চুয়াডাঙ্গায় থমকে আছে চারটি নদীর খনন কাজ দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম প্রকাশিত: ১:৩৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২০ নিজস্ব প্রতিবেদক : চুয়াডাঙ্গা জেলার চিত্রা, নবগঙ্গাসহ চারটি নদীর খনন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ (পাউবো) জেলা প্রশাসন। নদী খনন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে সংঘবদ্ধ একটি চক্র ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক,পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সাতজনের নামে আদালতে ৩২টি মামলা করেছেন। এ অবস্থায় থমকে আছে জেলার চারটি নদীর খনন কার্যক্রম। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নদী খনন প্রক্রিয়া থেকে তারা কোনোভাবেই পিছু হটবেন না। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে খুব শিগগরই নদী খনন কার্যক্রম শুরু করার আশা তাদের। জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মাথাভাঙা, নবগঙ্গা, চিত্রা, কুমার ও নৌকার খাল নামে ৫টি নদী। দখল-দূষণে মাথাভাঙা মৃতপ্রায় থাকলেও অন্য চারটি নদী ছিল অনেকটা বিলীন। কাগজে কলমে নদী থাকলেও বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। আর এই সুযোগে স্থানীয় ভূমি দস্যুরা নদীর জায়গা দখলের উৎসবে মেতে উঠে।দীর্ঘদিন নদীর জায়গা দেখভাল না হওয়ার সুযোগে কেউ কেউ আবার নিজ নামে রেকর্ডও করে নেন। কয়েক হাত ঘুরে নদীর জায়গা বিক্রিও হয়েছে চড়া মূল্যে। এমন বাস্তবতায় পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বর্তমান সরকার চুয়াডাঙ্গার পাঁচটির মধ্যে প্রথম ধাপে চারটি নদী খননের উদ্যোগ গ্রহণ করে। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর নবগঙ্গা নদী খনন কাজের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাংসদ সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার। শুরুতে অনেকটা জোরেশোরে খনন কার্যক্রম চললেও মাঝপথে থমকে গেছে খনন কার্যক্রম। নদীর জায়গা নিজেদের দাবি করে সংঘবদ্ধ একটি চক্র ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সরকারি ৭ কর্মকর্তাকে বিবাদী করে আদালতে ৩২টি মামলা করেছেন। এ অবস্থায় বন্ধ হয়ে গেছে জেলার চলমান চারটি নদীর খনন কার্যক্রম। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, চুয়াডাঙ্গা জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া চারটি নদীর মধ্যে নবগঙ্গা নদীর ১৪ কিলোমিটার, চিত্রা নদীর ২২ কিলোমিটার, কুমার নদীর ১২ কিলোমিটার ও নৌকার খালের ৬ কিলোমিটার খনন করা হবে। চারটি নদীর খনন কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭ কোটি টাকা। চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম জানান, ৪টি নদীর ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে আমরা আইনি জটিলতার মধ্যে পড়েছি। নদীর জায়গা নিজেদের দাবি করে আদালতে আমাদের নামে মামলা হয়েছে ৩২টি। এসব মামলায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে আমাকে, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার ভূমি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী (এসডি), সেটেলমেন্ট অফিসার (এসও), কার্য সহকারী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের আসামি করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ অবস্থায় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বিবাদমান জায়গাতে আমরা খনন কাজ বন্ধ রেখেছি। একই সাথে আইনিভাবে আমরা মামলাগুলো মোকাবিলা শুরু করেছি। এদিকে নদী খনন কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় ক্ষুব্ধ জেলার সুশীল সমাজ ও পরিবেশবাদীরা। তারা বলছেন, পরিবেশ রক্ষায় কোনোভাবেই দখলদারীদের হাতে জিম্মি হওয়া যাবেনা। এজন্য দখলকারীদের শক্ত হাতে আইনি মোকাবিলা করা দরকার। সুজনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাহবুল ইসলাম সেলিম নদীর খনন কার্যক্রমকে বাঁধাগ্রস্ত করতে দখলদারীদের এমন তৎপরতাকে আগ্রাসী বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, কোনোভাবেই এসব দখলকারীদের ছাড় দেয়া ঠিক হবেনা। একই সাথে নদীর দুই একর জায়গা দখল করে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে সেটির ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। চুয়াডাঙ্গার চারটি নদী খনন কার্যক্রম বন্ধের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে নদী বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে নদীগুলো বাঁচাতে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে এসেছি। আমাদের দাবি ছিল নদীগুলো দখলকারীদের হাত থেকে রক্ষা করে নদীর স্রোতধারা স্বাভাবিক রাখা। কিন্তু স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড বা জেলা প্রশাসন আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। এখন দখলদারীদের আগ্রাসন আামদের আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। তিনি অবিলম্বে এসব দখলকারীদের আইনিভাবে শক্তহাতে মোকাবিলা করে নদীর খনন কার্যক্রম শেষ করার দাবি জানান। তবে দখলকারীদের পক্ষ থেকে নদীর জায়গা তাদের পৈত্তিক সম্পত্তি বলে দাবি করা হচ্ছে। এর স্বপক্ষে তারা যুক্তি ও তাদের নামে রেকর্ডকৃত কাগজপত্র আছে বলেও দাবি তাদের। চুয়াডাঙ্গা নুরনগর গ্রামের বাসিন্দা মজনু মিয়ার দাবি- আমার পৈত্তিক প্রায় ১৫ বিঘা জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর জায়গা বলে দাবি করছে। এসব জায়গার সিএস আরএসের রেকর্ডও তাদের নিজেদের নামে বলে দাবি তার। বিষয়টি প্রতিকারে তিনি আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন বলে জানান। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার জানান, বর্তমান সরকারের মহতী উদ্যোগ নদী খনন প্রক্রিয়া থেকে কোনোভাবেই পিছু হটবেন না তারা। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেই খুব শিগগিরই নদী খনন কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করছেন তিনি। নদী খননের কার্যাদেশ অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গার চারটি নদী খনন কার্যক্রম শেষ করার কথা রয়েছে। তবে খনন কাজে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা ঠিকাদারদের। Share this:FacebookX Related posts: চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু করোনায় আক্রান্ত চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খুলনা টুটপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন বই বিতরণ হতদরিদ্র ও অসহায় নারীদের মাঝে পানি সরবরাহের কলস ও ট্রলি বিতরণ খুলনা কয়রার বেড়ি বাঁধ ভাঙন আতঙ্কে ঘর ছাড়ছে মানুষ চিতলমারীতে তুচ্ছ ঘটনায় শিশুর আত্মহত্যা খুলনায় ডুমুরিয়ায় সরকারী খাল ভরাট’র অভিযোগ সাতক্ষীরায় প্রথম করোনা জয়ী স্বাস্থ্যকর্মীকে ফুলেল শুভেচ্ছা খুলনায় ‘মাস্ক নাই যার, বাজার নাই তার আনসার কমান্ডার ও ইউনিয়ন দলনেতাদের মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ রাসমেলায় যেতে বন বিভাগের পাঁচটি নিরাপদ রুট নির্ধারণ চিতলমারীতে করোনা প্রতিরোধে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের ভূমিকা বিষয়ক সভা SHARES Matched Content খুলনা বিভাগ বিষয়: চুয়াডাঙ্গাথমকে আছেনদী খনন কাজ