শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ৭:৫৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০২০

স্পোর্টস ডেস্ক ; অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়াকে ছাড়া বাঁচা-মরার ম্যাচ, হারলেই বাদ এমন সমীকরণ নিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে ছিটকে যান অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত সব শঙ্কা কাটিয়ে ভয়কে জয় করে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। গেল ম্যাচে ফিলিস্তিনির বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলা লঙ্কানদের পারফম্যান্স বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের শঙ্কায় ফেলে দেয়। বাংলাদেশকে দাঁড় করিয়ে দেয় কঠিন সমীকরণের সামনে। সেমিফাইনালে যেতে হলে শেষ ম্যাচে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। কিন্তু ফিলিস্তিনের বিপক্ষে গোল পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ যে হাপিত্যেশ করেছে তাতে লাল-সবুজের পক্ষে বাজি ধরার লোক কমই ছিল।

তাহলে কী গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিবে বাংলাদেশ? কী হয় সেটা দেখতে আজ রোববার হাজার পাঁচেক দর্শক মাঠে হাজির হয়। ব্যান্ডপার্টি নিয়ে মাঠে আসে তারা। শুরু থেকেই উল্লাস, উচ্ছ্বাসে বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে থাকে। তাদের হতাশ করেনি মতিন-ইব্রাহিমরা। শ্রীলঙ্কাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের হয়ে জোড়া গোল করেছেন মতিন মিয়া। অপর গোলটি করেছেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম। অবশ্য বাংলাদেশের হরিষে বিষাদ হয়ে দেখা দিয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তপু বর্মনের লাল কার্ড। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তিনি। সেমিফাইনালে তাকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাঁচা মরার ম্যাচে চার পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে রক্ষণাত্মক খেলা বাংলাদেশ আজ খেলে ৪-৪-২ ফরম্যাটে। তাতে শুরু থেকেই আক্রমণে যায়। দ্বিতীয় মিনিটেই কর্নার পায়। যদিও কর্নার থেকে গোল আদায় করতে পারেনি বাংলাদেশ। ১১ মিনিটে গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিল স্বাগতিকরা। এ সময় বাম দিক থেকে মোহাম্মদ ইব্রাহিম ডি বক্সের মধ্যে ক্রসে বল বাড়িয়ে দেন সাদ উদ্দিনকে লক্ষ্য করে। অবশ্য বলটি রিসিভ করতে পারেননি সাদ। বলটি পেলে গোল হতে পারত। কারণ, ডি বক্সের মধ্যে আর কেউ ছিল না। ১৩ মিনিটে বিশ^নাথ ঘোষের আক্রমণে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করে শ্রীলঙ্কা।

১৭ মিনিটে লিড নেয় বাংলাদেশ। গোল করেন মতিন মিয়া। এ সময় মাঝমাঠ থেকে রিয়াদুলের ক্রস ডি বক্সের মধ্যে পেয়ে যান মতিন। শ্রীলঙ্কার রক্ষণভাগের একজনকে কাটিয়ে কাটিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে জালে জড়ান।

২১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু মোহাম্মদ ইব্রাহিমের স্বার্থপরতায় সেটা হয়নি। এ সময় তিনি একাই বল নিয়ে ডি বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েন। নিজেই গোল করতে চেয়েছিলেন। কারণ, তার সামনে ছিল কেবল শ্রীলঙ্কার গোলরক্ষক। কিন্তু ইব্রাহিম তার পায়ে মেরে দেন। অথচ এ সময় ডানদিকে ছিলেন সুফিল। তাকে বল দিয়ে ফাঁকা পোস্টে বল জড়াতে পারতেন।

২৬ মিনিটে মাহবুবুর রহমান সুফিল অবশ্য দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিলেন। এ সময় ডি বক্সের মধ্যে বল পেয়ে যান তিনি। কিন্তু ফাঁকা পোস্টেও বল জড়াতে পারেননি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে গোল শোধের সুযোগ পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এ সময় বাংলাদেশের গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল দিতে পারেনি লঙ্কান অধিনায়ক মোহাম্মেদ ফজল। যোগ করা সময়ে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেটা থেকেও গোল আদায় করে নিতে পারেনি। তাতে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধের খেলা শেষ করে।

বিরতি থেকে ফিরে ৫১ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। এ সময় নিশ্চিত গোল মিস করেন সোহেল রানা। বাম দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠেন তিনি। ঢুকে পড়েন ডি বক্সের মধ্যে। সামনে ছিলেন কেবল শ্রীলঙ্কার গোলরক্ষক রুয়ান অরুণাশ্রী। তার মাথার উপর দিয়ে মারেন। মারে জোর বেশি থাকার বারের উপর দিয়ে চলে যায়। তবে ৬৩ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মতিন মিয়া। এ সময় মতিন মাঝমাঠ থেকে শ্রীলঙ্কার রক্ষণভাগের খেলোয়াড় জুদে সুপানের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন। তখন শ্রীলঙ্কার অর্ধে গোলরক্ষক ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। মতিন বামদিক দিয়ে ডি বক্সের মধ্যে ঢুকে লঙ্কান গোলরক্ষক রুয়ান অরুণাশ্রীকে বোকা বানিয়ে ফাঁকা জালে বল জড়ান। ৬৯ মিনিটে সোহেল রানার আচমকা দূর থেকে শট নেন। তার নেওয়া শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন শ্রীলঙ্কার গোলরক্ষক।

৮৩ মিনিটে ব্যবধান বাড়ান মোহাম্মদ ইব্রাহিম। এ সময় বামদিক থেকে বদলি খেলোয়াড় রাকিব হোসেনের পাস ডি বক্সের মধ্যে পেয়ে যান ইব্রাহিম। আলতো টোকায় বল জালে পাঠান। ৮৮ মিনিটে লঘু-পাপে গুরু দ- দেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তপু বর্মন। এ সময় দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তিনি। শেষ ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। নিঃসন্দেহে কষ্টের ব্যাপার তপুর জন্য। তবে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠেছে, সেটা ভেবে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন। অবশ্য সেমিফাইনালে ফিরবেন নিয়মিত অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া।