৭২ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার মামলায় ৩ জনের ফাঁসি, ২ জনের যাবজ্জীবন

প্রকাশিত: ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৭, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : যশোরের শার্শা সীমান্ত থেকে ৭২ কেজি ৪শ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধারের মামলায় রায় হয়েছে। মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড, দুই ভারতীয় নাগরিকের যাবজ্জীবন ও অপর ৪ আসামির ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড আদেশ দিয়েছেন যশোরের একটি আদালত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক মো. তাজুল ইসলাম এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডিতদের মধ্যে ৬ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- যশোরের শার্শার শিকারপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার তোফাজ্জেল হোসেন তরফদারের ছেলে মহিউদ্দিন তরফদার, জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম, নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেরে মুজিবুর রহমান।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- ভারতীয় নাগরিক ভারতের গোকর্ন গ্রামের মাঝের পাড়ার আলী হোসেন সরদারের ছেলে মাসুদ রানা, ২৪ পরগনা জেলার বাগদা থানার গাংগুলিয়া গ্রামের নুর জালাল মণ্ডল।

১৪ বছরের সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- শার্শার আব্দুল মোমিনের ছেলে ইমরান হোসেন, আব্দুল কাদেরের ছেলে রুবেল হোসেন, রামচন্দ্রপুর গ্রামের নওসাদ আলীর ছেলে কবির হোসেন ও ওরফে মেছের আলীর ছেলে এবং যশোরের শার্শার কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল মণ্ডল ওরফে মোল্যা ওরফে লিদু।

এ বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের এপিপি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, যশোর অঞ্চলের এই যাবতকালের সবচেয়ে বড় সোনা চালানের মামলায় দৃষ্টান্তমূলক রায় হয়েছে। এই রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট।

এদিকে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের স্বজনেরা রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই রায়ে তারা অসন্তুষ্ট। তারা উচ্চ আদালতে যাবেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আরিফুল ইসলাম শান্তি বলেন, সরকার যে দ্রুত বিচার ব্যবস্থা কার্যকর করেছে, এতে বিচারকরা সঠিকভাবে মামলা তদন্ত করতে পারছে না। ফলে আসামিপক্ষ প্রকৃত রায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা এই রায়ের বিপক্ষে আপিল করব।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট রাতে শার্শার শিকারপুর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্য হাবিলদার মুকুল হোসেন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন একদল চোরাকারবারি সোনা নিয়ে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাবে। এরপর তারা নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের সীমান্ত পিলারের পাশে অবস্থান নেন। রাত ১০টার দিকে কয়েকজন লোক নারিকেলবাড়িয়া মাঠের মধ্য দিয়ে ভারতের দিকে যাওয়ার সময় তাদের চ্যালেঞ্জ করে বিজিবি।

এ সময় মহিউদ্দিন নামে একজনকে আটক ও দুইজন ব্যাগ ফেলে পালিয়ে যায়। মহিউদ্দিনের কাছে থাকা ব্যাগ থেকে ২২৪ পিস সোনার বার ও ফেলে যাওয়া দুইটি ব্যাগ থেকে ৪০০ পিস সোনার বার উদ্ধার করা হয়। যার ওজন ৭২ কেজি সাড়ে ৪শ গ্রাম। পরদিন শিকারপুর বিওপির বিজিবির হাবিলদার মুকুল হোসেন বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখসহ অপরিচিত ব্যক্তিদের আসামি করে চোরাচালান দমন আইনে শার্শা থানায় মামলা করেন।

মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ পরে সিআইডি তদন্তের দায়িত্ব পায়। এ মামলার তদন্তকালে আটক আসামিদের দেওয়া তথ্য ও সাক্ষীদের বক্তব্যে সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকায় ওই ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে এ মামলায় মহিউদ্দিন তরফদার শান্তি, জাহিদুল ইসলাম ও মুজিবুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, ভারতীয় নাগরিক মাসুদ রানা ও শফিকুল মণ্ডলকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং সাফি, ইমরান হোসেন, কবির হোসেন ও রুবেল হোসেনকে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।