ঘৃণাভরে তফসিল প্রত্যাখ্যান করলো বিএনপি

প্রকাশিত: ১:১৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি।

বুধবার (১৫ নভেম্বর) রাতে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তফসিল ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় এ তথ্য জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সিলেকশন ভোটের তফসিল ঘোষণা করে জাতির সঙ্গে চরম তামশা করেছে বলেও জানান তিনি।

রিজভী বলেন, গোটা বাংলাদেশের প্রত্যাশা, জনমত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর্যুপরি আহ্বান উপেক্ষা করে নিশিরাতের সরকারের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের তামাশার তফসিল ঘোষণা করেছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে অতীতের মতোই আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের জন্য মেরুদন্ডহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে, তা আমরা চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। দেশে একটি ভীতিকর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে হাসিনা মার্কা একতরফা নির্বাচনের এই তথাকথিত তফসিল-রঙ্গ জনগন মানে না। এই নীলনক্সার নির্বাচনের তফসিলে বাংলাদেশের মাটিতে কোন নির্বাচন হবে না। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল- বিএনপির পক্ষ থেকে আমি সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আবারো হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, এই অবিমৃষ্যকারিতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে যে ভয়াবহ অচলাবস্থা ও চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হবে তার পুরো দায়ভার তাদেরকেই বহন করতে হবে। এই সঙ্কটের কারণে আওয়ামী মাফিয়া চক্রকে চিরকাল দায়ী থাকতে হবে। জনগনের চলমান অগ্নিগর্ভ আন্দোলন আরো তীব্র, আরো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে এবং অতি দ্রুতই আওয়ামী নাৎসী সরকারের পতন ঘটবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠার পর এই সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার করবে জনগন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ভাষণে বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবেন। একথাতো ডাহা মিথ্যা, ভন্ডামীপূর্ণ এবং মেকী। শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বিশ্বাস করা চোরাবালিতে পড়ার সামিল।

রিজভী বলেন, পর পর তিনটি ভোট ডাকাতির নির্বাচনের মাধ্যমে সম্পূর্ন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে রেখে আওয়ামীলীগ গত ১৫ বছর দেশকে নরকপুরীতে ও জনগণের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসনে পিষ্ঠ মানুষ তাদের ভোট ও ভাতের অধিকার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ফিরে পেতে মরনপন লড়াইয়ে রাজপথে নেমেছে। জনগন ১৫ বছরের অত্যাচারের জবাব দিতে ঘুরে দাড়িঁয়েছে। এই স্বৈরাচারী সরকার পতনের অতল গহ্বরের মুখে দাড়িয়ে দেশকে নিশ্চিত সংঘাতের দিকে ধাবিত করে পূণরায় গরু-ছাগল দিয়ে নির্বাচনের পায়তারা করছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ব্যাতিত দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল একতরফা নির্বাচনের বিরোধীতা করছে। কার জন্য এই নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে? মানুষ রাজপথে নেমেছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবী, ১৮ কোটি মানুষের প্রাণের দাবী। এই দাবীকে বন্দুকের নলের মুখে উড়িয়ে দিয়ে এক তরফা পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে শেখ হাসিনা। আর এই নির্বাচন কমিশন সব জেনে-শুনেই দেশকে এক গভীর সঙ্কটের মধ্যে ঠেলে দিতে তফসিল ঘোষণা করলো। কারণ বর্তমান কমিশন নিশিরাতের ভোটের সরকারের মনোনীত সিলেকশন কমিশন। তারা আওয়ামী লীগের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, জনগণের কেউ নন। এই কমিশনকে কেউ মানে না। নির্বাচন কমিশন মূলত আওয়ামী কমিশন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আজ শেরে বাংলা নগরে আওয়ামীলীগের লগি-বৈঠার সন্ত্রাসী বাহিনীর পাহারা এবং রায়টকার, জলকামান, সজোয়া যান নিয়ে শত শত পুলিশ র‌্যাব-বিজিবি বেষ্টিত ইসি ভবনে বসে আওয়ামী চেতনার নিশান বরদার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে সিলেকশন ভোটের তফসিল ঘোষণা করে গোটা দেশকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করলো। অতীতে রাকিব- হুদা কমিশনের মতোই কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দলদাসত্বের চরম পরাকাষ্ট প্রদর্শন করে গণশত্রুতে পরিণত হলো। তারা শেখ হাসিনার নির্দেশে একটি অগ্রহণযোগ্য, একপেশে, প্রশ্নবিদ্ধ, বিরোধপূর্ণ নির্বাচনের চরম ধৃষ্টতা দেখানোর যে ঝুঁকি নিলো জনগণ এর পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। শেখ হাসিনা ভেবেছেন তার পা চাটা গোলামদের দিয়ে একটি পাতানো ভোট রঙ্গ মঞ্চস্থ করবেন। কিন্তু তার জেনে রাখা উচিত এটা ২০১৪ কিংবা ২০১৮ নয়। তফসিল দিলেন আর পুলিশী ভোটের মাধ্যমে ফল ঘোষণা করে ক্ষমতার সিংহাসন রক্ষা করলেন, এতো সহজ নয়। নির্বাচনের একটা ঘোষণা দিলেন, আর নির্বাচন হয়ে গেল! এই দিবা স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হবে না। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই হবে নির্বাচন। এই সব তফসিল-টপসিল বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেবে জনতা।

তিনি বলেন, রাজপথের দিকে তাকিয়ে দেখেন। গোটা দেশ অচল হয়ে গেছে। অবরোধে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ঢাকা। আপনার সমস্ত পোশাকী-অপোষাকী রক্ষী বাহিনী-লেঠেল বাহিনী নামিয়েও কিছুই করতে পারছেন না। কিভাবে পারবেন -বাংলাদেশের জনগন একদিকে আর আপনি আর আপনার লাঠিয়াল বাহিনী একদিকে। সাথে আছে কিছু পাইক পেয়াদা-নফর-চাপরাশি। তাঁরাও জনগনের আন্দোলনে আত্মসমর্পন করবে। এই উর্মিমুখর জনতরঙ্গ রুখবার ক্ষমতা আপনার নেই। কান পেতে পতনের বুলন্দ আওয়াজ শোনেন। বিদায়ের রাগিণী বাজছে। ক্রমে ঘনিয়ে আসছে অন্তিম সময়।

এর আগে এদিন সন্ধ্যায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তফসিল অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সাত জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির ৫ তারিখ পর্যন্ত।