আখাউড়া চেকপোস্টে ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণ কাজে ফের বিএসএফের বাঁধা

প্রকাশিত: ৬:২৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০২০

অনলাইন নিউজ ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর চেকপোস্ট এলাকায় বাংলাদেশ পুলিশের ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণ কাজ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃপক্ষের ফের বাধার মুখে বন্ধ রয়েছে। গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ত্রিপুরা বিএসএফ কর্তৃপক্ষ ভবন নির্মাণে বাধা দেওয়ায় এ নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

তারা বলছে, বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃপক্ষের যে নকশায় ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে তা করা যাবে না। নকশা সংশোধন করে ভারতীয় বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তবেই ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করতে হবে। যদিও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃপক্ষ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন ‘আখাউড়া স্থলবন্দর চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণে ভূমি থেকে ৩৫ফিট উচুঁ পর্যন্ত করা যাবে। বর্তমানে যে নকশা বা ড্রয়িং ধরে নির্মাণ কাজ চলছিলো ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃপক্ষের বাধায় তা বন্ধ রয়েছে’। তবে এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু করবেন বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

অবশ্য জানতে চাইলে সরাইল বিজিবির ২৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কবির বলেন, দুই দেশের সমঝোতার মাধ্যমে নতুন নকশায় আখাউড়া ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণ কাজ করা হবে। দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়টি জানিয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এলেই ফের কাজ শুরু হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ওয়ার্ক অর্ডারের পর আখাউড়া স্থলবন্দর চেকপোষ্টে ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে মেসার্স বিজনেস সিন্ডিকেট ইন্টারন্যাশনাল কনষ্ট্রাকশন লিমিটেড নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তখন ইমিগ্রেশন ভবন এলাকায় নির্মাণ সামগ্রী রাখার শুরুতেই ২০১৭ সালের ১১ মার্চ ভারতের বর্ডার নিরাপত্তা বাহিনী বিজিবির মাধ্যমে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার পর পুলিশ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র নিয়ে প্রায় তিন বছর পর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ভবন নির্মাণের কাজ ফের শুরু করা হয়। ৬ কোটি ২৫লাখ টাকা ব্যয় ধরে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়া ইমিগ্রেশন ভবনের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। এরই মধ্যে দ্বিতীয় দফায় নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় ভারতীয় বিএসএফ। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তাও ঠিক করে বলতে পারেনি কোন সংস্থা। এতে আমরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

সরেজমিন পরিদর্শনে স্থানীয় বিজিবি ও ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তের ওপারে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনের পশ্চিম পাশে বিএসএফ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সীমানার গা ঘেঁষে বিএসএফ ক্যাম্পের স্থায়ী বিভিন্ন ভারী স্থাপনার কাজ চলছে। বিএসএফ বাংলাদেশ সীমানা ঘেঁষে প্রাচীর গড়ে তুলেছেন অনেক আগেই। এদিকে ত্রিপুরা সীমান্তজুড়ে কাঁটাতারের বেড়ার পাশে সুপ্রশস্ত সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোষ্ট।

অপরদিকে আন্তর্জাতিক সীমানা লংঘন করে চেকপোস্ট বিএসএফ ক্যাম্পের উত্তর পাশে- ২০০০/২৩, ৬এস মেইন পিলার বরাবর কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করেছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ৭১’মুক্তিযুদ্ধের প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত ও স্মৃতি বিজড়িত আখাউড়া দিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে ভারত-বাংলাদেশে উভয় দেশের নাগরিকরা যাতায়াত করছে। বিশেষ করে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন ষ্টেশন হয়ে ট্রেন যোগে চলাচলের সুবিধা থাকায় ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে উঠে। বর্তমানে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা বিমান বন্দর হয়ে ভারতে যাতায়াত সুবিধা থাকায় যাত্রী পারাপার বেড়েছে। তাই চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট থেকে অনেকেই যাতায়াতে আখাউড়া ইমিগ্রেশন ব্যবহার করছেন। ২০১৯ সালের শেষ পাঁচ মাস অর্থ্যাৎ গত আগষ্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে যায় ৭১হাজার ৬৫৩জন পাসপোর্টধারি যাত্রী বাংলাদেশী। আর ভারতীয় ও অন্যান্য দেশের ৫২হাজার ১৩৫জন বিদেশি বাংলাদেশে আগমন করেন। এর মাধ্যমে ভ্রমণ কর বাবত বাংলাদেশ সরকার আয় করেছে ৩ কোটি ৫৮লাখ ২৬হাজার ৫শ টাকা। চলতি বছর ২০২০ সালে এই লক্ষ্যমাত্রা আরো ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন আখাউড়া কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

আখাউড়া স্থলবন্দর চেকপোষ্ট স্থায়ী কাঠামো ও ইমিগ্রেশন সেন্টার নির্মাণ হলে এ পথে দুই দেশের মানুষের যাতায়াত আরো বাড়বে জানিয়েছেন আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোষ্টের ইনচার্জ এসআই আব্দুল হামিদ। তিনি জানান, বর্তমানে আখাউড়া ইমিগ্রেশন ভবন নামমাত্র টিকে রয়েছে। সংস্কার করে কোন মতে ঝুঁকি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হচ্ছে। স্থায়ী ভবন তৈরি হলে এ চেকপোষ্ট সীমান্ত পথে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের নাগরিকের পাশাপাশি বিদেশিদের আসা যাওয়া আরো বেড়ে যাবে।