রাখাইনে গভীর সমুদ্রবন্দর করতে চায় চীন

প্রকাশিত: ২:৪২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শুক্রবার মিয়ানমার পৌঁছেছেন। দুই দিনের এই সফরে মিয়ানমারের সমর্থনে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করতে চায় চীন। ক্ষমতায় আসার পর শি জিনপিংয়ের প্রথম সফর। আর ১৯ বছর পর চীনের কোন প্রেসিডেন্টের মিয়ানমার সফর এটি। চীনা প্রেসিডেন্টের এই সফরকে চীনের গ্লোবাল বেল্ট ও রোড উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেখছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

মিয়ানমারের ডেপুটি বাণিজ্যমন্ত্রী অং জেঁইয়ের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, জিনপিং তার সফরে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিনত ও সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তাদের এই বৈঠকে চামসু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ ও রাখাইন রাজ্যে ১৩০ কোটি ডলার ব্যয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া প্রায় হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। বৈঠকগুলো শনিবার রাজধানী নেইপিদোতে অনুষ্ঠিত হতে পারে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নৃশংস হামলায় কমপক্ষে ১০ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হন। রাখাইন ছাড়তে বাধ্য হন ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। এই বর্বরতার জন্য মিয়ানমার সামরিক বাহিনীকে গণহত্যায় অভিযুক্ত করে জাতিসংঘ।

অভিযোগ প্রত্যাখ্যান কোরে, ২০১৭ সালের এ ঘটনা অনুসন্ধানে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে মিয়ানমার সরকার। চলতি মাসেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যাচ্ছে কমিশন। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন এবং ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্ট মিয়ানমারের তদন্ত কমিটিকে অবিশ্বাসযোগ্য আখ্যা দিয়েছে। বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, সরকারের অব্যাহত মিথ্যাচারকে ন্যায্যতা দিতে চাইবে তদন্ত কমিটি।

রোহিঙ্গা ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচলাক খিন মাওউং বলেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষক, তদন্তকারী, কাউকে রাখাইনে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। গণহত্যা পরিচালনাকারী সরকার নিজেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটির প্রতিবেদন বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘটা নৃশংসতা তদন্তে সরকার কখনোই আন্তরিক না। থ্যাইল্যান্ড ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ফোর্টিফাই রাইটস বলছে, মিয়ানমারে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছেন তাদের নাগরিকত্ব অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। নাগরিকত্ব কার্ডের পরিবর্তে বাঙালি পরিচয়ে তাদেরকে জাতীয় ভেরিফিকেশন কার্ড নিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা গণহত্যায় অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা মিয়ানমারের পক্ষে অসম্ভব বলে জানায় সংগঠনটি।

ফোর্টিফাই রাইটসের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারকর্মী জন কুইনলি বলেন, মিয়ানমার কয়েকটি কমিটি গঠন করেছে। একটি কমিটিও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘটা নৃশংতা নিয়ে নিরপেক্ষ প্রতিবেদন দিতে পারেনি। তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় বিচার সম্ভব নয়। এ জন্য অবশ্যই আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ জরুরি। এর মধ্যেই, কোটি কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ নিয়ে রোহিঙ্গা গণহত্যায় অভিযুক্ত মিয়ানমারের পাশে দাঁড়িয়েছে চীন। চীনা প্রেসিডেন্টের দু’দিনের মিয়ানমার সফরে দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডরসহ স্বাক্ষর হবে বেশ কয়েকটি চুক্তি। পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে ১৩০ কোটি ডলারের গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, পূর্বদিকে দ্রুতগামী ট্রেন এবং বাণিজ্যিক নগরী ইয়াঙ্গুনে আরো কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিষয়ে চুক্তির কথা রয়েছে দু’পক্ষের।