ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস, শিলাবৃষ্টিও হতে পারে

প্রকাশিত: ৪:০৪ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০২৪

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীতে শনিবার সকালে একদফা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। আকাশও ছিল মেঘাচ্ছন্ন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেঘ কিছুটা কাটলেও রোদের দেখা মেলেনি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এ রকম মেঘলা আকাশ সারাদেশেই কম-বেশি থাকবে। পাশাপাশি আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির প্রবণতাও বাড়বে।

বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপও তৈরি হতে পারে।

এদিকে শনিবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। কমেছে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদও। এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় বাগেরহাটের মোংলায় ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩১ দশমিক ৪ ডিগ্রি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের শনিবার সন্ধ্যায় দেওয়া পরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় এবং রংপুর, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্য এলাকায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়েছে, চলমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি দেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাংশের কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে। তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়েছে, সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী,

ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি কমতে পারে। একই সঙ্গে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

এর আগে শনিবার সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, ‘সাধারণত মে ও জুন মাসে বঙ্গোপসাগরে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়ে থাকে। এটা বর্ষাপূর্ব ও বর্ষা-পরবর্তী সময়ে হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আশঙ্কা করছি, ২০ তারিখের পরবর্তী সময়ে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ তৈরি হতে পারে। এটি আরও ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যেসব প্যারামিটারের ওপর ভিত্তি করে এর গতিবিধি ও প্রভাব পরিমাপ করা যায়, আমরা সেসব বিষয়ে নজর রাখছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানানো হবে।’

এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছিল, ঘূর্ণিঝড়ের বিভিন্ন মডেল পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ২১ তারিখের পর দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটা ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হতে পারে।

ভারতীয় আবহাওয়া অফিস ‘মৌসুম ভবন’ পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২০ মে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হতে পারে। সেটি সোজা উত্তর দিকে শক্তি বৃদ্ধি করবে। ২৪ মে এটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে। ২৫ মে সন্ধ্যার পর ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসতে পারে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় তৈরির জন্য যেমন সাগরের পানির তলার তাপমাত্রা ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে হয়। কমপক্ষে ৫০ মিটার গভীরতা অবধি এই তাপমাত্রা থাকতে হয়। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে একেবারে এ ধরনের তাপমাত্রাই রয়েছে। সাগরের পানির তাপমাত্রা ৩০-৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি রয়েছে। এই গরম পানিকেই ঘূর্ণিঝড়ের ‘চালিকাশক্তি’ বলে মনে করা হয়। দফায় দফায় নিম্নচাপের শক্তিবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২৪ মের পর থেকে তা গভীর নিম্নচাপের আকার নেবে।

এর আগে গত ১৪ মে ‘মৌসম ভবন’ জানিয়েছিল বঙ্গোপসাগরে তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’, যা মে মাসের শেষের দিকে উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ গণমাধ্যমে বলেন, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় মূলত বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে ও শেষ হয়ে যাওয়ার পরে। বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ শুরু হয় সাধারণত ৩০ মের পর থেকে ৭ জুনের মধ্যে।

বিভিন্ন আবহাওয়া মডেল বিশ্লেষণ করে এই আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ জানান, ২০ থেকে ২৭ মের মধ্যে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের প্রবল আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে।