অবৈধ গাইড-গ্রামার বই জব্দ, আটক ২

প্রকাশিত: ১:২৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের বিশেষ অভিযানে অন্তত ৫ ট্রাক অবৈধ গাইড ও গ্রামার বই জব্দ করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে দু’জনকে।
বুধবার দুপুর থেকে শুরু হয়ে রাত ১০টা নাগাদ এ অভিযান চলে।

আটককৃতরা হলেন, শহরের নাজমুল স্মরণীর বইমেলা লাইব্রেরীর মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন ও পার্শ্ববর্তী পপি লাইব্রেরীর মালিক আল মামুন।

আটককৃতদের দোকান ছাড়াও একাধিক গোডাউনে অভিযান পরিচালিত হয়। পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ গাইড ও গ্রামার বই। যা রাতে ট্রাকযোগে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়।

সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর্জা সালাউদ্দীন জানান, জাতীয় শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক অনুমোদন ব্যতীত অবৈধ গাইড ও গ্রামার বই গোপনে বাজারজাত করে আসছিল একটি চক্র। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুপুর থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মহিদুল ইসলামসহ তার নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আটক দু’জনের বিরুদ্ধে নোট বই নিষিদ্ধ ২০১৮ আইন অনুযায়ী মামলার প্রক্রিয়া চলছে এবং অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে, আকষ্মিক ভাবে নিষিদ্ধ গাইড ও গ্রামার বই বাজারজাত চক্রের সঙ্গে জড়িত অনেকেই পরিস্থিতি বুঝে পালিয়ে যায়। তাদের দোকানও বন্ধ রাখতে দেখা গেছে।

ইতোপূর্বে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ এসব গাইড ও গ্রামার বই বিক্রির অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাদেরকে সতর্ক করা হলে এগুলো বিক্রিতে বৈধতা দাবি করে সকল লাইব্রেরী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে অবৈধ পুস্তক ব্যবসায়ীরা। এরপর সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার পায়তারায় লিপ্ত হয় তারা। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে দোকান খুললেও বন্ধ হয়নি অবৈধ গাইড ও গ্রামার বই বিক্রি কার্যক্রম।

অভিযোগ রয়েছে, জেলা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কতিপয় নেতারা এসব বই বিক্রিতে দোকানীদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে যোগসাজসে ও মোটা অংকের লেনদেনে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ এসব বই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কিনতে বাধ্য করে আসছিল। জেলা শিক্ষক সমিতির সঙ্গে পুস্তুক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি যুক্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা অনৈতিকভাবে গ্রহণ করে এসব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হত। এসব গাইড ও গ্রামার বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সঠিক তথ্য তুলে ধরা হয়নি। ফলে এসব বই নিয়ে দীর্ঘদিন সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ চলে আসছিল।

জেলা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির যুগ্ম সম্পাদক কাইয়ুম সরকার জানান, সমিতির পক্ষ থেকে অবৈধ গাইড ও গ্রামার বই বিক্রি বন্ধ করতে দুই দফায় চিঠি দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি কেউ এসব বই বিক্রি করে সে দায় দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। সমিতি কোন দায় দায়িত্ব নেবেনা। সমিতির বিধান অনুযায়ী এসব লাইব্রেরী মালিকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং জরিমানা করা হবে।

সমিতির আরেক নেতা আবু সালেক জানান, পুলিশের কাজ পুলিশ করেছে। আমরা এ অভিযানকে স্বাগত জানাই।

রাতে জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানের ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, যদি অভিযান হয়ে থাকে তবে পুলিশের পক্ষ থেকে হতে পারে। বিষয়টি আমি অবহিত নই।

জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রচলিত আইনে নোট, গাইড বিক্রি নিষিদ্ধ। তারপরও সাতক্ষীরার লাইব্রেরী মালিকরা এই ব্যবসা করছে এমন খবরের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অন্তত ৫ ট্রাক অবৈধ গাইড ও গ্রামার বই জব্দ করা হয়েছে। যার মূল্য কোটি টাকার ওপরে।

তিনি সকলকে সতর্ক করে বলেন, এটি একটি ম্যাসেজ, যারা এ ধরনের ব্যবসা করছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।