​করোনার দাপট বাড়বে আরও, শিথিলতায় বিপদ

প্রকাশিত: ১১:৫৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০২১

সময় সংবাদ ডেস্ক ; প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ও মৃত্যুর মধ্যেই আরও আতঙ্কের খবর এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস ব্যবস্থাপনা কোর কমিটি করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগজনক পূর্বাভাস দিয়েছে।

করোনায় চলমান সংক্রমণ ও মৃত্যু আগামীতে আরও বাড়বে উল্লেখ করে কমিটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সংক্রমণের চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে এবং নমুনা পরীক্ষা ৩৫ হাজার বা তার বেশি হলে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার করে কভিড রোগী শনাক্ত হতে পারে এবং মৃত্যু হবে গড়ে ১০০ জনের কাছাকাছি।

চলতি মাস (এপ্রিল) থেকে মের মাঝামাঝি অথবা শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণ ও মৃত্যুর এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে চলমান লকডাউন অব্যাহত থাকলে এবং মানুষ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে, মাস্ক ব্যবহার করলে আগামী মাসের মাঝামাঝি অথবা শেষ সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমে আসতে পারে। এসব শর্ত পূরণ না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আট সদস্যের জনস্বাস্থ্যবিদ সমন্বয়ে গঠিত কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট এবং কানাডিয়ান একটি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দল সমন্বিতভাবে বাংলাদেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর পূর্বাভাস নিয়ে কাজ করছে। তাদের পর্যালোচনায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ে এ চিত্র উঠে এসেছে। গত সপ্তাহে করোনার পূর্বাভাস-সংক্রান্ত ওই প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিলের বাকি সময়ে আরও এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ আক্রান্ত এবং এক হাজার ৩০০-এর মতো মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এই ধারা মের মাঝামাঝি পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে আরও দুই লাখ ৮০ হাজার মানুষ আক্রান্ত এবং দুই হাজার ৮০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে। এটি মে মাসজুড়ে চললে আরও প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ আক্রান্ত এবং প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

সংক্রমণের সঙ্গে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল :করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ানক রূপ নিচ্ছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড হচ্ছে। আগের দিনের তুলনায় পরদিন মৃত্যু বাড়ছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন রেকর্ড গড়ে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর এক দিনে এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে গত বুধবার একদিনে ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ৯৪ জন মৃত্যুবরণ করেন।

তবে সংশ্নিষ্টরা বলছেন, নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় গত দু’দিন ধরে কিছুটা কম রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তবে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৩ শতাংশের ওপরে থাকছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি এমন আকার ধারণ করেছে যে, হাসপাতালে শয্যা মিলছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে হাসপাতালে সাধারণ ও আইসিইউর যে শয্যা ফাঁকা থাকার কথা উল্লেখ করা হয়, বাস্তবতার সঙ্গে তার মিল নেই। গতকাল উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৪৮টি এবং আইসিইউ বা সমতুল্য শয্যা ২৭টি ফাঁকা থাকার তথ্য রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে। কিন্তু হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে কোনো শয্যাই ফাঁকা পাওয়া যায়নি।

এদিকে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তত চার সপ্তাহ লকডাউন প্রয়োজন বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সংক্রমণ ও মৃত্যু কমিয়ে আনতে হলে অন্তত চার সপ্তাহ লকডাউন প্রয়োজন। এ লকডাউনের উদ্দেশ্য পরস্পরের থেকে আইসোলেশনে থাকা অর্থাৎ সামাজিক দূরত্বে অবস্থান করা। এটা সংক্রমণ হ্রাসে সহায়তা করে। সুতরাং এটি কার্যকর করতে হবে।’