সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারে সাতদিনের আল্টিমেটাম

প্রকাশিত: ৭:৩৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : চ্যা‌নেল নাইনের অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান ‘নাইন ইনভেস্টিগেশন’ এর প্র‌তিবেদক মাহমুদ হোসাইনের ওপর হামলার মামলার আসামীদের সাত দিনের মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে ঢাকায় কর্মরত সাধারণ সংবাদকর্মীবৃন্দ।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে চিহ্নিত আসামীদের গ্রেফতার করা না হলে ডিএমপি কমিশনার, আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয় বরাবর পদযাত্রা, স্মারকলিপি, গণস্বাক্ষর কর্মসূচির মতো বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

মানববন্ধনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, দেশে যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা তা স্থমিত করতে দুর্নীতিবাজ, ভুয়া গণমাধ্যমের একটি চক্র বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ সংক্রান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর চ্যা‌নেল নাইনের অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান ‘নাইন ইনভেস্টিগেশন’ এর প্র‌তিবেদক মাহমুদ হোসাইনের ওপর রাতের অন্ধকারে হামলা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, হামলার ঘটনায় রাতেই মামলা হলেও চিহ্নিত অপরাধীদের কাউকে গত সপ্তাহেও খিলগাঁও থানা পুলিশ গ্রেফতার করে নি। উপরন্তু সিএমপি কমিশনার মামলায় আত্মীয় আসামীর পক্ষাবলম্বন করে তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন।

তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই সাংবাদিক মাহমুদ হোসাইনের উপর হামলায় জড়িত আসামীদের এক সপ্তাহের মধ্যে যদি গ্রেফতার করা না হয় তাহলে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সকল সাধারণ সাংবাদিকদের সাথে কঠোর ও দুর্বার আন্দোলন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের লজ্জা হয়, একজন পেশাদার ও অনুসন্ধানি সাংবাদিকের উপর হামলা ও মামলার পরও আসামীরা গ্রেফতার হয় নি উল্টো হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এটা কোনোভাবে মেনে নেয়া হবে না। এই হামলার পর মামলা তুলে নিতে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ফোন করেন কোন সাহসে। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। হামলায় জড়িতরা যতোই প্রভাবশালী হোক না কেন গ্রেফতার করুন অন্যথায় বিকল্প ও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সহ-সভাপতি আজমল হক হেলাল বলেন, একজন সংসদ সদস্য ও একজন পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয়ে প্রভাব দেখিয়ে হামলা হয়েছে। আবার মামলা তুলে নিতে যে কর্মকর্তা কল করেছেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে আইজিপির প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

অতীতে অনেক হামলার ঘটনা ঘটেছ। সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার আমরা পাইনি। আর এটা হতে দেয়া হবে না। খিলগাঁও থানা পুলিশ যদি আসামী ধরতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা খিলগাঁও থানা, ডিএমপি কমিশনার কার্যালয় ও আইজিপি কার্যালয় বরাবর পদযাত্রা কর্মসূচিতে যাবো।

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদ নিজাম বলেন, এর আগে আমরা হেলমেট বাহিনী কর্তৃক সাংবাদিকদের উপর হামলা হতে দেখেছি। কিন্তু বিচার তো দূরে সনাক্তকৃত কোনো আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করে নি। এই যে বিচারহীনতা, সাংবাদিক নির্যাতনের পর আসামীদের পার পাওয়া তা পুলিশ প্রশাসন কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। বরং এবার সাংবাদিক মাহমুদ হোসাইনের উপর হামলায় খোদ সিএমপি কমিশনার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে আসামী আত্মীয় বলে তার পক্ষাবলম্বন করেছেন। মামলা প্রভাবিত করায় নিন্দা জানান তিনি।

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী কমিটির সদস্য বাতেন বিপ্লব বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সমাজের অন্যায়গুলো তুলে ধরায় অনেকবারই নির্যাতন চালানো হয়েছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের। কিন্তু বিচার মেলে নি। আমরা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী পরিষদ সদস্য গোলাম মুজতবা ধ্রুব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকাও প্রধানমন্ত্রী বারবার জোর দিয়েছেন। কিন্তু সাংবাদিক নির্যাতন সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায়। সাংবাদিক মাহমুদকে যারা নির্যাতন করেছে তারা অপরাধী। তাদের পরিচয়ও সনাক্ত। আমরা আশা করছি নেতৃবৃন্দের ঘোষণা অনুযায়ী পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, চ্যানেল নাইনের সিনিয়র রিপোর্টার তাইমুর হাসান শুভ, মীর্জা রুমন, আগামী নিউজের মোস্তাফিজুর রহমান সুমন, আরটিভির মিঠুন চৌধুরী, সারা বাংলার প্রধান অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদক উজ্জল হোসেন জিসান, আমাদের সময় ডটকমের স্টাফ রিপোর্টার সুশান্ত সাহাসহ শতাধিক সাংবাদিক।

উল্লেখ্য, গত ১১ জানুয়ারি রাত পৌ‌নে ১০ টায় রামপুরার ই ব্লকের ৬ নম্বর রোডে এ চ্যা‌নেল নাইনের অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান ‘নাইন ইনভেস্টিগেশন’ এর প্র‌তিবেদক মাহমুদ হোসাইনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই রাতে চ্যানেল নাইনে অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান ‘নাইন ইনভেস্টিগেশন’ এর প্রথম পর্ব‌টি প্রচা‌রিত হয়। অনুসন্ধানী প্র‌তি‌বেদন‌টি প্রচার করায় দুর্বৃত্তরা হামলা করে বলে মনে করেন নির্যাতিত সাংবাদিক মাহমুদ।

তিনি বলেন, জাস্ট একটা ইস্যু তৈরি করে হামলার পায়তারা করা হচ্ছিল। পাঠাও চালান না, অ্যাপসে চেষ্টা করার কথা বলতেই জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে একজন উঠে পড়ে। যেখানে যেতে বলা হবে সেখানেই যেতে হবে বলে বাধ্য করার চেষ্টা করে। প্রতিবাদ জানালে সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ভাই মনির পরিচয়ে মারধর শুরু করে৷ পরে আরও কয়েকজন এসে পুলিশের উপস্থিতিতে কিল-ঘুষি মারে। এসময় রামপুরা বনশ্রীর কল্যাণ সমিতির সাবেক প্রচার সম্পাদক লেবুর পরিচয়ে আরও ২/৩জন হামলায় অংশ নেয়। পরে পরিস্থিতি বুঝে তরিৎ সেখানে বেড়িয়ে যাই রামপুরা থানায় আশ্রয় নেই। সেখান থেকে খিলগাঁও থানায় আসি। এব্যাপারে রামপুরা থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা হয়েছে। মামলা নং ১৭।