তারেকসহ ১৫ আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে : সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২:০৪ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৪, ২০২৪

অনলাইন ডেস্ক : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ১৫ সাজাপ্রাপ্ত আসামি পলাতক রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তাদের গেপ্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সরকার দলীয় এমপি ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়।ফরিদা ইয়াসমিনের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়াসহ সাজাপ্রাপ্ত ১৫ জন আসামি বর্তমানে পলাতক রয়েছে। বিদেশে পলাতক আসামি মাওলানা তাজউদ্দীন, হারিছ চৌধুরী (প্রয়াত) ও রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবুদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা আছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ৫২ জনকে আসামি করে দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রায় ঘোষণার আগে অভিযোগপত্রভুক্ত ৫২ জন আসামির মধ্যে ৩ জন আসামির অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গত ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এই রায় ঘোষণা করেন। বিচারে ৪৯ জন আসামির সাজা হয়, যার মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। সাজাপ্রাপ্ত ৪৯ জন আসামির মধ্যে ৩৪ জন আসামিকে আটক করা হয়েছে।’ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর
স্বতন্ত্র এমপি আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রতিষ্ঠিত অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৫৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এবং ১৫৩ জন আসামির মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সঠিক বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ধনী, গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সমতার ভিত্তিতে সুবিচার নিশ্চিত করা এবং বিচার ব্যবস্থায় দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধন করে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর।’

তিস্তা প্রকল্পের কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হামিদুল হক খন্দকারের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় সমীক্ষা সম্পন্ন করে পিডিপিপি (প্রাক্-উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) তৈরি করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হয়েছিল ২০২০ সালে। ২০২১ সালের মার্চে ঢাকায় চীনা দূতাবাসের মাধ্যমে চীন সরকারকে সফট লোন (সহজ শর্তে ঋণ) সাহায্যের অনুরোধ জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই পিডিপিপির বিষয়ে চীন সরকার ২০২৩ সালের ৫ মার্চ একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন ইআরডিতে পাঠায়। ওই প্রতিবেদনে বড় আকারের ভূমি উন্নয়ন এবং নৌ চলাচল ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে অধিকতর বিশ্লেষণ না থাকা এবং বড় আকারের বিনিয়োগের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। চীন সরকার প্রকল্পটি পর্যায়ভিত্তিক বাস্তবায়নের জন্য আরও বিশদ সমীক্ষার বিষয়ে পরামর্শ দেয়। পাওয়ার চায়না কর্তৃপক্ষ চীন সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক গত বছরের ২৭ আগস্ট সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন সংশোধনের প্রস্তাব বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রেরণ করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’

বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রকল্প
বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অধিক বজ্রপাত প্রবণ ১৫টি জেলায় বজ্রপাতের ফলে সৃষ্ট প্রাণহানি রোধে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান আছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার ৭৯৩টি বজ্রনিরোধক দণ্ড বা বজ্র নিরোধক ছাউনি স্থাপন প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।’

ফেনী-১ আসনের সরকারদলীয় এমপি আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি হতে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ৪ হাজার ৭১১টি (স্থানীয় ৪ হাজার ১৩০ এবং বৈদেশিক ৫৮১টি) শিল্প প্রকল্পের নিবন্ধন দিয়েছে। যাতে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৩৭ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন টাকা। এতে ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫৬ জনের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নিবন্ধনকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ২০২২ সালের জানুয়ারি হতে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৪৩টি দেশ হতে ২৩ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে।’ অপরদিকে ২০২২ সালের জানুয়ারি হতে গত ডিসেম্বর (২০২৩) পর্যন্ত সরাসরি বিনিয়োগ হিসেবে ৬ হাজার ৪৮৪ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার পাওয়া গেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

সরকার দলীয় এমপি চয়ন ইসলামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরে নারীবান্ধব বিভিন্ন নীতি-কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে নারী শিক্ষার্থীদের সুবিধা প্রভূত বেড়েছে। এতে নারী শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া হ্রাস পেয়েছে।’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থী ও নারী শিক্ষকের সংখ্যা বেড়েছে। একইসঙ্গে প্রশিক্ষিত নারী শিক্ষকের সংখ্যাও বেড়েছে বলে উল্লেখ করেন টানা চার মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী।