শতভাগ সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করা সম্ভব নয়: সিইসি

প্রকাশিত: ৩:১৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৬, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘শতভাগ সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করা ইভিএমেও যেমন পুরোপুরি সম্ভব নয়, ব্যালটেও পুরোপুরি সম্ভব নয়।’

বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ইভিএম বাতিল হলে কি করে সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘শতভাগ সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করা ইভিএমেও যেমন পুরোপুরি সম্ভব নয়, ব্যালটেও পুরোপুরি সম্ভব নয়। বিষয়টা আপেক্ষিক হতে পারে। অধিকতর ভালো, যেটা আমরা সবসময় বিশ্বাস করেছিলাম যে ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে ভোটটা অনেক বেশি নিরাপদ ভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হয়। কাজেই শতভাগ নিশ্চিত করার কথা আমি বলতে চাচ্ছি না।’

তিনি বলেন, ‘ইভিএম, ব্যালটটা কিন্তু আমাদের নির্বাচনে মোটেই বড় চ্যালেঞ্জ নয়। আমাদের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সবাই বা প্রধানতম দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না- সেটা হচ্ছে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ইভিএম দিয়ে করলে সেটা কেবল ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াটা হয়, কিন্তু বড় দলগুলো অংশগ্রহণ করলো না, নির্বাচনের লিগ্যালিটি (আইনগত ভিত্তি), ল্যাজিটিম্যাসি (বৈধতা) শূন্যের কোটায় চলে যেতে পারে। পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। সেটা আপেক্ষিক। ল্যাজিটিম্যাসি, লিগেলিটির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। লিগেলি নির্বাচন শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু ল্যাজিটিমিট হয়তো হবে না।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল কি না, সেটা আমরা এখনো বলতে পারবো না। আমরা প্রথম থেকে বলেছি সব দল নির্বাচনে অংশ নিক। সে লক্ষ্যে আমাদের প্রয়াস শেষ পর্যন্ত অব্যহত থাকবে। আমরা জোর করে কাউকে আনতে পারছি না। কিন্তু আপিল আমরা করেই যাবো। আমাদের কথায় যে সাড়া দেবেন তাও নয়। সংকট সরকারের সঙ্গে দলগুলোর হয়ে থাকে। বা সরকারি দলের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের হয়ে থাকে। আমরা বলবো রাজনৈতিক সেই সংকটগুলো আপনারাই নিরসন করে নির্বাচনকে সহজ এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য অনুকূল করে দেন।’

দলগুলো সমঝোতায় ইসির কি ভূমিকা নেওয়ার কোনো উপায় নেই, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, ইসির রুল প্লে (ভূমিকা পালন) করার কোনো সুযোগ নেই। এটাই আমাদের রুল, আপনারা আসেন নির্বাচনে। আপনারা নিজেদের মধ্যে সংলাপ করুন। সংলাপ করে বিরাজমান কোনো দূরত্ব যদি থাকে, কোনো সংশয় যদি থাকে এবং বিরোধ থাকে, তা মিটিয়ে ফেলে নির্বাচন কমিশনের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করুন।’

সমঝোতা না হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এটা আমি বলতে চাচ্ছি না। এক কথায় বলেছি, সবগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে গণতান্ত্রিক চেতনা থেকে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা জনগণের কাছে অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘ইভিএম থেকে আমরা সরে এসেছি সেদিন। এটা নিয়ে বাজারে একটা আছে যে, এটা কি চাপে করা হলো, না ওইটা করা হলো। এটা নিয়ে কিন্তু আমরা কমিশন দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছি। প্রথমে আমাদের কোনো একটা দলের প্রত্যাশা ছিল ৩০০ আসনেই ইভিএম। সবকিছু শুনেটুনে ১৫০টা করার সিদ্ধান্ত নিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইভিএমে ১২০০ নির্বাচন হয়েছে। সেখানে একটাও অভিযোগ পড়েনি যে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। ম্যালফাংশনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ভূত আছে বা ইয়ে আছে কি বলে, দশটা ভোট দিলে তিনটা ভোট থাকে, সাতটা ভোট থাকে না। কাজেই আমরা বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করেছি। এটা একেবারেই সত্য নয়। আমরা পুরোপুরি বিশ্বাস করি কিন্তু আমাদের বিশ্বাস দিয়ে তো হবে না, যদি অংশগ্রহণমূলক না হয়।’

সিইসি বলেন, ‘তবে অর্থ পেলে আমরা ইভিএমে করতাম। নয় হাজার কোটি টাকা চেয়েছিলাম, সেটা যদি পেতাম তা দিয়ে করতে পারতাম। সেটাতে সরকার একমত হয়নি। এরপর মেরামতের জন্য ১২০০ কোটি টাকা চেয়েছিলাম, সেটাতেও বিভিন্ন কারণে একমত হতে পারেনি সরকার। তখন দেখলাম যে আমাদের হাতে থাকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার এ রকম ইভিএম। তখন আমরা দ্বিধাবিভক্ত হলাম। দু’জন কমিশনার জোরোশোরেই বললেন, এই দিয়ে ২৫, ৩০টাই আমরা করে ফেলি। আমরা দেখলাম লাইফটাইম শেষের দিকে, যদি ম্যালফাংশন করে, তাই আমরা ইভিএম থেকে সরে এলাম। দীর্ঘসময় আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা সম্পূর্ণরুপে আমাদের সিদ্ধান্ত। কারও চাপে করা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে। গণতান্ত্রিক ভাবে হয়েছে। দু’জন বলেছে ২০ থেকে ৩০টি হোক। আমরা তিন জন আবার বললাম না, করছি না। যার ফলে এই সিদ্ধান্ত এলো।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না। আমরা চেষ্টা করবো সীমিত সাধ্যের মধ্যে। তবে এটা সত্য ব্যালটে রিগিং প্রতিহত করা যত কষ্টকর, ইভিএমে মোটেই অতটা কষ্টকর নয়। অনেকেই বলেন যে রাতে ভোট হয়ে গেছে, সত্য আমি জানি না। তবে একটা পারসেপশন ক্রিয়েট হয়ে গেছে, রাতেও ভোট হতে পারে। কিন্তু ইভিএম সকাল ৮টার আগে চালুই হবে না। ইট ইজ সো অটোমেটিক। ন্যূনতম সুযোগ নেই। এদিক থেকে ইভিএমে সুযোগ ছিল, যেটা ব্যালটে নেই। আমরা তুলনামূলক বললাম। আবার ইভিএম ব্যয়বহুল, ব্যালট তত নয়।’