রাণীশংকৈলে ঝুঁকিতে সেতু, থামছেই না বালু উত্তোলন

প্রকাশিত: ২:০৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক ; ঠাকুরগাঁওয়ে রাণীশংকৈলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) আওতাধীন সেতুর নিচ থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করার কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে সেতু। তারপরেও থামছেই না সেতুর নিচ থেকে বালু উত্তোলন। নেকমরদ থেকে ঐতিহ্যবাহি কাতিহারহট সড়কের প্রয়াগপুর নামক এলাকায় কুলিক নদীর সেতুর নিচ থেকে অবাধে মাহিন্দ্র ট্রাক্টরে করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ৪-এর খ ধারায় উল্লেখ আছে – সেতু, কালভার্ট, ড্যাম ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন রেললাইন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে থেকে বালু তোলা যাবে না।

প্রয়াগপুর সেতুতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুলিক নদীর উপরে স্থাপিত পুরোনো সেতুর মুল পিলারের বেজ(তলা) ঢালাই মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। সেতুর পিলারের বেজ ঢালাইগুলোর বেশির ভাগ অংশ মাটি থেকে সড়ে নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে।

এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকার পরেও তার খুব কাছ থেকে কোদাঁল দিয়ে বালু কেটে ট্রাক্টরে তোলা হচ্ছে। এক সাথে বেশ কিছু শ্রমিক কোদাল দিয়ে এ বালু উত্তোলনের কাজ করছেন। একাধারে ট্রাক্টরগুলো সাড়ি বদ্ব হয়ে ট্রাক্টর ভর্তি করে বালু পারাপার করছেন।

পাশে দাড়িয়ে তদারকি করছেন সেতুর কাছ থেকে বালু তোলা জায়গার মালিক দাবিদার প্রয়াগপুর গ্রামের জিল্লুর রহমান। প্রতিবেদক জানতে চাই কেন এভাবে বালু তুলছেন এবং বালু গুলো কি করছেন। সে-সময় জিল্লুর বলেন এখানে আমার ১ একর জমি রয়েছে আমি এখানে কোন আবাদ করতে পারি না। বালু কেটে জায়গাটা সমান করছি চায়না ধান লাগাবো। আর বালু তুলে ট্রাক্টর প্রতি আটশত টাকা বিক্রি করছি।

এ সময় এভাবে বালু তোলার কারণে সেতুর ক্ষতি হতে পারে তাছাড়াও এভাবে বালু তোলা আইনত অপরাধ প্রশ্নে বলেন, তাহলে আপনি আমাকে একটা চাকরি দেন। আমার এত জমি বিনা আবাদে পড়ে থাকবে আমি আবাদ করতে পারবো না তা কি করে হয়। একবার এসিল্যান্ড এসেছিলে (সাবেক এসিল্যান্ড সোহাগ চন্দ্র সাহা) তাকেও বলে ছিলাম চাকরি দিতে তিনিও দিতে পারেন নি। আমি বালু তুলবোই আমার জমি থেকে। এতে সেতুর কোন ক্ষতি হবে না বলে তিনি দাবী করেন।

স্থানীয়রা জানায়, জিল্লুর নদীর পানি কমলেই সেতুর নিচ থেকে এভাবে বালু তুলে ধারাবাহিকভাবে বিক্রি করে আসছেন। কেউ তাকে থামাতে পারছে না। স্থানীয়দের ধারণা এভাবে বালু তুললে কখনো সেতুর পিলারে সাথে মাটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ভাড়ী যানবাহনের অতি মাত্রার ওজনের কারণে সেতুটি ডেবে বা ধসে যেতে পারে। তাই দ্রুত এ ধারাবাহিক বালু উত্তোলন বন্ধ করা উচিত।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণের উদেশ্য নদীর তল দেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া সেতু কালভার্ট ড্যাম ব্যারাজ বাধ সড়ক মহসড়ক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ব।

উপজেলা এলজিইডি জানায়, ১৯৯০ সালে আর ডিপি-১৩ প্রকল্পে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ ফিট প্রস্থ ও ১৫০ফিট দৈঘ্যর আর সিসি গার্ডার সেতটিু নির্মাণ করা হয়। নেকমরদ থেকে কাতিহার হাট সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ জন বহুল সড়ক। সে-সড়কে সংযোগ সেতুর পিয়ারের তলা থেকে মাটি কাটলে পিয়ারের বেজের সাথে মাটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পিয়ারগুলো ঝুলন্ত অবস্থার সৃষ্টি হলে সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন গেলে সেতু ধসে যেতে পারে। এতে দুই এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।

উপজেলা প্রকৌশলী তারেক বিন ইসলাম বলেন,এভাবে বালু উত্তোলন করলে সেতুর ক্ষতি হবে। সেতুর নিচ থেকে বালু কাটা বন্ধ করতে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয়দের এগিয়ে আসতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী আফরিদার বক্তব্য নিতে শনিবার দুপুরে একাধিকার ফোন দিলেও তিনি তাতে সাড়া দেন নি।