গডফাদারদের ধরতে ২২ জেলায় দুদকের গোয়েন্দা

প্রকাশিত: ৬:৪৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক : অপরাধ জগতের গডফাদারদের ধরতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত ২২ জেলায় ২২ জন গোয়েন্দা নিয়োগ দেয়া হবে বলে কমিশনের ২২তম সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী।

এদিন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ডে-কেয়ার সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এটির উদ্বোধন করেন।

এ সময় দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই ডে কেয়ার সেন্টার চালুর মাধ্যমে আমাদের নারী কর্মকর্তাগণ আরও নিশ্চিন্ত মনে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মায়েরা এখন অনেকেই চাকরি করছেন। নারীরা এখন আর ঘরে বসে শুধু সন্তান পালনই করছেন না বরং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে তারা চাকরি করছেন। দুদকেও এখন অনেক নারী কর্মকর্তা রয়েছেন। আবার অনেক পুরুষ কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের স্ত্রী চাকরি করেন। তাদের সন্তানদের পরিপালনের বিষয়টি একটি উদ্বেগের কারণ। কমিশন তাদের উদ্বেগের বিষয়টি আমলে নিয়েছে। কমিশনের কর্মপরিবেশ আরও উন্নত করার জন্যই এই ডে কেয়ার সেন্টারটি চালু করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি দফতরে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করা না গেলে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা কঠিন। দুদকের এ কার্যক্রম দেখে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে আরও সক্রিয় হবে বলে আশা করছি।’

তিনি বলেন, ‘দুদকে যেসব নারী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন তারা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। গ্রেফতার, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানেও তারা দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। দুর্নীতি দমনে তাদের দৃঢ় মানসিকতা রয়েছে। তাদের শিশুদের নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করায় তাদের কাজের মান ও পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। শিশুরা এখানে খেলাধুলা করতে পারবে এবং আনন্দের সঙ্গে কিছু শিখতেও পারবে। শিশুদের নিরাপত্তায় অবশ্যই এটি দুদকের একটি ভালো দৃষ্টান্ত।’

পরবর্তীতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘অর্থপাচার শুধু বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়। এটি বৈশ্বিক সমস্যা, আমাদের আশপাশের দেশগুলোতেও অর্থপাচারের ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক উন্নয়নও হচ্ছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে যথাযথভাবে কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে সরকারও কাজ করছে, দুদকও কাজ করছে। কমিশন থেকে বিভিন্ন প্রকল্প মনিটরিং করা হচ্ছে। এভাবে যারা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করছেন, তাদের আইনি প্রক্রিয়ায় ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গতকালই কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে- যে বা যারা অবৈধভাবে ব্যাংকের বা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে, তা পাচার করে বিদেশে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছেন, তাদের প্রত্যেককেই অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ইন্টারপোলসহ আন্তর্জাতিক সকল আইনি টুলস-টেকনিক প্রয়োগ করে অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে এবং দেশের সম্পদ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে।’

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সিঙ্গাপুরসহ আমাদের আশপাশের দেশগুলো থেকে আমরা কিছু কিছু তথ্য পাচ্ছি। কমিশন থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে কীভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় ওইসব দেশের আদালতের সহায়তায় অপরাধীদের সম্পদ জব্দ করা যায় এবং তা দেশে ফিরিয়ে আনা যায়। কমিশনের প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যেই হংকংয়ের আদালতের সহায়তায় কিছু অবৈধ অর্থ জব্দ করা হয়েছে। এটি একটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার সমন্বয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ট্রেড-বেইজড মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমেই সর্বাধিক অর্থপাচারের ঘটনা ঘটে। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে দুদক কার্যালয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি, পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ায় এ জাতীয় অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুদকের ২২টি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে ২২ জন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসব গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রতিটি জেলায় যারা মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাস, খাস জমি দখল, ঘুষ-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধ জগতের গডফাদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, তাদের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করে কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্ট করবেন। কমিশন এসব রিপোর্ট যাচাই-বাছাই করে এসব অপরাধীদের আইন-আমলে নিয়ে আসবে। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেয়া হবে না।’

কমিশনের এমন সক্ষমতা আছে কি-না? জবাবে তিনি বলেন, ‘সক্ষমতা আপনারাই দেখছেন। সক্ষমতা আমাদের আছে। সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা করি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, কাজের প্রতি কমিটমেন্ট বা দৃঢ় অঙ্গীকারই সক্ষমতার উৎস। আজকের কমিশন বৈঠকে পূর্ণাঙ্গ কমিশন, সচিব ও মহাপরিচালকগণ উপস্থিত ছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সকলের দৃঢ় অঙ্গীকার রয়েছে। আমরা একটি টিম। টিমওয়ার্কের মাধ্যমেই আমাদের সক্ষমতা সর্বাধিক বিকশিত করার চেষ্টা করছি।’