উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্ধ কোটি টাকার মাছ লুটের অভিযোগ

প্রকাশিত: ১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার সমর্থন করার জেরে মৎস্য চাষীদের অর্ধকোটি টাকার মাছ লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দীনের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ ইউনিয়নের সোনার চর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ৩ নম্বর সদস্য মো. সবুজ খলিফা। সে সময় সমিতির আরও একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে সবুজ খলিফা বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে তারা প্রান্তিক পর্যায়ের ২১ জন জেলে সরকারের সকল নিয়ম কানুন মেনে “সোনার চর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি” গঠন করে সমাজভিত্তিক মৎস্য চাষ শুরু করেন। ২০১১ সালে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বদ্ধ জলমহাল ইজারার নোটিশ হলে সমিতির সভাপতি নূর আলম ফরাজীর নামে চর মোন্তাজ ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের কাসেম খা’র ডোস নামে বদ্ধ একটি জলমহাল ইজারা নিয়ে সেখানে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন। ওই জলমহালে তারা মাছের পাশাপশি শাক-সবজি উৎপাদন, গরু, ছাগল ও মহিষ পালন শুরু করেন।

প্রায় ১৫টি পরিবারের অর্ধ শতাধিক সদস্য দিন-রাত পরিশ্রম করে মৎস্য খামারটিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। ২০১১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতি তিন বছর পর পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইজারা নবায়ন করে এ কার্যক্রম চলমান রাখেন তারা। তিনি বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ইজারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নবায়ন দেয়া হয়নি। শুধু এ জলমহালটি নয় জেলার কোনো জলমহালেই ইজারা নবায়ন করেনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। ইজারা নবায়ন না হওয়ায় সোনার চর মৎস্যজীবী সমিতির পক্ষ থেকে ইজারা নবায়নের জন্য জেলা প্রশসকের কাছে আবেদন করা হয়।

সবুজ খলিফা বুলেন, তারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি মৎস্যজীবী লীগের ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক। নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি নেতা ডা. জহির উদ্দীন আমিসহ সমিতির অনেকের উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। জলমহালের ইজারা নবায়ন হয়নি এমন সংবাদ পেয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দীন এবং চরমোন্তাজ ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বেল্লাল খান মাছ চাষ করতে হলে সমিতির কাছে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করেন। যদি দাবিকৃত টাকা না দেয়া হয় তাহলে মাছ চাষ করতে পারবে না বলে হুমকী প্রদান করেন।

তিনি বলেন, তাদের টাকা না দেয়ায় গত ০৭ জুন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিজে বেল্লাল খানসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জলমহালে হামলা চালিয়ে তাদের চাষকৃত ৩০ লক্ষ টাকার মাছসহ প্রায় অর্ধ কোটি টাকার সামগ্রী লুট করে নিয়ে যান। তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর তাণ্ডবে মৎস্যজীবী পরিবারগুলো এলাকা ছেড়ে গলাচিপা ও পটুয়াখালীতে আশ্রয় নেয়। ঘের লুটের বিষয় নিয়ে রাঙ্গাবালী থানায় গেলে কোনো মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে সবুজ খলিফা বাদি হয়ে পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলা গ্রহণ করে তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রনজিত কুমার বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কিছু ভিডিও এবং ছবি তিনি পেয়েছেন। সুষ্ঠু তদন্তের জন্য যা যা করণীয় তা করা হবে।

অভিযুক্ত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ গুজন ছড়াচ্ছে। স্থানীয়দের দাবির মুখে একটি খালে বাঁধ কেটে দিয়েছি মাত্র।

সাংবাদিকদের কাছে ঘের লুটের ভিডিও এবং ছবি রয়েছে- এ বিষয়ে তার বক্তব্য চাইলে তিনি তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

তার সঙ্গে ওই সময় ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ কেউ ছিল না কেনো জানতে চাইলে তার উত্তর এড়িয়ে যান তিনি। তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান চাইলে এটা করতে পারে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, জলমহাল সরকারের ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি। সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রশাসকের পক্ষে এটির দেখভাল করে রাজস্ব বিভাগ। জলমহালে কি হবে না হবে এটি একান্তই রাজস্ব বিভাগের বিষয়। এখানে উপজেলা পরিষদের কোনো কাজ নেই। যদি কোনো বাঁধ অপসারণ করতে হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রয়েছেন তিনি করবেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের কাজ এটা নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাঙ্গাবালীর ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা দরকার।