বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে: সিইসি

প্রকাশিত: ৫:৩৮ অপরাহ্ণ, মে ১০, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে শুধু আমরা নই, সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। আমাদের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা, ইউকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান কথা বলছে এবং ইউনাইটেড নেশনস থেকেও কথা বলা হচ্ছে। কাজেই গাজীপুরের যে নির্বাচনটা হবে এটার গুরুত্ব আমাদের কাছে অত্যাধিক।

বুধবার দুপুরে গাজীপুর শহরের আহসান উল্লাহ মাস্টার অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এসব কথা বলেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের তুলে ধরা অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শত-সহস্র সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।’

আসন্ন এই সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা, নির্বাচন কমিশনের কাছে সেটি জানতে চান জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি।

এসময় ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান অতীতের নির্বাচনের উদাহরণ ও দেশের প্রধান সংকট নির্বাচন উল্লেখ করে এই সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ব্যর্থ হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিবেন কিনা তা জানতে চান।

তিনি বলেন, মানুষ এখন ভোট দিতে পারে না, বিগত দিনেও দিতে পারে নাই। আমরা মনে করছি বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিগত দুটি নির্বাচন কমিশন থেকে কিছুটা হলেও ব্যক্তিত্ববান। অতএব তাদের কাছ থেকে আমরা সুষ্ঠু ভোট প্রত্যাশা করছি। আরেকটি বিষয় হল, যদি সুষ্ঠু ভোট করতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ব্যার্থ হয়, তাহলে তারা কি করবেন এটা আমরা পরিষ্কার জানতে চাই। আমি বলতে চাই, যেহেতু জনগণের মাঝে শংকা আছে যে সুষ্ঠু ভোট হবে কি হবে না, অতএব এই ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জনগণকে আশ্বস্ত করা উচিত, এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার থেকে আমরা এই ঘোষণা চাই—-যদি আমরা গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হই, তাহলে আমরা পদত্যাগ করবো।

গাজী আতাউর রহমানের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগের প্রশ্নের জবাবে পরবর্তীতে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, আপনারা রংপুরের নির্বাচন দেখেছেন যে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বিঘœ হওয়ায় আমরা দুই ঘন্টা, তিন ঘন্টা দেখেই আমরা নির্বাচনটি বাতিল করে দিয়েছিলাম। গাজীপুরের ক্ষেত্রে যদি একাধিকবার নির্বাচন বাতিল করতে হয়, একাধিকবার নির্বাচন বাতিল করা হবে, পুনরায় নির্বাচন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সকলের দায়িত্ব রয়েছে। সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, নির্বাচন, রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা আছেন, সবাই মিলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। কেননা এই নির্বাচনের দিকে শুধু দেশের সবাই তাকিয়ে নেই, সারাবিশ্ব, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো,বিদেশি সংস্থাগুলো এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

হাবিবুল আউয়াল বলেন, কতগুলো সমস্যা শ্বাশত, যেমন ভোটে কালো টাকা ছড়ানো। এ ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার্থমূলক বা নিজের স্বার্থে যেটা করণীয় সেই পদক্ষেপগুলো আপনাদেরকে নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে শত-সহস্র সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।’

মাঠে যখন খেলা হবে দুই পক্ষকেই খেলতে হবে। কেউ যদি কালো টাকা বিতরণ করে থাকে, আরেকজনকে এই কালো টাকা বিতরণ প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে, যতদূর সম্ভব। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কিংবা পুলিশ গিয়ে রাতারাতি সেটা করতে পারবে? অনেক ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নাও হতে পারে, বলেন সিইসি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘এই কালো সংস্কৃতি থেকে আমাদের ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় এখনো অনেক অপসংস্কৃতি-কালো সংস্কৃতি রয়ে গেছে।

সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যা কিছু করণীয়, যতটুকু আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে থাকবে তা করা হবে। আমাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব থাকবে না, আমাদের চেষ্টার কোনো অভাব থাকবে না। আমরা পুরোপুরি সেই চেষ্টাটা করব।’

আমরা এককভাবে তেমন কিছু করতে পারব না। যদি আমাদের সহযোগী প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন তাদের দায়িত্ব শক্তভাবে এবং পেশাগতভাবে ডিসচার্জ করে না থাকে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, এটা যেহেতু মেট্রোপলিটন এরিয়া, এখানে কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের গুরুত্ব জেলা পুলিশের চেয়ে অধিক। বেশ কিছু ম্যাজিস্ট্রিয়াল পাওয়ার পুলিশ কমিশনার ও মহানগর পুলিশ কর্মকর্তাদের দেওয়া আছে, অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারা তা প্রয়োগ করবেন।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। আমরা যখন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করি, আমরা যখন দেখি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আমাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। আমরা কিন্তু তাদের মুখ চেপে ধরতে পারছি না। কারণ পৃথিবীটা এখন উন্মুক্ত।

গাজীপুরের যে নির্বাচনটা হবে এটার গুরুত্ব আমাদের কাছে অত্যাধিক। কারণ আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, এর আগে এত বড় পরিসরে একটি নির্বাচন জাতীয়ভাবে অনেক গুরুত্ব বহন করবে বলে আমরা মনে করি, বলেন সিইসি। মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার (ঢাকা) মো. সাবিরুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম।