ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ৩০ কিলোমিটার বর্জ্যের ভাগাড়,দুর্ভোগে যাত্রীরা

প্রকাশিত: ১০:১৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : ময়মনসিংহ বিভাগের সাথে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত ও সহজতম করতে বর্তমান সরকার জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ৮৭ কিলোমিটার এলাকা চার লেনে উন্নীত করে বিগত ২০১৬ সালে। কাজ শেষে এই সড়ক বিভাজনে নানা বাহারী জাতের ফুল গাছ রোপনের মাধ্যমে এর সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হয়। ফুলের গাছগুলো এখন যৌবনে পরিপূর্ণ। বছরের নানা সময়ে যেমন ফুল ফুটে সৌন্দর্যমন্ডিত করে সড়কের পরিবেশ, তেমনি ফুলের ঘ্রানে শিহরণ জাগাতো পরিবহন যাত্রীদের মাঝে। তবে এখন আর সে দৃশ্য আর নেই।

মহাসড়কের পাশে বর্জ্য অপসারনের কারনে বিবর্ন হয়ে পড়েছে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশের ৩০ কিলোমিটার এলাকা। এছাড়াও গাজীপুর সিটিকর্পোরেশন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, গাজীপুর বাইপাস-মীরের বাজার সড়কের বিভিন্ন অংশে নিয়মিত বর্জ্য অপসারন করে যাচ্ছে। এতে একদিকে সরকারের উন্নয়নকাজ আড়ালে চলে যাচ্ছে অপরদিকে পরিবহন যাত্রী ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সারা দেশের মধ্যে শিল্পকারখানা সমৃদ্ধ গাজীপুর এখন অধিক জনবহুল একটি জেলা। বর্তমানে জেলা জুড়েই রয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনার চরম অভাব। বর্জ্য অপসারনের কোন ব্যবস্থা না করেই অপরিকল্পিত নগরায়ন হচ্ছে জেলা জুড়েই। বর্জ্য অপসারনের কোন নির্দ্দিষ্ট স্থান না থাকায় গত কয়েকবছর ধরেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ৩০ কিলোমিটার জুড়েই তৈরী হয়েছে বর্জ্যরে ভাগাড়। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও শিল্পকারখানা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত বর্জ্য অপসারন করছে মহাসড়কের পাশে সড়ক বিভাগের অব্যবহৃত জমিতে। এসব বর্জ্যরে নানা প্রাণী বর্জ্য, শিল্পকারখানার বর্জ্য, পোলট্রি বর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য, রাসায়নিক বর্জ্য ও বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ীর সংগৃহিত বর্জ্য থাকায় এতে তৈরী হয় প্রচন্ড দুর্ভোগ।

এছাড়াও মহাসড়কের পাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠা বিভিন্ন বাজারের বর্জ্যও নিয়মিত অপসারন করা হচ্ছে মহাসড়কের পাশে। মহাসড়ক ঘেঁষে বর্জ্য অপসারনের স্থানগুলো হচ্ছে গাজীপুর সিটি এলাকার নাওজোড়, সালনা, গাজীপুর সদর উপজেলার রাজেন্দ্রপুর, ভবানীপুর, হোতাপাড়া শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ী, এমসি বাজার, জৈনা বাজার এলাকা। এদের মধ্যে শ্রীপুর পৌরসভা গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ী এলাকায় মহাসড়কের উপর নিয়মিতভাবে বর্জ্য অপসারন করে যাচ্ছে। এর বাহিরেও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কড্ডা বাইমাইল, জয়দেবপুর বাইপাস-মীরের বাজার সড়কের ঝাঝর, টঙ্গী-কালিগঞ্জ সড়কের মরকুন এলাকায় মহাসড়কের মধ্যে নিয়মিত বর্জ্য অপসারন করায় দুর্ভোগ প্রকট আকার ধারন করেছে।

গাজীপুর সিটি সালনা এলাকার বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি প্রভাতে ঢাকা-ময়মনিসংহ মহাসড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে বেড়াতেন, এছাড়াও বিভিন্ন গন্তব্যে হাঁটাকে তিনি প্রাধান্য দিতেন। কিন্তু এখন আর সেই পরিবেশ নেই। মহাসড়কের পাশে নিয়মিত বর্জ্য অপসারন করায় দুর্গন্ধে এখন হাঁটা দায়।

বেসকারী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার বেনজীর আহমেদ জানান, তার বাড়ী বগুড়া হওয়ায় তাকে প্রতি সপ্তায় বাড়ী যেতে হয়। গাজীপুর শহর থেকে বেরুলেই কড্ডা এলাকায় মহাসড়কের পাশে বর্জ্যরে দুর্গন্ধের সাথে যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাকে গত কয়েক বছর ধরে। নাক চেপে এই পথ অতিক্রম করতে তার মত প্রতিটি পরিবহনের যাত্রীদের নাভীশ্বাস উঠে যায় যাতায়াতের সময়।

গাজীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু নাছের জানান, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে এমসিবাজারে বর্জের স্তুপ স্থাপন করা হয়েছে। রাতের আঁধারে বিভিন্ন স্থান থেকে পরিবহনযোগে বর্জ্য এনে এখানে অপসারন করা হচ্ছে। বর্জ্যরে দুর্গন্ধে আশপাশে যেমন টেকা দায় তেমনি পথচারীদেরও দুর্ভোগ নিত্যদিনের সঙ্গী। এই বর্জ্যরে কারনে সড়ক লাগুয়া তার জমিতে এখনও তিনি কিছু করতে পারছেন না।

একই অবস্থা মাষ্টারবাড়ী এলাকায়, সেখানে মহাসড়ক ঘেঁষে গত কয়েকবছর ধরেই শ্রীপুর পৌরসভা বর্জ্য অপসারন করছে। স্থানীয়রা নানাভাবে প্রতিবদা করেও এই বর্জ্য অপসারন বন্ধ করতে পারেনি।

আলম এশিয়া পরিবহনের চালক মফিজুল ইসলাম জানান, কিছুদিন আগেও মহাসড়ক ধরে গাড়ী চালানোর সময় সড়ক বিভাজনের উপর ফুটে থাকা ফুলের ঘ্রান পেতাম, যাত্রীরাও পুলকিত হতো। সড়কের উন্নয়ন নিয়ে যাত্রীরা সরকারের প্রশংসা করতো। এখন বর্জ্যরে দুর্গন্ধে গাড়ী চালাতে অনিহা চলে এসেছে সাথে যাত্রীরাও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) গাজীপুর জেলার সাধারন সম্পাদক হাসান ইউসুফ খাঁন জানান, পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে এভাবে সড়ক ঘেঁষে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নজির নেই। হাজার কোটি টাকা খরচ করে জনদুর্ভোগ লাগবে সরকার সড়কের উন্নয়ন করলেও সড়কের পাশে বর্জ্য অপসারন করায় দুর্গন্ধে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রকাশ্য জনারণ্য স্থানে এভাবে বর্জ্য অপসারনে পরিবেশ যেমন দূষিত হয়ে সংক্রামক ব্যাধি ছড়ানোর আশংকাও রয়েছে। তেমনি দুর্গন্ধে সড়ক ধরে চলা লোকজনদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রীন ও ক্লিন গাজীপুর গড়ার উদ্যোগে ভাটা টানছে এ ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।

গাজীপুর সড়ক জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুদ্দিন জানান, এভাবে সড়কের পাশে বর্জ্য অপসারন করা সত্যিই দুঃখ জনক বিষয়। আমরা কোনভাবেই এটা বন্ধ করতে পারছি না,একাজে আমরা অনেকটা ব্যার্থ হয়ে যাচ্ছি। সরকারের প্রতিটি দপ্তরে, সভায় সড়কের পাশে বর্জ্য অপসারন বন্ধে যোগাযোগ করেও কোন ফল পাইনি। তাই এ বিষয়ে সমাজ সচেতন মানুষকে এগিয়ে আসা এখন খুব প্রয়োজন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া বর্জ্য অপসারন বন্ধ করা যাবে না।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস সালাম সরকার জানান, পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার সড়কের পাশে বর্জ্য অপসারন বন্ধে আমরাও সিটি কর্পোরেশন ও বিভিন্ন স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানকে পত্র প্রেরণ করেছি। যদিও তারা এখনও বর্জ্য অপসারন বন্ধ করেনি।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম সোহরাব হোসেন জানান, বিশাল জনগোষ্ঠির গাজীপুরে পূর্ব থেকেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় সড়কের পাশেই বর্জ্য অপসারন করা হচ্ছে। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনরে উদ্যোগে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অচিরেই মহাসড়কের পাশে বর্জ্য অপসারন বন্ধ করা হবে।