চীনাদের জন্য বাংলাদেশের অন-অ্যারাইভাল ভিসা সাময়িক বন্ধ

প্রকাশিত: ৩:৩২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার : করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে চীনের নাগরিকদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেয়া সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ।

রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ইতালি সফর নিয়ে আয়োজন করা হয় এ সংবাদ সম্মেলন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। তাদের অনেকে এখানে কাজ করেন। তাদের দূতকে বলেছি, অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ রাখছি। একমাসের জন্য আসা বন্ধ। এটা সাময়িক। তারা মেনে নিয়েছেন। তবে ভিসা নিয়ে আসতে পারবেন, এজন্য হেলথ সার্টিফিকেট লাগবে।’

মন্ত্রী জানান গত শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) চীন থেকে যে বাংলাদেশিদের ফেরত আনা হয়েছে, তাদের মধ্যে অসুস্থ অবস্থায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের নিয়মিত দেখভাল করছেন চিকিৎসকরা।

গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৩০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। একজনের মৃত্যু হয়েছে ফিলিপাইনে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ভারতসহ ২৭টি দেশে এই ভাইরাসে ১৪ হাজার ৫৫১ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের এ ভাইরাস ঠেকাতে চীন ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বহু দেশ। ফিলিপাইনসহ অনেক দেশই এই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন থেকে আগতদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দেয়। সেই তালিকায় এবার যোগ হলো বাংলাদেশও। অনেক দেশের এয়ারলাইন্স চীনগামী ফ্লাইটও বন্ধ করে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চীন।

পরিস্থিতি বিবেচনায় গত শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) উহান থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে দেশে নিয়ে আসা হয় ৩১২ বাংলাদেশিকে। তাদের মধ্যে ৩০২ জনকে দক্ষিণখানের আশকোনা হজ কাম্পে কোয়ারেন্টাইন (আলাদা) করে রাখা হয়েছে। বাকি ১০ জনের মধ্যে সাতজনকে সরকারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও তিনজনকে (তিনজনের মধ্যে একজন মহিলা জ্বরের রোগী, তার সঙ্গে তার স্বামী ও শিশু সন্তান ইচ্ছে করেই হাসপাতালে অবস্থান করছেন) সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করার জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসানো হয়েছে থার্মাল স্ক্যানার। কোনো রোগী শনাক্ত করা হলে তাকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য কুর্মিটোলা হাসপাতালে প্রস্তুত রাখা হয়েছে আইসোলেশন ইউনিট। দেশের অন্যান্য প্রবেশপথেও রাখা হয়েছে এমন স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া।

ইতালি সফরে বন্ধুত্বের বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তের আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে ইতালির উদ্দেশে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরে প্রধানমন্ত্রী ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বন্ধুত্বের বার্তা দেবেন।

ড. মোমেন বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদের (ব্রেক্সিট) ফলে কোনো সমস্যা হবে না। ব্রেক্সিট বাংলাদেশ ও ব্রিটেন দুই দেশের জন্যই ভালো কিছু নিয়ে আসবে।’

‘এ সফরে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সফরে প্রধানমন্ত্রী দেখা করবেন পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গেও।’

প্রধানমন্ত্রী ইতালির রোমে নিজস্ব জমিতে নির্মিত বাংলাদেশ দূতাবাসের নতুন চ্যান্সারি ভবনের উদ্বোধন করবেন বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ইতালির কাছ থেকে প্রতিরক্ষা কিছু আইটেম কিনেছি। আরও আলোচনা চলছে। তবে এ নিয়ে কোনো চুক্তি বা সমঝোতার সম্ভাবনা নেই।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধ বাংলাদেশি যারা ইতালিতে আছেন,…আমরা চাই না কেউ অবৈধ থাকুক। ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়াটা অন্যায় কাজ।’

তিনি বলেন, ‘ট্রাভেল এজেন্সি অনেককেই প্রথমে লিবিয়ায় নিয়ে যায়, পরে অত্যাচার করে টাকা আদায় করে, নৌকায় করে সাগরে ভাসিয়ে দেয়, তারা ডুবে মারা যায়। অভিভাবকদের বলব টাকা না দিতে। বরং সেই অর্থ দিয়ে দেশে ব্যবসা করুক। আমরা (এভাবে বিদেশে পাঠানোর কাজ করা) ১৮টি প্রতিষ্ঠানের নাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি, তারা (ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে) ব্যবস্থা নিয়েছে।’

সফর সূচি

৪ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা।

ফ্লাইটটি বিকেল সোয়া ৪টার দিকে (স্থানীয় সময়) রোমের ফিয়ামিকিনো বিমানবন্দরে পৌঁছাবে। ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।

সন্ধ্যায় পারকো দে প্রিন্সিপি গ্র্যান্ড হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশির এক আয়োজনে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

পরদিন ৫ ফেব্রুয়ারি পাজাজো চিগিতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন শেখ হাসিনা। যোগ দেবেন সরকারি মধ্যাহ্নভোজে।

৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ইতালীয় ব্যবসায়ী সংস্থাগুলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পারকো দে প্রিন্সিপি গ্র্যান্ড হোটেলে সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যায় একই স্থানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের দেয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি।

৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর দেড়টায় (স্থানীয় সময়) এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে মিলান মালপেন্সা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার বিমানবন্দরে বিদায় জানাবেন প্রধানমন্ত্রীকে।

৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টায় শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী।

বিদেশিদের ধন্যবাদ

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে বিদেশিরা কোড অব কন্ডাক্ট মেনে চলায় তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

সীমান্ত হত্যার বিষয়ে হাইকমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ

সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বছর আমরা এ ইস্যুতে ভারতীয় হাইকমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’