কলা চাষে সফল কেরানীগঞ্জের তাহের আলী

প্রকাশিত: ৭:১৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৫, ২০২০

নিউজ ডেস্কঃ ছেলেরা দেশ বিদেশে প্রতিষ্ঠিত, একমাত্র মেয়েও সুখে আছেন, নিজে বহুদিন ছিলেন প্রবাসে। এই বয়সে যখন তার অবসরে যাওয়ার কথা সে বয়েসে তিনি কলা বাগান করে এলাকায় হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন। চারদিকে তার কলা বাগান নিয়ে চলে আলোচনা। তার বাগান দেখে আশেপাশের মানুষ ঝুকছে কলা চাষের দিকে। প্রায় প্রতিদিন অনেক লোকজন আসে বাগান দেখতে ও তথ্য নিতে। বলছিলাম কেরানীগঞ্জ উপজেলার রোহিতপুর ইউনিয়নের নতুন সোনাকান্দা গ্রামের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ তাহের আলী মাদবরের কথা।কলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং পুষ্টিকর ফল, যা সারা বছরই পাওয়া যায়। প্রাচীন সাহিত্যে কলাকে কদলী বলা হতো। কলায় রয়েছে আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ। কলাতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকে। একটি বড় মাপের কলা খেলে ১০০ ক্যালরির বেশি শক্তি পাওয়া যায়।এছাড়াও কলাতে রয়েছে হজমযোগ্য শর্করা, এর আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন উত্‍পাদনে সাহায্য করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ নিশ্চিত করতে কলার জুড়ি নেই। একটি কলায় প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকে। আর মানবদেহে প্রতিদিন ১৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়ামের যোগান দেয়া গেলেই স্ট্রোকের হাত থেকে বছরে বেঁচে যেতে পারে ১০ লক্ষ।

বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফল কলা সাধারণত উষ্ণ জলবায়ু সম্পন্ন দেশসমূহে কলা ভাল জন্মায়। বাংলাদেশের নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোর, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর প্রভৃতি এলাকায় ব্যাপকভাবে কলার চাষ হয়ে আসছে। এর বাইরেও দেশের সব জায়গায়ই কম বেশি কলা চাষ হয়।রাজধানী ঢাকার পাশে নরসিংদী তে ব্যাপক কলা চাষ হলেও এর আশেপাশে তেমন কলার চাষ দেখা যায় না। তবে গত দুই তিন বছর যাবত দেখা যাচ্ছে কলার আবাদ শুরু হয়েছে ঢাকা শরের উপকন্ঠে কেরানীগঞ্জ ও তার আশপাশের এলাকায়।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কেরানীগঞ্জের রোহিতপুরের বিসিক শিল্পনগরী এলাকার নতুন সোনাকান্দা, লাখিরচর, মুগারচর, সোনাকান্দা, রহম আলীর চর ও তার আশপাশের এলাকায় কলার চাষ শুরু হয়েছে। দিন দিন বাড়ছে এর পরিধি।নতুন সোনাকান্দা গ্রামের কলা চাষি তাহের আলী মাদবর জানান, তার হাত ধরেই এই এলাকায় বানিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে কলা চাষ। দুই বছর আগে সখের বসে টাংগাইলের মধুপুর থেকে ১৪শ পিছ চাড়া এনে শুরু করেন কলা চাষ। এক একর জায়গায় প্রায় ১১শ কলা গাছা রোপণ করেন সৌখিন কলা চাষি তাহের আলী। এক একর জমিতে কলার চাড়া রোপণ করতে সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ২ থেকে আড়াই লাক্ষ টাকা।

চারা লাগানোর ১০ মাস থেকেই শুরু হয় কলা বিক্রি। মাটি শক্তিশালী ও নতুন হওয়ায় বেশ বড় বড় ছড়া হয় গাছ গুলোতে। আর এলাকায় তেমন কলা বাগান না থাকায় স্থানীয় বাজারেই খুব সহজে ভালো দামে বিক্রি করা যায় কলা গুলো। এক একটি ছড়া চার’শ থেকে পাঁচ’শ টাকায় বিক্রি করেন তাহের আলী।তিনি জানান, প্রথম ফলনেই তার মূলধন চলে আসে। এই পর্যন্ত তিনি দুই বছরে তিন ফলনে প্রায় ৬ লক্ষ টাকার কলা ও চাড়া বিক্রি করেছেন। ফের শুরু হয়েছে বিক্রি। আশা করছি এবারও দুই আড়াই লক্ষ টাকা বিক্রি হবে। তার দেখা দেখি এলাকার শিক্ষক যুবক আতাউর রহমান ও হাজী শাহজাহানরাও সফল কলা চাষে। এছাড়া এলাকার প্রায় প্রতিটি খালি জায়গা ও বাড়ির আঙিনায় শোভা পাচ্ছে কলা গাছ।কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল আমীন বলেন, কেরানীগঞ্জ কলা চাষের জন্য উপযোগী স্থান। এখানকার জায়গাগুলো উচু ও ধোঁয়াশা হওয়ায় কলার ভালো সম্ভাবনা দেখছেন এই কর্মকর্তা।কলা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল সারা বছরই দেশের প্রায় সব অঞ্চলের উঁচু জমিতেই এর চাষ করা যায়।