২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৭৯০২ জন

প্রকাশিত: ১২:১১ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৫, ২০২৪

অনলাইন ডেস্ক : বিদায়ী ২০২৩ সালে ৬২৬১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৯০২ জন নিহত, ১০৩৭২ জন আহত হয়েছেন। রোববার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, একই সময় রেলপথে ৫২০টি দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত, ৪৭৫ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১৪৮টি দুর্ঘটনায় ৯১ জন নিহত, ১৫২ জন আহত এবং ১০৯ জন নিখোঁজ রয়েছে। একই সময়ে ২০৩১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২১৫২ জন নিহত ও ১৩৩৯ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, নিহতের ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ও আহতের ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৬৯২৯টি দুর্ঘটনায় ৮৫০৫ জন নিহত এবং ১০৯৯৯ জন আহত হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে প্রতি বছরের ন্যায় এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে দেখা যায়, বিগত ০৯ বছরে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা ৪ থেকে ৫ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও ত্রি-হুইলার সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচলের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে।সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ১৯৫০ জন চালক, ৯৬৮ জন পথচারী, ৪৮৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৯৭ জন শিক্ষার্থী, ৯৭ জন শিক্ষক, ১৫৪ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯৮৫ জন নারী, ৬১২ জন শিশু, ৩০ জন সাংবাদিক, ৩২ জন চিকিৎসক, ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, আট জন আইনজীবী ও ১০ জন প্রকৌশলী এবং ১১১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।

এর মধ্যে নিহত ৭৩ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ১৬ জন সেনা সদস্য, ৪০ জন পুলিশ সদস্য, একজন র‌্যাব সদস্য, সাত জন বিজিবি সদস্য, তিন জন নৌ-বাহিনীর সদস্য, তিন জন আনসার সদস্য, দু’জন ফায়ার সাভিস সদস্য, একজন এনএসআই সদস্য, ১৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ১৫ জন সাংবাদিক, ৬৪৭ জন নারী, ৪৬৬ জন শিশু, ৪১৬ জন শিক্ষার্থী, ৮১ জন শিক্ষক, ১৫২৬ জন চালক, ২৬০ জন পরিবহন শ্রমিক, আট জন প্রকৌশলী, সাত জন আইনজীবী, ৭৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ২২ জন চিকিৎসক।

এ সময়ে সংগঠিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৮৫৫০টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে, যার ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ বাস, ২৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস, ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২৬ দশমিক ০২ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে দুর্ঘটনায় সংগঠিত যানবাহনের ১১ দশমিক ২২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক, ২ দশমিক ৮২ শতাংশ বাস সড়কে দুর্ঘটনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস, ২৩ দশমিক ২২ শতাংশ নসিমন-মাহিন্দ্রা-লেগুনা, ২৩ দশমিক ০৩ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ১৯ দশমিক ০৯ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরি সড়কে দুর্ঘটনা বিগত বছরের চেয়ে কমেছে।

সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫২ দশমিক ৮৩ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা, ২০ দশমিক ৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ১১ দশমিক ৪ শতাংশ বিবিধ কারণে, ০ দশমিক ২৭ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ০ দশমিক ৬৮ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিগত ২০২২ সালের তুলনায় বিদায়ী ২০২৩ সালে ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ গাড়ি চাপা, ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩৭ দশমিক ০৩ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেছিয়ে, ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ৩৫ দশমিক ০২ শতাংশ, ১৬ দশমিক ০৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা কমেছে। এছাড়া বিবিধ কারণে ১৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ দুর্ঘটনা বেড়েছে।

দুর্ঘটনার ধরণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছর মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১ দশমিক ১১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে, ০ দশমিক ৬৮ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।

বিগত বছরের চেয়ে বিদায়ী বছরে ছোট যানবাহনের সংখ্যা হঠাৎ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়া ও এসব যানবাহন অবাধে চলাচলের কারণে ফিডার রোডে ৫৫ দশমিক ১৯ শতাংশ, জাতীয় মহাসড়কে ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ, রেলক্রসিং-এ ০ দশমিক ১৬ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এবার আঞ্চলিক মহাসড়কে ৪৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ দুর্ঘটনা কমেছে।

২০২৩ সালে ঢাকা বিভাগে ১৭৩৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭১২ জন নিহত, ২৩৮১ জন আহত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে ১২৩৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২০৫ জন নিহত, ২২৯৪ জন আহত হয়েছে। খুলনা বিভাগে ৭৬৫ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৬৪ জন নিহত,১০৭৮ জন আহত হয়েছে। বরিশাল বিভাগে ৩৮১ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৯ জন নিহত, ৯৯২ জন আহত হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগে ৪১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৪ জন নিহত, ৬৬৫ জন আহত হয়েছে। সিলেট বিভাগে ৩৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৩ জন নিহত, ৯২৬ জন আহত হয়েছে। রংপুর বিভাগে ৫৬৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬২৬ জন নিহত, ৮৬৮ জন আহত হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে ৭৮৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৯৩ জন নিহত, ১১৬৮ জন আহত হয়েছেন।

বিদায়ী বছরে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ১৭ জানুয়ারি, এই দিনে ৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়েছেন। ২৬ মার্চ সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে, এই দিনে নয়টি সড়ক দুর্ঘটনায় আট জন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছে। দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে ০৭ জুলাই, এই দিনে ৩০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১ জন নিহত ও ৯৮ জন আহত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে ০৪ মার্চ, এই দিনে ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত ও ১৪৮ জন আহত হয়েছে।