নাজিরপুরে বাগানে বাগানে ঝুলছে লাল টসটসে লিচু

প্রকাশিত: ১২:৪৬ পূর্বাহ্ণ, মে ২০, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : গ্রামের নাম নাজিরপুর। বাগানে বাগানে ঝুলছে লাল টসটসে রসালো বাহারী সব লিচু। প্রতিটি গাছের থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা লিচু দেখতে আসছে লিচু প্রেমী দর্শক ও ক্রেতারা।

উপজেলা জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় লিচুর বাগান। তার অধিকাংশ বাগানই রয়েছে ওই নাজিরপুর গ্রামে। যেদিকেই চোখ যায় শুধু লাল সবুজ রঙের সমাহার। এমন মন মাতানো দৃশ্য চোখে পড়বে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার এই গ্রামে।

কিন্তু এবছর এই চিত্রটা ভিন্ন, প্রচন্ড তাপদাহ এবং প্রাকৃতিক কারনে অধিকাংশ বাগানের লিচু ফেটে যাচ্ছে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই বাগান থেকে কাঁচা ফাটা লিচু পেড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এই এলাকার লিচু চাষীরা। দামও পাচ্ছেন খুব কম।

আগাম জাতের মোজাফফর লিচুর এই অবস্থায় দিশেহারা গুরুদাসপুরের লিচু চাষিরা। তবে আবহাওয়া অনুকুলে আসলে নমলা জাতের চায়না ও বোম্বে লিচুতে স্বপ্ন দেখছেন ক্ষতি পুষিয়ে নেবার।গুরুদাসপুর কৃষি অফিস সুত্রে জানাযায়, গুরুদাসপুরে ৫০০ হেক্টর জমির মধ্যে শুধু নাজিরপুরেই ৪৭০ হেক্টর লিচুর আবাদ হয়।এখানে প্রায় ৫৭০টির অধিক বাগান রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই মোজাফফর জাতের লিচু। শুধু মাত্র ২০ থেকে ২৫ হেক্টর জমিতে চায়না-৩ এবং বোম্বে লিচু রয়েছে। এবছর লিচুর বাজার মুল্য অনুসারে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলার সব চেয়ে বড় লিচুর আড়ত নাজিরপুর গ্রামের কানু মোলার বটতলা। এই লিচুর আড়ত থেকে প্রতি মৌসুমে সরকার রাজস্ব পান ৫লাখ ৩০হাজার টাকা।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বাগান ও আড়তে গিয়ে দেখা যায়,সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত লিচু ভাঙ্গার কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকসহ পরিবারের সদস্যরা। সেগুলো নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় আড়তে। লিচুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে স্থায়ী ও অস্থায়ী সব আড়ত। ভোর থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত চলে লিচু পারা ও বাছাইয়ের কাজ তার পর দুপুর থেকে শুরু হয় বেচো-কেনা চলে সন্ধা পর্যন্ত। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা, মহাজন, পাইকার ও ফড়িয়াদের কেনাকাটায় মুখরিত থাকে আড়তগুলো।এছাড়াও জমি থেকে পাইকারী ও ক্ষুদ্র মৌসুমিফল ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে লিচু সংগ্রহ করছেন নগদ টাকায়। কেউবা আবার অগ্রিম টাকাতেও কিনে রেখেছেন বাগান।

গুরুদাসপুরে বেড়গঙ্গারামপুর কানু মোল্লার বটতলায় বসে নাটোরের সবচেয়ে বড়লিচুর মোকাম। ওইখানে ২০ থেকে ২৫টি ফল বিক্রির আড়ত রয়েছে।

এছাড়াও মোল্লাবাজার, বিয়াঘাট,সুজার মোড়,মশিন্দসহ বেশকয়েকটি স্থানে চলছে পুরোদমে খুচরা ও পাইকারি লিচু বেচাকেনা।এছাড়া ফড়িয়া ও মহাজনরা লিচু ক্রয় করে প্রতিদিন নিয়ে যাচ্ছেন দেশের নানাপ্রান্তে।

নাজিরপুরের বেড়গঙ্গারামপুর গ্রামের লিচু চাষী হযরত আলী বলেন, এবছর আমার ৫টি লিচুর বাগানে প্রায় শতাধিক গাছ ছিলো অধিকাংশই মোজাফফর জাতের লিচু ছিলো সামান্য পরিমান চায়না ও বোম্বাই লিচু ছিলো। খরার কারনে কিছু লিচু নষ্ট হয়েছে। তবে নমলা লিচুগুলো ভালো হয়েছে।সেই সাথে দাম টাও ভালো পচ্ছি। যে কারনে খরচা বাদে কিছু হলেও লাভ হবে।

বেড়ঙ্গারামপুর কানু মোল্লার বাজার আড়ত সমিতিরসভাপতি সাখাওয়াত হোসেন মোল্লা জানান, প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫টি ট্রাক বোঝাই ঝুড়িভর্তি লিচু যাচ্ছে দেশের ঢাকা,চট্রগ্রমসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে। প্রতি ছোট ঝুড়িতে এক হাজার,মাঝারীতে দুই ও বড়গুলোতে তিন হাজার লিচু থাকে। প্রতি হাজার লিচু আকার অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে ১৬শ থেকে ২৭শ টাকায়। এবছর পাঁচ লাখ ৩২ হাজার টাকায় বাজার ইজারা নিয়েছেন। বেচাকেনা সর্বোচ্চ ১৫ দিন চলতে পর্যন্ত চলতে পারে।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, মুলত লিচুর আবাদ গুরুদাসপুরেই বেশি হয়। গুরুদাসপুরের কৃষকদের মাঝে লিচুর আবাদে আগ্রহ বাড়ছে। এবছর বৈরি আবহাওয়ার কারনে লিচু চাষিরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

তবে ভালো দাম পাওয়ায় ক্ষতি পুশিয়ে নিতে পারবেন বলে তিনি মনে করছেন।

এখানে চায়না,বোম্বাই জাতের লিচু কম চাষ হয়।মোজাফ্ফর জাতের লিচুর চাষই বেশি হয়। সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ না দিলে চাষিরা আরো ক্ষতিগ্রস্থ হতো।