা চিন্তা করছি। বঙ্গবন্ধু ২৩ বছর লড়াই সংগ্রাম করেছেন দেশের ভূখ-ের স্বাধীনতার জন্য। বাংলাদেশের মানুষ যখন (১৯৭০) তাকে ম্যান্ডেট দিয়েছে, তখন তিনি বললেন, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাইনা।

তিনি বলেন, ভারতবর্ষের মহান বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’; আর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব’। পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে তিনি বললেন, ‘রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতির ঋণ শোধ করব।’

খালিদ মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু গণতান্ত্রিক একটি আন্দোলনকে, ৭ই মার্চের ভাষণের পর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে পরিণত করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। কাজেই বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা এক এবং অভিন্ন। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকবান্ধব ছিলেন। পঁচাত্তর পরবর্তীতে সাংবাদিকতাকে দুর্বল করা হয়েছে। সাংবাদিকতার এ জায়গাটাকে কলুষিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমন কোন জায়গা নাই যেখানে তার দৃষ্টি নাই। তার চিন্তা-ভাবনা মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এটা গণমাধ্যমই পারবে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমানকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি দেশে ফিরে বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতার জন্য নয়; দেশের জন্য কাজ করতে এসেছেন। আজকে তিনি দেশ ও মানবতার জন্য কাজ করে প্রমাণ করেছেন। এ মানবিক প্রধানমন্ত্রী আমরা পেয়েছি। এটা ধরে রাখতে হবে।

সাব এডিটররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উল্লোখ করে তিনি বলেন, মিডিয়ায় কোন প্রতিবেদনটি গুরুত্ব পাবে কোনটি পাবেনা সেটি নির্ধারণ করেন সাবএডিটররাই। তারাই মিডিয়ার মেরাডোনা- মেসি। একটি দেশকে এগিয়ে দিতে মিডিয়ায় সাবএডিটররাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি ।

পরে অতিথিরা চিত্রাঙ্কনে অংশ নেয়া সদস্য সন্তানদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। এর আগে নৌ প্রতিমন্ত্রী ঘুরে ঘুরে শিশুদের চিত্রাঙ্কন দেখেন। কডোমো বেবি কেয়ার অনুষ্ঠানে স্পন্সর করে।

সংগঠনের সভাপতি মামুন ফরাজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হৃদয়। ক্রিড়া ও সাংস্কৃতি সম্পাদক তৌফিক অপুর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল মোমেন মিল্টন, প্যান্টাগন ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অন্তু করিম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, কোষাধ্যক্ষ দ্বীপ আজাদ, সাবএডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি কায়কোবাদ মিলন, আলমামুন, নাসিমা সোমা প্রমুখ। এছাড়া সাবএডিটরস কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।