চার দফা দাবিতে উত্তপ্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১০:৩৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১

সময় সংবাদ ডেস্কঃচার দফা দাবিতে শনিবার সারাদিন উত্তপ্ত ছিলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাস। শুক্রবার রাতে জাবি সংলগ্ন গেরুয়া এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের পর শনিবার বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে ক্যাম্পাস।

শনিবার বেলা এগারোটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার, হল খুলে দেওয়া, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা, সংঘর্ষে ক্ষয়ক্ষতির ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন ও বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া এলাকায় স্থায়ীভাবে প্রাচীর নির্মাণ করার

প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানান হয়।

এরপর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীর এবং হল খুলে দেওয়ার দাবি জানান। হল খুলে দেওয়ার আহ্বানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো সাড়া না পাওয়ায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আটটি হলের ফটকের তালা ভেঙে হলের ভেতর প্রবেশ করেন।

দুপুর সাড়ে বারো টার দিকে একটি মিছিল আল-বেরুনী হল ও ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে পৌঁছায়। এরপর শিক্ষার্থীরা হলের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এরপর বেগম খালেদা জিয়া হল, মওলানা ভাসানী হল, জাহানারা ইমাম হল, শেখ হাসিনা হল, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা হল গেটের তালা ভেঙ্গে হলে অবস্থান না করায় মেয়েদের হল গুলোতে পুনরায় নতুন তালা দেন হল কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন জানান, ‘শিক্ষার্থীরা হলের তালা ভেঙেছে। তবে আমরা জেনেছি তারা হলে অবস্থান করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত জানানো হবে। আমরা পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যায় বহন করার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এছাড়া, সরকারের সিধান্ত অনুযায়ী হল খোলার ব্যাপারে সিধান্ত নেওয়া হবে এবং মিছিল,জমায়েত, আবাসিক হলে তালা ভাঙ্গা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিধান্ত বিরোধী উল্লেখ করে সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিধান্তের প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান জানানো হয়। উপাচার্যের নিরাপত্তা জোরদার করতে তার বাসভবনের সামনে পুলিশি নিরাপত্তা জোড়দার করা হয়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে।

এক ছাত্রনেতার চাদাবা‌জির জে‌রে ক্রিকেট খেলা‌কে ইস‌্যু ক‌রে শুক্রবার সন্ধ‌্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের চারটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এ সময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বেশকিছু দোকান ভাঙচুর করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক মাহবুব জানান, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৪০-৪৫ জন শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের অধিকাংশেরই মাথা, হাত, পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ১১ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হয়েছে।