বীর নিবাস নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না করার প্রতিবাদে মানববন্ধন

প্রকাশিত: ১২:২০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০২৩

ধর্মপাশা প্রতিনিধি : ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এক মানববন্ধন অনুষ্টিত হয়েছে। ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় নয়টি বীর নিবাস নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না করার প্রতিবাদে বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ব্যানারে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

এতে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদির, বীর মু্ক্তিযোদ্ধা জহুর আলী, ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তি যোদ্ধার সন্তান শামীম আহমেদ মুরাদ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ধর্মপাশা উপজেলা শাখার সভাপতি শরফরাজ আহমেদ খান পাঠান, সাধারণ সম্পাদক মোশারফ তালুকদার প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বীর নিবাস নির্মাণ কাজটি যে ঠিকাদার পেয়েছিলেন তিনি এই বীর নিবাস নির্মাণের কাজগুলো করছেন না। সুনামগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপির আপন ছোট ভাই ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকন এই কাজটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। তাই মেয়াদ শেষ হওয়ার মাসের পর মাস অতিবাহিত হলেও কাজ শেষ হয় না। এতে করে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকতে গিয়ে খুবই কষ্ট হচেছ। এই ঘটনাটি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা ছাড়া আর কিছুই নয়। আগামী ১৫দিনের মধ্যে এই নয়টি বীর নিবাস কাজ সম্পন্ন করা না হলে এ নিয়ে কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে বক্তারা হুশিয়ারি দেন। মানববন্ধন শেষে ইউএনওর কার্যালয়ে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

ধর্মপাশা উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জানা গেছে, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার আটটি গ্রামে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধােদের জন্য ৯টি বীর নিবাস নির্মাণ কাজের জন্য এক কোটি ২০লাখ ৯২হাজার ৫৫৯টাকা ব্যয়ে এই কাজটি পায় মেসার্স জব্বার বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ২৮ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব বীর নিবাস নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের সাতমাস পরও কাজ শেষ না হওয়ায় গত বছরের ১৮ অক্টোবর এই বীর নিবাস নির্মাণ কাজের ঠিকাদারের কার্যাদেশ ও চুক্তিনামা বাতিল এবং জামানত বাজেয়াপ্ত করে উপজেলা প্রশাসন। পরে এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে ঠিকাদার উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। উচ্চ আদালত চলতি বছরের ১৬মার্চ তিনমাসের জন্য উক্ত সিদ্ধান্তের কার্যক্রম স্থগিত করেন।

ঠিকাদার মঞ্জুরুল হক (সুজন) বলেন, ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকন এই কাজটি নিজে লোকজন দিয়ে করাবেন বলে আমার কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছেন। এ বাবদ তিনি আমাকে এক লাখ টাকা্ও দিয়েছেন। ৯ টি বীর নিবাস নির্মাণ কাজ সময়মতো শেষ না করায় আমি লজ্জিত। এ অবস্থায় আমার প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে।

ধর্মপাশা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মধ্যনগরের পিআইও আবদুল মোত্তালেব সরকার বলেন, এই নয়টি বীর নিবাসের মধ্যে ছয়টি বীর নিবাসের ৯০ভাগ কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি তিনটির ৪০ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। যেইটুকু কাজ হয়েছে আমরা সেই টুকুর বিল দিয়েছি।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকন বলেন, বীর নিবাস নির্মাণ কাজে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এলাকার মানুষজনদের কাছে আমার সুনাম নষ্ট করার জন্য একটি মহল আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ রটাচেছ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শীতেষ চন্দ্র সরকার বলেন, ঠিকাদার উচ্চ আদালতে রিট করে স্থগিতাদেশের যে সময়সীমা এনেছিলেন তার মেয়াদ বেশ আগেই শেষ হয়ে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী, এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেটিই বহাল থাকার কথা। স্মারকলিপি পেয়েছি। বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।