ভয়াবহ দুই মরণরোগ ছড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা!

প্রকাশিত: ৫:২২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২০

নিউজ ডেস্কঃ হত্যা ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিপর্যস্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এবার বাংলাদেশের জন্য গভীরতর উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। এই উদ্বেগ ভয়াবহ মরণব্যাধি এইডস আর যক্ষ্মা রোগ নিয়ে।কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বসবাসরত শরণার্থীদের মধ্যে নতুন করে ৪১৩ জনের শরীরে এইচআইভি (এইডস) সংক্রমণ ধরা পড়েছে, আর যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হয়েছে ৬ হাজার ৩৭২ জন।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ উইং থেকে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি সভার সারসংক্ষেপে এ তথ্য দেয়া হয়েছে।মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিক (রোহিঙ্গা) সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্সের এই সভাটি ২৬ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

সূত্রগুলো জানায়, ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজারে ১৮৯ এইডস রোগী পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে ৬৪ জন ছিল রোহিঙ্গা। ২০১৮ সালে এইডস রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৫৫ জন।আর গত ডিসেম্বরে কক্সবাজার জেলা হাসপাতালের এইচআইভি ট্রিটমেন্ট সেন্টার ও প্রিভেনশন অব মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন অব এইচআইভি (পিএমটিসিটি) যে তথ্য দেয়, সে অনুযায়ী পুরো জেলায় এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫৩ জনে।অর্থাৎ গত এক বছরে শুধু কক্সবাজারে আরও ৯৮ জন মরণঘাতী এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের মধ্যে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ৩২৫ জন, উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ১২২ জন ও ইউনিসেফ পরিচালিত পিএমটিসিটিতে ১০৬ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের প্রায় ৬২ শতাংশ নারী ও বালিকা। এর ফলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের যৌন সংসর্গ বাড়ছে। এটি বড় ধরনের ঝুঁকির সৃষ্টি করছে বাংলাদেশে। স্থানীয় অধিবাসীরা রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে নিজেদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যেও অচেতনে এই মরণব্যাধি ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের অনেকের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের যৌন সম্পর্কের কারণে বর্তমানে ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। জীবিকার তাগিদে রোহিঙ্গা নারীরা কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় যৌন ব্যবসায় নেমেছেন। ফলে রোগটি ছড়াচ্ছে।স্বামী ও স্ত্রীর মাধ্যমে সন্তানরাও আক্রান্ত হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি যেটি, সেটি হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দেশব্যাপী ছড়িয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধের সূত্র ধরে রাজধানী ঢাকাতেও তারা ছদ্মবেশে বসবাস করছে। এটিই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।সংশ্লিষ্টদের মতে, মিয়ানমার থেকেই রোহিঙ্গারা এইডসের ভাইরাস বয়ে নিয়ে এসেছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, মিয়ানমারে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই লাখের ওপর। আর প্রতি হাজারে আটজন এইচআইভি পজেটিভ। ফলে এই মরণব্যাধিটি বাংলাদেশের জন্যও ভয়াবহ উদ্বেগ ও ঝুঁকি তৈরি করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এইডস রোগীর যে সংখ্যাটি দেয়া হয়েছে, তারা সবাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করেন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য যাওয়ার পর পরীক্ষায় এইচআইভির উপস্থিতি ধরা পড়েছে। চিকিৎসা নিচ্ছেন না বা কোনো ধরনের পরীক্ষা করা হয়নি শরণার্থীশিবিরে বসবাসরত এইচআইভি আক্রান্ত এমন রোহিঙ্গার সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি হবে।কারণ এইচআইভি আক্রান্তদের ৫০ শতাংশ জানেনই না যে তাদের এই রোগ হয়েছে। যারা জানেন, তাদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি চিকিৎসা নেন না। এছাড়া যক্ষ্মা রোগটিও ছোঁয়াচে।দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে এ থেকে মুক্ত হতে হয়। সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ না করলে এটিও মরণব্যাধি হিসেবে পরিণত হতে পারে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এইডস রোগীদের নিয়ে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা লাইট হাউস।

সংস্থাটির ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা টিম লিডার গ্রেনার মারাক জানান, তাদের সংস্থাটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেসব নারী যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছেন বা কোনোভাবে ব্যবহার হচ্ছেন, তাদের এইচআইভি পরীক্ষার জন্য প্রাথমিক স্ক্রিনিং করে থাকে।এদিকে চলতি বছরে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার জন্য প্রয়োজন সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যয় হবে ২ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। পাশাপাশি পানি, পয়ঃনিষ্কাশনে ৯৮২ কোটি এবং খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় হবে ৯৪৫ কোটি টাকা।অবশিষ্ট অর্থ যাবে অন্যান্য খাতে। এখন পর্যন্ত পুরো অর্থ সংস্থানের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘বলপূর্বক মিয়ানমার বাস্তুচ্যুত নাগরিক (রোহিঙ্গা)’ সংক্রান্ত টাস্কফোর্স সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।সভায় রোহিঙ্গাদের জন্য অন্য বছরের তুলনায় সম্প্রতি বিদেশি সহায়তার পরিমাণ কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বৈঠকের কার্যবিবরণী সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।সূত্রমতে, রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশি সহায়তা কমছে- এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে টাস্কফোর্স বৈঠকে। সেখানে বলা হয়, ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছরে সহায়তার পরিমাণ ২ শতাংশ কমেছে। যেখানে ২০১৯ সালে মোট সহায়তার পাওয়া গেছে ৬৭ শতাংশ, সেখানে ২০১৮ সালে পাওয়া গেছে ৬৯ শতাংশ।